Prothomalo:
2025-12-13@13:16:33 GMT

নতুন জামায় ঈদ

Published: 29th, May 2025 GMT

ঈদের সকাল মানেই হাসি-আনন্দে ভরা এক রঙিন ছবি। মসজিদের পথে পুরুষদের সাদা জামা, নারীদের ফুলের মতো রঙিন পোশাক আর শিশুদের নতুন জামায় উচ্ছ্বাস—এই দৃশ্য যেন চিরকালের উৎসবের। অনেক পুরোনো না হলেও ঈদের পোশাকের এই গল্প আজকের নয়, এর শিকড় ইসলামের ১৪ শতাব্দীর ইতিহাসে। কীভাবে পোশাক বদলেছে? কীভাবে ঐতিহ্য আর আধুনিকতা একসঙ্গে হেঁটেছে? আর আজকের অর্থনৈতিক সংকটে কীভাবে আমরা ঈদের আনন্দ ধরে রাখছি? এই গল্প আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি আর অদম্য উৎসবমুখরতার।

পোশাকের প্রাচীন যাত্রা

মানুষের ইতিহাসে পোশাকের গল্প প্রায় তিন লাখ বছরের পুরোনো। প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার বছর আগে মরক্কোর তামারা শহরের একটি গুহায় প্রাচীন মানুষ পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক তৈরি করত, যা ঠান্ডা থেকে তাদের রক্ষা করত। আই সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, গুহায় পাওয়া পশুর হাড়ে কাটার দাগ ছিল, যা আধুনিক চামড়া ছাড়ানোর কৌশলের সঙ্গে মিলে যায়। তখন পোশাক ছিল বেঁচে থাকার উপায়; কিন্তু সময়ের সঙ্গে এটি উৎসবের প্রতীক হয়ে ওঠে।

ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে পাওয়া ‘আশিকা আইন সাখরি’ নামের প্রায় ৯ হাজার বছরের প্রাচীন একটি মূর্তি দেখায়, প্রাচীন মানুষ উৎসবের জন্য বিশেষ পোশাক পরত। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের তথ্যানুসারে, এই মূর্তিতে প্রেমিক-প্রেমিকা চামড়ার তৈরি অলংকৃত পোশাকে সজ্জিত। প্রাচীন মিসরের মধ্য রাজ্যের (মিডল কিংডম) সময়ে (খ্রিষ্টপূর্ব ২০৫৫-১৬৫০) ‘হেব-সেদ’ উৎসবে রাজা আমুনের কাছ থেকে যৌবনের আশীর্বাদ নিতেন। রানি নেফারতিতি সাদা প্রশস্ত হাতার পোশাক পরতেন, যা তৎকালীন নারীদের সাধারণ পোশাক থেকে আলাদা ছিল। ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি এনসাইক্লোপিডিয়ায় এ তথ্য পাওয়া যায়।

ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে পাওয়া ‘আশিকা আইন সাখরি’ নামের প্রায় ৯ হাজার বছরের প্রাচীন একটি মূর্তি দেখায়, প্রাচীন মানুষ উৎসবের জন্য বিশেষ পোশাক পরত।আরও পড়ুনজান্নাত লাভের পথ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দিলেন রাসুল (সা.

)১৮ এপ্রিল ২০২৪

ইসলামে পোশাকের নতুন রূপ

ইসলামের আগমন পোশাকের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করল। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমরা তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য বাড়ায়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৬)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা সুন্দর পোশাক পরো এবং চেহারা সুন্দর করো। কেননা, আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্য পছন্দ করেন’ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৩১)। এই শিক্ষা পোশাককে শুধু কার্যকর নয়, সৌন্দর্য ও শালীনতার প্রতীক বানিয়েছে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে পোশাক ছিল সাধারণ। ঈদ ও জুমার নামাজে মুসলমানরা তাদের সেরা পোশাক পরতেন। ইসলাম যখন মিসর, সিরিয়া ও ইরানে ছড়িয়ে পড়ল, তখন স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব পোশাককে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। অ্যারাব ড্রেস বইয়ে বলা হয়েছে, মিসর থেকে আসত ‘কিবাতি’ নামে উৎকৃষ্ট কাপড়, যা কাবার কিসওয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।

