বিপর্যয়ের মুখে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। এর আগেই গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যান। ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা না থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থা মেরামত কাজও করা যাচ্ছে না। সারাদেশে প্রায় ৪৮টি সমিতিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন দেড় কোটি গ্রাহক। কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে হামলা চালিয়েছেন গ্রাহকরা।

দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগসহ নানা দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনে গত কয়েক দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও  সংগঠন সংহতি জানিয়েছে। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এখন আর পেছনে ফেরার উপায় নেই। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। কাজে ফিরব। 

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তারা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেমন– পল্লী বিদ্যুৎ ও সমিতি একীভূত করা। এখানে আইনি নানা বিষয় রয়েছে। শহীদ মিনারে বসে থাকলে তো চলবে না। আবার তারা আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়েছে। সরকার তো সমাবেশ দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।

বিদ্যুৎ নেই অনেক এলাকায়

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২, গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গণছুটির কারণে লাইনম্যানরা কাজ করছেন না। ফলে ঝড়বৃষ্টিতে যে সব স্থানে লাইন বন্ধ হয়েছে, তা আর চালু করা সম্ভব হবে না। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-২ সমিতির লাইনম্যানরা কাজ বন্ধ রাখেন। এতে কয়েকটি উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে পবিসের সব লাইনম্যান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরবর হ ব যবস থ কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনলাইনে ‘ভাগে’র কোরবানির

ভাগে কোরবানি দেওয়ার জন্য অংশীদার খুঁজছেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনোয়ার হোসেন। তাঁর একার পক্ষে একটা গরু কিনে কোরবানি দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু ‘মনমতো’ অংশীদারও খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

ধানমন্ডির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একজন অংশীদার পেলে তাঁর জন্য কোরবানি দেওয়া সহজ হতো, কিন্তু তিনি কাউকে পাচ্ছেন না।

আনোয়ার হোসেনের মতো ঢাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করতে যাওয়া অনেকেই এমন সংকটে পড়েছেন। তাঁরা মূলত জীবিকার তাগিদে বা পরিস্থিতির কারণে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারছেন না। ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। তাই এখানে কোরবানি দিতে চান তাঁরা।

এর বাইরে অনেকেরই হাটে গিয়ে পশু কেনা, কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত পশু রাখার ব্যবস্থা করা কঠিন অথবা এত ঝক্কি যাঁরা পোহাতে চান না, তাঁরাও অনলাইনে পশুর ফরমাশ দেওয়াসহ পুরো কোরবানির প্রক্রিয়া সারতে চান। তাঁদের জন্যও রয়েছে কোরবানির ‘অনলাইন সেবা’।

এ ক্ষেত্রে কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনের অংশীদার জোগাড় করে দেওয়ার কাজ করছে। গ্রাহকদের ঘরে বসে কোরবানি আদায়ের সুযোগ করে দিচ্ছে তারা।

এর বাইরে অনেকেরই হাটে গিয়ে পশু কেনা, কোরবানি না হওয়া পর্যন্ত পশু রাখার ব্যবস্থা করা কঠিন অথবা এত ঝক্কি যাঁরা পোহাতে চান না, তাঁরাও অনলাইনে পশুর ফরমাশ দেওয়াসহ পুরো কোরবানির প্রক্রিয়া সারতে চান। তাঁদের জন্যও রয়েছে কোরবানির ‘অনলাইন সেবা’।

সবারই হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা, নিজেদের উদ্যোগে কোরবানির দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁরা অনলাইনে তাদের পশু পছন্দ করে পেমেন্ট (অর্থ পরিশোধ) দেন। আমরা সব নিয়ম মেনে ফরমাশ অনুযায়ী কোরবানি করা পশুর মাংস গ্রাহকদের সরবরাহ করিবেঙ্গল মিটের সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড এক্সপোর্টের প্রধান এ কে এম ছায়াদুল হক ভূঁইয়া

বেঙ্গল মিট ১১ বছর ধরে অনলাইনে ফরমাশ নিয়ে গ্রাহকদের জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করে আসছে। এর বাইরে অনেক অনলাইনেও এবার ভাগে কোরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি দেশের অনেক খামারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে প্রচার চলছে।

