আগামী বাজেটে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কর কমাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে বাড়ছে সিগারেট কোম্পানির কর। এ ছাড়া করজাল সম্প্রসারণে বিদ্যমান ৪৫ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে ৩৯ সেবা গ্রহণে রিটার্ন দাখিল এবং ১২ ক্ষেত্রে টিআইএন সনদ দাখিল বাধ্যতামূলক করার বিধান করতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আয় ও বাস্তবতা বিবেচনায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়কর এবং উৎসে করে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ন্যূনতম করের কারণে কোনো করদাতাকে যদি অতিরিক্ত কর দিতে হয়, তা পরবর্তী বছরে সমন্বয় করার সুযোগ রাখতে যাচ্ছে। এ ছাড়া আগামী বছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির সব করদাতার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে।
অর্থ উপদেষ্টা যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন, তাতে করযোগ্য আয় রয়েছে এমন ব্যক্তির ন্যূনতম কর পাঁচ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত থাকছে। আবার নানা সেবা গ্রহণের জন্য যাদের রিটার্ন দাখিল করতে হবে, তাদের কোনো আয় না থাকলে বা থাকলেও যদি তা করমুক্ত আয়সীমার মধ্যে হয়, তাহলে তাদের এক হাজার টাকা করারোপের প্রস্তাব করতে পারেন।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানির আয়কর হার ৪৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ এবং টার্নওভার কর ২ শতাংশের পরিবর্তে দেড় শতাংশ হতে যাচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত নির্বিশেষে এ খাতের সব কোম্পানির করহার একই ছিল। এ ছাড়া কোনো মোবাইল অপারেটর আইপিও প্রক্রিয়ায় ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়লে ওই বছর করে ১০ শতাংশ রেয়াত পাবে।
জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সিগারেট, বিড়ি, জর্দা বিক্রয়মূল্যের ওপর ৩ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম করের বিধান যুক্ত হচ্ছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকের সিগারেট পেপার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ১৫০ থেকে ৩০০ শতাংশ হতে যাচ্ছে।
বর্তমানে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা হচ্ছে। এ ছাড়া গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার সঙ্গে জুলাইযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব আসতে পারে।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে সরকার করে বেশ কিছু ছাড় দিতে যাচ্ছে। করহার সাড়ে ২২ শতাংশ বহাল রাখার পাশাপাশি যেসব কোম্পানির আয়ের পুরো অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে গ্রহণ করবে, তাদের করহার আড়াই শতাংশ কমে ২০ শতাংশ হবে। বর্তমানে সব আয়ের সঙ্গে বছরে ৩৬ লাখ বেশি ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্ত রয়েছে। ব্যয় ও বিনিয়োগের শর্ত আগামী বাজেটে বাদ দেওয়া হচ্ছে। শেয়ার কেনাবেচায় উৎসে কর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ করা এবং শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর করহার সাড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মৌজা মূল্যের কারণে প্রকৃত বিক্রিমূল্য রিটার্নে উল্লেখ করতে না পারার কারণে অনেকের বৈধ আয়ও অপ্রদর্শিত আয়ে রূপান্তর হয়। তাদের সুবিধার জন্য জমি বা জমিসহ স্থাপনা হস্তান্তরকালে দলিলমূল্যের অতিরিক্ত কোনো অর্থ গৃহীত হলে ব্যাংক বিবরণীসহ দালিলিক প্রমাণ যাচাইযোগ্য হওয়া সাপেক্ষে অতিরিক্ত অর্থের ওপর মূলধনি আয়ের জন্য প্রযোজ্য হারে কর প্রদানের বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। জমি হস্তান্তর থেকে মূলধনি মুনাফায় করহার কমিয়ে এলাকাভেদে বিদ্যমান হার ১ থেকে ২ শতাংশ কমানো হচ্ছে।
উৎসে কর
ইন্টারনেট সেবা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার ১০ শতাংশের জায়গায় ৫ শতাংশ হচ্ছে। বন্ডের সুদে উৎসে কর কর্তনের হার ৫ শতাংশের বদলে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ এবং ভাড়া পরিশোধকালে ৫ শতাংশের বদলে ১০ শতাংশ হচ্ছে। ঠিকাদারি কাজ থেকে উৎসে কর কর্তনের সর্বোচ্চ হার বর্তমানের ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, যেমন– ধান, চাল, গম, আলু, পাট, কাঁচা চা পাতা ইত্যাদি সরবরাহের ক্ষেত্রে সরববরাহ মূল্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের হার ১ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং শিল্প উৎসাহিত করতে কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩ শতাংশের পরিবর্তে দেড় শতাংশ করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
৩০ নভেম্বরের মধ্যে করদাতাদের ই-রিটার্ন জমা দিতে বলেছে এনবিআর
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্টে সব করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে সব ব্যক্তি করদাতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে এনবিআর। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
গত বছর নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশে ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। তাতে ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেন।
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১২ লাখের মতো কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিবছর মাত্র ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দাখিল করেন।
এনবিআর জানায়, এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
চলতি ২০২৫-২৬ করবর্ষে যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন, তাঁরাও চাইলে অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। অন্যদিকে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করলে অতিরিক্ত বা যুগ্ম কর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এই সময়সীমা ৩১ অক্টোবর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করদাতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও অনলাইনে ই-রিটার্ন জমা দিতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তাঁদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ই-মেইল করলে ই-রিটার্নের নিবন্ধন লিংক পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারা ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করে সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। কোনো ধরনের কাগজপত্র বা দলিল আপলোড না করেই করদাতারা তাঁদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে ঝামেলাহীনভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। ই-রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে জমা স্লিপ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আয়কর সনদও প্রিন্ট করে নিতে পারছেন করদাতারা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-রিটার্ন জমা সহজ করার জন্য গত বছরের মতো এবারও করদাতাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দিতে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আবার ওয়েবসাইটে ই-রিটার্নসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালেও তার সমাধান পাচ্ছেন করদাতারা। কোনো করদাতা সশরীর নিজ নিজ কর অঞ্চলে গিয়েও ই-রিটার্ন জমা দেওয়াসংক্রান্ত সেবা নিতে পারছেন।