সাগর উত্তালে পাচঁ দিন বন্ধ থাকার পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। এতে ট্রলারে দ্বীপে লোকজন ফিরে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও যাচ্ছে। 

রোববার সকাল ১১টায় টেকনাফ পৌর সভাস্থল খায়ুকখালী খাল থেকে মো. আরাফাত মাঝির ট্রলার নিয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয়। তার আগে আরও দুটি ট্রলার সেন্টমার্টিন উদ্দেশে টেকনাফ ত্যাগ করে। তবে দ্বীপে আবার ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। এতে পানির উচ্চতাও বাড়ছে। 

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাঁচ দিন বন্ধের পর টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রীবাহী ট্রলার ও নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। দ্বীপে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি টেকনাফে আটকা পড়া দ্বীপের বাসিন্দা ফিরে যাচ্ছেন। ইতি মধ্য একটি ট্রলার দ্বীপে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, এবার দ্বীপে সংকট কমবে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হওয়ায় প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সার্বক্ষণিক আমরা যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া সেখানকার জনপ্রতিনিধিদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনাফ পৌরসভাস্থল খায়ুকখালী ঘাটে সেন্টমার্টিন বাসিন্দারা ভিড় করে আছেন। এতে পুরুষদের ট্রলারে অনুমতি মিললেও নারীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। এতে নারীরা অনেক বিপাকে পরেছেন। ফলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এসময় শিশু কোলে ঘাটে অপেক্ষমাণ সেন্টমার্টিনের মাঝার পাড়ার বাসিন্দা শামসুন নাহার বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে নয় দিন ধরে টেকনাফে আটকা পরেছি। আজকে ট্রলার চলাচল করলেও আমাদের (নারীদের) ট্রলারে যেতে অনুমতি দিচ্ছে না। আমার কাছে কোনো টাকা নেই, সন্তান নিয়ে খুব বিপদে আছি। দ্বীপের পরিবারের আরও সদস্য রয়েছে। তারাও অনেক সমস্যায় আছে খাবার নিয়ে। তাছাড়া এখানে আমাদের কেউ সাহায্য করছে না।

ঘাটে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে আসা দ্বীপের প্রায় ৩’শ মানুষ টেকনাফে আটকা পরেছেন। তারা খুব সমস্যায় আছেন। আজকে ট্রলার চলাচল শুরু হলেও নারীরা যেতে পারছেন না। তাছাড়া দ্বীপে বৈরী আবহাওয়ার কারণে যদি পর্যটকরা আটকা পরেন, তাদের আমরা (দ্বীপবাসী) সাহায্য করে থাকি। কিন্তু দ্বীপের লোকজন এখানে (টেকনাফে) আটকা পরলে কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসে না।

দ্বীপের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, দ্বীপে এক প্রকার হাহাকার চলছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দ্বীপবাসীর কষ্ট কেউ বুঝে না।

জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউপি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, সকালে দ্বীপে একটি ট্রলার পৌঁছেছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসহ কিছু মানুষ দ্বীপে পৌঁছেছে। আবার দ্বীপে ঝড়ো-বাতাস শুরু হয়েছে। এতে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। আসলে দ্বীপের মানুষ অনেক কষ্টে আছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট কন ফ স ন টম র ট ন পণ য স ন টম র ট ন র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