গত বছর ৬৫টি গরু ‘ভাগে’ কোরবানির জন্য কেনেন গ্রাহকেরা। প্রতিটি গরুতে ৭ জন অংশীদার হিসাবে মোট ৪৫৫ জন কোরবানি দেন। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৮০টির মতো গরু ভাগে কোরবানির জন্য ফরমাশ পাবে বলে আশা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাগে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে জনপ্রিয়তা পায় অনলাইনে পশুর ফরমাশ দিয়ে ঘরে বসে কোরবানি দেওয়া। তখন সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয় ঘরে বসে কোরবানির পশু পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করার। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে এগিয়ে আসে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনলাইনে ‘ভাগে’ কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা।

বেঙ্গল মিট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভাগে কোরবানি দিলে ঈদের চতুর্থ দিন থেকে মাংস পাবেন গ্রাহকেরা। বেঙ্গল মিটের কাছাকাছি কোনো আউটলেট থেকে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন। গ্রাহকেরা হিমায়িত (ফ্রোজেন) মাংস পান।

এ ছাড়া পুরো পশু কিনে কোরবানি দিলে মাংস সরবরাহ করা শুরু হয় ঈদের পরদিন থেকে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে পশু জবাইয়ের পর মাংস সরবরাহ করতে হয় হিমায়িত (ফ্রোজেন) করে। তাই চাইলেও কোরবানির পরপরই সরবরাহ সম্ভব নয়।

বেঙ্গল মিটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর চার শতাধিক গরু কোরবানির জন্য অনলাইনে গ্রাহকদের কাছ থেকে ফরমাশ নেয় তারা। এর মধ্যে গত বছর ৬৫টি গরু ‘ভাগে’ কোরবানির জন্য কেনেন গ্রাহকেরা। প্রতিটি গরুতে ৭ জন অংশীদার হিসাবে মোট ৪৫৫ জন কোরবানি দেন। এবার প্রতিষ্ঠানটি ৮০টির মতো গরু ভাগে কোরবানির জন্য ফরমাশ পাবে বলে আশা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাগে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

বেঙ্গল মিটের সাপ্লাই চেইন অ্যান্ড এক্সপোর্টের প্রধান এ কে এম ছায়াদুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবারই হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা, নিজেদের উদ্যোগে কোরবানির দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁরা অনলাইনে তাদের পশু পছন্দ করে পেমেন্ট (অর্থ পরিশোধ) দেন। আমরা সব নিয়ম মেনে ফরমাশ অনুযায়ী কোরবানি করা পশুর মাংস গ্রাহকদের সরবরাহ করি।’

শুধু ঢাকা শহরের গ্রাহকেরা ভাগের কোরবানির জন্য ফরমাশ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন জানিয়ে সায়েদুল হক আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে তাঁরা কোরবানির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। গরু তাদের খামারে পালন করা। খাবারে সমস্যা নেই। রোগবালাই নেই। ফলে গ্রাহকেরাও থাকেন নিশ্চিন্ত।

বর্তমানে দেশে অনলাইনে ভাগে কোরবানি দেওয়া ছাড়াও অনলাইনে পশু কেনাসহ কসাই পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এ সুবিধা এখনো মূলত শহরকেন্দ্রিক।

আরও পড়ুনঅনলাইনে চলছে কোরবানির হাট০২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের, ফিরছেন কাজে
  • লিখিত আশ্বাসে ১৬ ‍দিন পর আন্দোলন স্থগিত করল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি
  • দাবি না মানলে ‘গণছুটি’তে যাওয়ার হুঁশিয়ারি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানিতে ৯০০ কোটি টাকার পশু বাণিজ্য
  • জনপ্রিয়তা বাড়ছে অনলাইনে ‘ভাগে’র কোরবানির
  • অনড় পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা, গ্রামে গ্রাহকের ভোগান্তি
  • ১৫ দিন ধরে শহীদ মিনারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা, পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে
  • পল্লী বিদ্যুতের সংকট সমাধানে সরকার ব্যর্থ: ক্যাব
  • পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার: ক্যাব