উমাইয়া ও ফাতেমি যুগের ঐশ্বর্য

উমাইয়া যুগে পোশাক বিলাসবহুল হয়ে ওঠে। তারিখুল আযইয়া গ্রন্থে বলা হয়, তারা রোমান স্টাইলের পোশাক পরলেও পাগড়ি ও তলোয়ার ধরে রাখত। তাদের পোশাকে ছিল রঙিন সূচিকর্ম। ফাতেমি যুগে এই বিলাসিতা চরমে পৌঁছায়। খলিফা মুয়িজ লি-দিনিল্লাহ ‘দারুল কিসওয়া’ নামে একটি কারখানা তৈরি করেন, যেখানে শাসকদের জন্য সোনা ও রুপার সুতা দিয়ে পোশাক তৈরি হতো। এই পোশাকগুলোতে ১২টি অংশ থাকত এবং সাধারণ কর্মচারীরাও এগুলো পেতেন।

ঈদুল ফিতরে খলিফারা সোনার সুতার পোশাক ‘বাদনা’ ও রত্নখচিত পাগড়ি পরতেন। ঈদুল আজহায় লাল পোশাক পরা হতো। কারণ, এটি কোরবানির সঙ্গে যুক্ত। ফাতেমি খলিফারা ঈদে জনগণের মধ্যে পোশাক বিতরণ করতেন, যার কারণে ঈদুল ফিতর ‘ঈদুল হুল্লা’ নামে পরিচিত ছিল।

খলিফা মুয়িজ লি-দিনিল্লাহ ‘দারুল কিসওয়া’ নামে একটি কারখানা তৈরি করেন, যেখানে শাসকদের জন্য সোনা ও রুপার সুতা দিয়ে পোশাক তৈরি হতো।আরও পড়ুনমানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ১৩ মে ২০২৫

মামলুক যুগে ফ্যাশনের উত্থান

মামলুক যুগে ঈদের পোশাক আরও বৈচিত্র্যময় হয়। ইতিহাসবিদ মকরিজি তার আল মুজতামাউল মিসরি ফি আসরি সালাতিনিল মামলুক গ্রন্থে লিখেছেন, সাধারণ মানুষ ঈদের আগে রাত জেগে পোশাক সেলাই করতেন। এই যুগে ফ্যাশনের ধারণা এল। উচ্চবিত্ত নারীদের বিলাসবহুল পোশাক সাধারণ নারীরা অনুকরণ করতেন। সরকার কখনো অতিরিক্ত লম্বা হাতার পোশাক নিষিদ্ধ করলেও নতুন ফ্যাশন ছড়িয়ে পড়ত।

আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ

উসমানীয় যুগে পোশাকের ধরন খুব বেশি বদলায়নি। পুরুষরা কাফতান আর নারীরা ‘ইয়েলিক’ নামের জ্যাকেট পরতেন। শিল্পবিপ্লবের পর পোশাক তৈরি সহজ ও সস্তা হলো। ২০ শতকে পশ্চিমা ফ্যাশনের প্রভাব এলেও ঈদে ঐতিহ্যবাহী পোশাক জনপ্রিয় রইল। বাংলাদেশের গ্রামে এখনো নারীরা রঙিন শাড়ি বা সালোয়ার–কামিজ পরেন; আর পুরুষরা পাঞ্জাবি বা পাজামায় সেজে ওঠেন।

আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ঈদের পোশাক আমাদের ইতিহাস ও বিশ্বাসের প্রতীক। ইসলামের শুরু থেকে আজ অবধি, পোশাক বদলেছে; কিন্তু এর পেছনের আবেগ একই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন।

