তিনদিনের থেমে থেমে বৃষ্টিতে বান্দরবানের টংকাবতী ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়া এলাকার সুয়ালক-লামা সড়কের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে গত শুক্রবার (৩০ মে) থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই সড়ক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

রবিবার (১ জুন) সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, দুই বছর আগে কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি কার্পেটিং করা হয়। এরপর আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি।

তারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বৃষ্টিতে সড়কের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গত তিনদিন জুমচাষিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে পারেননি। 

আরো পড়ুন:

বিআরটিএ’র সব অফিস ধূমপানমুক্ত করার ঘোষণা

লংগদু-নানিয়ারচর সড়কের দাবিতে রাজপথে উপজেলাবাসী

পূর্ণবাসন ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা হেবল ত্রিপুরা বলেন, “দুই বছর আগে সড়কটি পাকাকরণ করা হলেও বর্তমানে তা বেহাল দশায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। এখনই সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।” 

অপর বাসিন্দা তঙ্গয়ে ম্রো এবং ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন জানান, প্রতি বছরই বর্ষায় সড়কের মাটি ধসে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে সড়কের দুই পাশে ধস নামায় গতকাল শুক্রবার থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তারা দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান।

টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মায়াং ম্রো প্রদীপ বলেন, “গত বছর থেকেই সড়কটি একটু একটু করে ধসে পড়েছে। এলজিইডিকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এবারের বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।”

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী পারভেজ সরোয়ার হোসেন বলেন, “হেডম্যান পাড়ায় সড়কের তিনটি জায়গায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিন পরিদর্শন করে বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রধান কার্যালয়ে বাজেট বরাদ্দের আবেদন করা হবে।”

তিনি আরো বলেন, “যদি বড় ধরনের বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাহলে সড়কের দুই পাশে রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।”

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান