তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়বে ক্রিকেট, আসছে আঞ্চলিক সংস্থাও
Published: 1st, June 2025 GMT
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন পথচলার নেতৃত্বে এসেই ভিন্ন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নবনির্বাচিত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। শুধু জাতীয় দলের পারফরম্যান্স নয়, ক্রিকেটের সার্বিক কাঠামো ঢেলে সাজানোর রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তিনি। তার কথায়, ‘‘আমরা ট্রিপল সেঞ্চুরি করব’’ — অর্থাৎ শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম এবং শতভাগ রিচ। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ক্রিকেট পৌঁছে দিতে চায় বোর্ড।
নিচে পাঠকদের জন্য তার মুখ থেকেই তুলে ধরা হলো পুরো পরিকল্পনার মূল কথাগুলো:
নতুন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেছেন, “আজকেও আমরা এনএসসিতে ছিলাম, এই বিষয়ে কথা বলেছি। গতকাল বোর্ড সভায় কিছু তালিকা তৈরি করেছি যে আমরা কী করতে চাই। সবাইকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তারা পরিকল্পনা নিয়ে আসবে।”
আরো পড়ুন:
২ সপ্তাহর জন্য মাঠের বাইরে শরিফুল
দুই পরিচালককে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে বিসিবি
“এখানে আমরা তিনটি কাজ করছি। আমরা বলছি যে ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ করব— শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম ও শতভাগ রিচ। বাংলাদেশে শতভাগ রিচ করব, আমাদের ট্রাস্ট থাকবে, আমাদের প্রোগ্রাম থাকবে।”
“এই ট্রিপল সেঞ্চুরিটা করার জন্য ক্রিকেট বোর্ড তিনটা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে— প্রথমত ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ আপগ্রেড করব। দ্বিতীয়ত, ‘সবার জন্য হাই পারফরম্যান্স’, শুধু ক্রিকেটার নয়, কর্মকর্তারাও হাই পারফর্মিং হবেন। তৃতীয়ত, সারা দেশব্যাপী কানেক্ট করব— ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না।”
“২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই আঞ্চলিক সংস্থার কাঠামো নিয়ে কথা হচ্ছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। যেভাবেই হোক, বুরোক্রেটিক হয়ে হোক, আমরা সেটা করব। এনএসসিও আমাদের সমর্থন দিচ্ছে। আইসিসির কাছেও এটা ছিল আমাদের প্রতিশ্রুতি— এখন এটা আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি।”
সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদকে সরিয়ে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে বুলবুলকে। সেক্ষেত্রে সামনে ভোটে নির্বাচিত সভাপতি আসতে হবে বোর্ডে। নির্বাচনের বিষয়ে বুলবুল বলেছেন, ‘‘উপদেষ্টা আজ আমাদের সাপোর্ট দিচ্ছিলেন। আমরা যে কাজগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। যেহেতু এখনও ৪৮ ঘন্টাও হয়নি। আমরা একটু জেনে এটা নিয়ে বলতে পারব।”
আঞ্চলিক সংস্থার অভাব ও ভবিষ্যৎ কাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অভিযোগ করি, যেমন ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল বানানো হয়। এটা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, গ্রামের একটা ছেলে যেন ক্রিকেট খেলে উপজেলা, জেলা, বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় দলে আসতে পারে। এটা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়, ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ।”
“রিজিওনগুলোকে আমরা বোর্ড থেকে কোনো অনুদান দেবো না। তাদের পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, কোচ, আম্পায়ার, সুযোগ-সুবিধা— সব মিলিয়ে মূল্যায়ন করে ফান্ডিং দেওয়া হবে। সেই ফান্ডিং মডেলটাও আমরা করে দিচ্ছি।”