কিন্তু আজকের অর্থনৈতিক সংকট ঈদের আনন্দে ছায়া ফেলছে। নতুন পোশাক কেনা অনেক পরিবারের জন্য কঠিন। এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত পোশাকের বাজার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ড. মুহাম্মদ আহমদ ইবরাহিম তাতুরুল মালাবিস ফিল মুজতামায়ির মিসরি গ্রন্থে দেখিয়েছেন, ফাতেমি যুগের ‘মুস্তানসিরিয়া সংকটে’ও এমন বাজার ছিল, যেখানে ব্যবহৃত পোশাক বিক্রি করা হতো। বাংলাদেশে ঢাকার গাউছিয়া বা চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত পোশাক পাওয়া যায়, যা ঈদের আনন্দ ধরে রাখতে নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সহায়ক হয়েছে।

ঈদের পোশাক আমাদের ইতিহাস ও বিশ্বাসের প্রতীক। ইসলামের শুরু থেকে আজ অবধি, পোশাক বদলেছে; কিন্তু এর পেছনের আবেগ একই—নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন। অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ ঈদের হাসি ধরে রেখেছেন। নতুন হোক বা পুরোনো, ঈদের পোশাক আমাদের শিকড়ের কথা মনে করায় এবং ভবিষ্যতের জন্য আশা জাগায়।

আলজাজিরা ডটনেট অবলম্বনে

আরও পড়ুনঈদুল আজহা ও হজ যখন প্রতিবাদের ক্ষেত্র১২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র প শ ক প শ ক পরত প শ ক পর ইসল ম র উৎসব র আম দ র স ন দর র জন য আনন দ পরত ন

এছাড়াও পড়ুন:

পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাবির জাতীয় বিতর্ক উৎসব 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে‘চির উন্নত মম শির’ স্লোগানকে সামনে রেখে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন (জেইউডিও)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জেইউডিও জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০২৫। গত ২৭ নভেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসবে সারা দেশের অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিতার্কিকরা অংশ নেন। উৎসবের সমাপনী দিনে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চূড়ান্ত পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজকরা জানান, যুক্তিবাদী ও মননশীল মানুষ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবারের উৎসবটি তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২৭ নভেম্বর ১৪তম আন্তঃকলেজ, ২৮ নভেম্বর ২০তম আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১ ডিসেম্বর ১৪তম আন্তঃস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

আরো পড়ুন:

জাবিতে একাডেমিক নিপীড়ন প্রতিরোধে নতুন প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু

জাবির ৪৫তম ব্যাচের রাজা আকাশ, রানি ফারিন

প্রতিযোগিতায় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রানার আপ হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)।

আন্তঃকলেজ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এবং রানার আপ হয়েছে সেন্ট জোসেফ কলেজ। পাশাপাশি আন্তঃস্কুল পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতেছে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এবং রানার আপ হয়েছে সেন্ট গ্রেগরী স্কুল।

জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০২৫-এর স্কুল পর্যায়ের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন জান্নাতুন্নেছা বিনতে জামান এমিলি, কলেজ পর্যায়ে আল লুবান এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাদমান কৌশিক। উৎসবের মূল আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেইউডিও’র সভাপতি মির্জা সাকি।

ঢাকা/হাবীব/জান্নাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জেদ্দায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকা জিতল রোহিঙ্গাদের গল্প নিয়ে নির্মিত সেই সিনেমা
  • পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাবির জাতীয় বিতর্ক উৎসব 
  • গুলশানে বসেছে গ্রামের পৌষ উৎসব
  • নিজেদের ভাষা বাঁচানোর লড়াই করা ম্রো শিশুরা ঢাকায় আসছে
  • বেরোবিতে বিআরইউডিএফের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক উৎসব
  • মেসির দেখা পেতে কলকাতায় আসছেন শাহরুখ
  • ৪৪ নং সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন
  • বিজয় দিবসে উপলক্ষে তিন দিনের নাট্যোৎসব আয়োজন করছে ডাকসু