হাদিসে আছে, মসজিদে কুবায় দুই রাকাত নামাজ পড়লে একটি ওমরাহ হজের সমান সওয়াব পাওয়া যায় (তিরিমিজি, হাদিস: ৩২৪)। এই মসজিদে এক ধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্য কোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।
মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত কুবা মসজিদের দূরত্ব মসজিদে নববি থেকে পাঁচ কিলোমিটার। কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।
মসজিদে নববির অদূরে বেলাল মসজিদের কাছে নতুন করে করা হয়েছে কুবা স্কয়ার। ৪৫ মিনিট হেঁটে সরাসরি কুবা মসজিদে যাওয়া যায়। যারা হেঁটে যাবেন না, তারা ব্যাটারিচালিত গাড়িতে করে পৌঁছাতে পারেন। খরচ হবে ১০ রিয়াল।
মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী (সা.

) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবাপল্লিতে মসজিদটি নির্মাণ করেন (সুরা তওবা, আয়াত: ১০৮)। এই মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) অংশগ্রহণ করেন।
কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল হজরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন এবং তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেন।
মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) তাঁর খেলাফতকালে মসজিদে কুবা সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তাঁর ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসক মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন।
মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। চারটি উঁচু মিনার, ছাদে একটি বড় গম্বুজ ও পাঁচটি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। মূল মসজিদ ছাড়া এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ ও চার কোনায় চারটি উঁচু মিনার। মসজিদের চারদিকে সবুজ পাম গাছের বলয় এটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।
মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন। মসজিদে নারী-পুরুষের নামাজের জায়গা ও প্রবেশপথ আলাদা। অজুর জায়গাও আলাদা। সম্পূর্ণ শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হজ মসজ দ র গম ব জ ণ কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

টুকিটাকি দরকারি পরামর্শ

ছয়বার আজান
মক্কায় আপনি ছয়টি আজান শুনতে পাবেন। প্রথম আজানটি আসলে তাহাজ্জুদের; তবে তাহাজ্জুদের নামাজে কোনো জামাত হয় না।
সঙ্গে ছাতা রাখুন
মক্কার তাপমাত্রা সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। তাই দিনের বেলায় সব সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন।
মিনা ও আরাফাতে মোবাইল ফোন 
তুলনামূলকভাবে অনেক মানুষ মিনা ও আরাফাতে অবস্থান করেন বলে হজের সময় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায় না। 
সিমকার্ড 
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিমকার্ড কিনে নিলেই ভালো। আর হোটেলে ওয়াই-ফাই থাকে, সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, সৌদি আরবে বেশির ভাগ সামাজিক যোগাযোগের অ্যাপ, যেমন হোয়াটসঅ্যাপ ও ভাইবারের ভিডিও কল কাজ করে না। 
কেনাকাটা 
মক্কা-মদিনায় অনেক বাংলাদেশি কাজ করেন, তাই ভাষাগত সমস্যা তেমন হওয়ার কথা নয়। কেনাকাটার সময় দরদাম করে কেনা ভালো।
দমে শোকর বা কোরবানি
কোরবানি বা দম দেওয়ার জন্য ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সৌদি সরকারের স্বীকৃত ব্যবস্থা আছে। মসজিদের পাশের বুথ থেকে ৭২০ সৌদি রিয়ালে কুপন কেনা যাবে। এতে সময় বাঁচে এবং নিরাপদও। এর বাইরে দেওয়া হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
খাবার 
মক্কা-মদিনায় প্রচুর বাংলাদেশি হোটেল আছে। মক্কার হোটেলগুলোর নাম ঢাকা, এশিয়া, চট্টগ্রাম, জমজম ইত্যাদি। এসব হোটেলে ভাত, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল— সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। হোটেল থেকে পার্সেলে খাবার কিনে আনাও যায়।
প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম 
সাধারণত ১ ভরি (১১.৬৬ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৮০০ রিয়াল, খেজুর কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১০০ রিয়াল, জায়নামাজ প্রতিটি ৫ থেকে ২০০ রিয়াল, প্রতিটি টুপি ১ থেকে ১০০ রিয়াল ও তসবিহ ১ থেকে ১০০ রিয়াল। (* ১ রিয়াল = ৩২.৪৬ টাকা। পরিবর্তনশীল।)
জানাজার নামাজ
মক্কায় প্রায় প্রতিটি জামাতের নামাজের পরেই কারও না কারও জানাজা হয়। এগুলো অবশ্যই আদায় করুন।
মদিনায় যাওয়া
মদিনায় মসজিদে নববিতে অবশ্যই নামাজ আদায় করবেন, প্রতি ওয়াক্ত জামাতের সঙ্গে। রিয়াজুল জান্নাতে ঢোকার জন্য আগেভাগেই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। এ ব্যাপারে আপনার এজেন্সির সহায়তা নিন।

 

মক্কার কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান
জাবালে নুর
মক্কায় কাবা শরিফের কাছেই জাবালে নুর বা হেরা পর্বত। এ পর্বতে ওঠানামা বেশ কঠিন। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিয়মিত এ পর্বতে ওঠানামা করতেন।
জাবালে রহমত
আরাফাতে রয়েছে জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাবালে রহমতের কাছে দাঁড়িয়ে বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
নামিরাহ মসজিদ
হজের দিন আরাফাতে নামিরাহ মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। মসজিদটিতে ছয়টি মিনার, তিনটি গম্বুজ ও ১০টি প্রধান প্রবেশপথ রয়েছে।
জান্নাতুল মা’আলা 
জান্নাতুল মা’আলা মসজিদুল হারামের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি মক্কার বিখ্যাত কবরস্থান। এখানে রয়েছে বিবি খাদিজা (রা.)-এর কবর।
মসজিদে জিন
জান্নাতুল মা’আলা কবরস্থানের কাছে মসজিদে জিন। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, জিনরা এখানে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে একাধিকবার এসেছেন।
মকা জাদুঘর
মক্কা উন্মুল জুদ এলাকায় কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা। তার পাশে দুই মসজিদে ব্যবহৃত পুরোনো জিনিসপত্র দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। 
 

হজযাত্রীর রোজনামচা
হজযাত্রীরা ৪০ থেকে ৫০ দিন সৌদি আরবে অবস্থান করেন। এর মধ্যে জিলহজ মাসের ৭ থেকে ১২ তারিখ হজের আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ থাকে। আর আছে মদিনায় মসজিদে নববিতে আট দিন ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। বাকি দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগি আর স্বাভাবিক জীবনযাপনে কাটে হজ পালনকারীদের। 
হজ পালন করতে গিয়ে মক্কা-মদিনায় সাধ্যমতো ইবাদত করা ভালো। তাই একজন হজযাত্রীর নিজস্ব রোজনামচা বা রুটিন থাকা দরকার। সবচেয়ে বড় কথা– স্থান, কাল, পাত্রভেদে সুবিধামতো আমলগুলো করার চেষ্টা করবেন। সব নামাজ মক্কায় থাকলে মসজিদুল হারামে আর মদিনায় অবস্থান করলে মসজিদে নববিতে জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করা। 
ভোররাত : তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়। মক্কা-মদিনায় জামাতে ফজরের নামাজ আদায় করা। তাওয়াফ করা, জমজম পানি পান, কোরআন তিলাওয়াত করা।
সকাল : জমজমের পানি পান, সকালের নাশতা খাওয়া, ঐতিহাসিক স্থানে বেড়ানো, ব্যক্তিগত কাজ বা বিশ্রাম।
দুপুর : জামাতে জোহরের নামাজ আদায়। জমজমের পানি পান, দুপুরের খাবার খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া।
বিকেল : জমজমের পানি পান, মক্কা-মদিনায় জামাতে আসরের নামাজ আদায়।
সন্ধ্যা : জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায় করা। তাওয়াফ করা, জমজমের পানি পান, কোরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহর জিকির করা।
রাত : মক্কা-মদিনায় জামাতে এশার নামাজ আদায়। তাওয়াফ করা। জমজমের পানি পান, নফল নামাজ আদায়, বিতরের নামাজ আদায় করা। রাতের খাবার খাওয়া। ঘুমানোর প্রস্তুতি। আল্লাহর জিকির করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রিয় মদিনা, মসজিদে নববি এবং অন্যান্য
  • টুকিটাকি দরকারি পরামর্শ
  • ৭ জুন কোরবানির ঈদ
  • ঈদুল আজহা ক‌বে, জানা যা‌বে সন্ধ‌্যায়
  • মানব পাচারে জড়িত অভিযোগে ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৩