বছরের পর বছর ধরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। কুমিল্লা শহরতলির ধর্মপুরে কলেজের অনার্স/ডিগ্রি শাখার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এমন দুর্ভোগে থাকলেও সেটি সমাধানে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই একটু ভারী বৃষ্টিতেই কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই শুরু হয়েছে দুর্ভোগ।
আজ শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। কলেজের অনার্স/ডিগ্রি শাখা কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা পরীক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন জলাবদ্ধতার কারণে। এই কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা প্রায় ৩ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ১ হাজার জনকে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে পানির মধ্যে টুলে বসেই। শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, তিন দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় কলেজ ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখার কলা ভবন, দর্শন ভবন ও বিজ্ঞান ভবন-২-এর নিচতলার মেঝে পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব ভবনের নিচতলায় যেসব পরীক্ষার্থীর আসন পড়েছে, তাঁরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকটি স্থানে হাঁটুপানি মাড়িয়ে পরীক্ষার্থীদের ঢুকতে হচ্ছে পরীক্ষাকক্ষে। কক্ষে প্রবেশের পর কেউ পা পানির মধ্যে রেখে, আবার কেউ জুতা খুলে পা টুলে তুলে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষকেরাও পানির মধ্যে হেঁটে পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্ব পালন করছেন।
নজরুল ইসলাম এক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হয়েছে বন্যার মধ্যে ভেসে পরীক্ষা দিয়েছি। এমন পরিবেশে পরীক্ষা দিলে পরীক্ষা বেশি ভালো হয় না। পানি নোংরা, বারবার পা চুলকাচ্ছিল। অনেক কষ্টে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় পার করেছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক লাকী আক্তার বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ কুমিল্লার সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরেই এই কলেজে এমন সমস্যা রয়েছে। তবে সেটির স্থায়ী সমাধানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে এমন দুর্ভোগে প্রতিবছরই পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, আশপাশের সব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান কলেজের ক্যাম্পাস থেকে উঁচু। এ কারণে সব পানি এসে জমে কলেজ ক্যাম্পাসে। প্রতি বর্ষাতেই দেখা দেয় এমন দুর্ভোগ।
জলাবদ্ধতা এই কলেজের দীর্ঘদিনের সমস্যা জানিয়ে অন্তত তিনজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এমন দুর্ভোগ শুরু হয়। ভবনগুলোর নিচতলায় পানি জমে থাকে। বারবার বলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি। মেঝে উঁচু করার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। আজ পরীক্ষাকক্ষে নোংরা পানির মধ্যে হেঁটে শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না।
শুধু কলেজ ক্যাম্পাসই নয়, জলাবদ্ধতায় কলেজসংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলাম হলও পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার হলের নিচতলার প্রতিটি কক্ষে পানি ঢুকতে দেখা গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হলের নিচতলায় লাইব্রেরির সামনে মশারি টানিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
হলটির শিক্ষার্থীরা জানান, ভারী বৃষ্টিতে হলের নিচতলার ৩৩টি করে সব কটিতেই পানি প্রবেশ করে। তলিয়ে যায় রান্নার জায়গা, ডাইনিং রুম ও লাইব্রেরি। কয়েক বছর ধরে এমন সমস্যায় আবাসিক ছাত্রদের দিন কাটলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে শনিবার বিকেলে জানতে চাইলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার ভূঞা প্রথম আলোকে জানান, মূল সমস্যাটা হলো আশপাশের বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান কলেজ ক্যাম্পাস থেকে উঁচু। যে কারণে ভারী বৃষ্টি হলে সব পানি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। আশপাশের বিভিন্ন হাউজিং ও কুমিল্লা বিসিকের পানিও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সমস্যা বাড়াচ্ছে। কয়েকটি ভবনের মেঝে উঁচু করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ ক য ম প স পর ক ষ র থ র এমন দ র ভ গ ল র ন চতল প রব শ কল জ র সমস য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।
ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।
অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।
ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়