প্রতিবন্ধকতা এলেও এগোবেন জানিয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘‘এটা আমাদের আবশ্যিক চাহিদা। পূরণের জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলেও নেবো। সবার সমর্থন নিয়েই করতে হবে। প্রতিবন্ধকতা এলে প্রথমে কেবল ক্রিকেট পৌঁছাব, পরে রিজিওনাল সেন্টার করব। এই মুহূর্তে লক্ষ্য হচ্ছে ‘কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৃণমূলে পৌঁছানো। পরিচালকদের মাধ্যমে, কিন্তু সোজা উপায়ে— বুরোক্রেটিক নয়।”
সাবেক ক্রিকেটারদের বোর্ডে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘নান্নু ভাই বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, আকরাম ভাই সেরা অধিনায়ক, লিপু ভাই, বাশার ভাই— সবাই কিংবদন্তি। তারা উইকেট, মাঠ, ড্রেসিং রুমের চরিত্র বোঝেন। এই ধরনের সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
“তবে এটা ঠিক, ভালো ক্রিকেটার সরাসরি ভালো কোচ বা প্রশাসক হয় না। সেই ব্যবস্থাগুলো করব। এমনকি আমি বিসিবিতে জয়েন করার আগেই মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক কোচ হতে চায়। এই ট্রেনিং-এডুকেশন প্রোগ্রামগুলো আমরা ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে চালু করব ইনশাআল্লাহ।”
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে তৃণমূল— বিসিবি সভাপতি বুলবুলের কথাগুলোতেই স্পষ্ট, এবার শুধু জাতীয় দলের জয়ে নয়, সমগ্র কাঠামোতেই পরিবর্তন আনতে চায় বোর্ড। পরিকল্পনা শুধু কথায় নয়, বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা, কাঠামো এবং প্রোগ্রামও হাতে নিয়েছে তারা। আর এই যাত্রার নাম “ট্রিপল সেঞ্চুরি”।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট র পল স ঞ চ র র জন য আম দ র শতভ গ
এছাড়াও পড়ুন:
৪৭ দিন ক্যাম্পে থেকে ১০–১২ দিন অনুশীলন, হতাশ ক্রিকেটাররা
টানা খেলার ধকল কাটাতে জাতীয় দল এখন বিশ্রামে। ‘এ’ দল ও হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের অনুশীলন হচ্ছে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে। তবে দুই দল মিলিয়ে প্রায় ৪০ জন ক্রিকেটারের অনুশীলনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া। বৃষ্টির কারণে অনুশীলন করতে না পারায় ক্রিকেটারদের মধ্যেও হতাশা কাজ করছে।
১০ জুন প্রধান কোচ ডেভিড হেম্পের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে ক্যাম্প শুরু করে এইচপি। চট্টগ্রাম থেকে একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ৪৭ দিনে সব মিলিয়ে মাত্র ১১ থেকে ১২ দিন মূল মাঠে অনুশীলন করা গেছে। অন্য সময় ভাগে ভাগে স্কিল অনুশীলন ও ফিটনেস নিয়ে কাজ হয়েছে ইনডোরে। তবে ইনডোরে টার্ফ বসানোর কাজ চলায় সেখানেও বিরতি দিতে হয়েছে।
আরও পড়ুনবিসিবির আমন্ত্রণে মাহমুদউল্লাহর ‘না’২৪ জুলাই ২০২৫হাই পারফরম্যান্স দলের ম্যানেজার জুনায়েদ চৌধুরীর দাবি অবশ্য ভিন্ন। তিনি বলেছেন, তাঁরা ২৪-২৫ দিন মূল মাঠে অনুশীলন করেছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচপির একাধিক ক্রিকেটার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে তাঁরা বেশির ভাগ দিনই অনুশীলন করতে পারেননি। জাতীয় দলের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে এটি তাঁদের জন্য বড় সুযোগ। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে অুশীলন করতে না পারায় তাঁদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় চট্টগ্রামে এইচপি দলকে ঠিকমতো অনুশীলন করতে দেয়নি