২০০৩ সালে বাগদাদে ১৩ বছর বয়সী হুসসাম এবং ১৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ মারা গিয়েছিল বিমান থেকে ফেলা ক্লাস্টার বোমায়। বোমাগুলো যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল।
আর ব্রিটিশ সরকারের সমর্থিত সামরিক অভিযানে সেগুলো ফেলা হয়েছিল। ইরাক যুদ্ধে হুসসাম ও মুহাম্মদের মতো প্রায় দুই লাখ সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছিল। ইরাক যুদ্ধের পর অনেক বছর ধরে সেই যুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের যত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সরকার তার সব কটি ঠেকাতে চেষ্টা করেছে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা থামানো সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালে চিলকট তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। আমি তখন লেবার পার্টির নেতা ছিলাম। রিপোর্টে ব্রিটিশ সরকারের ভেতরকার ভয়াবহ ভুলের প্রমাণ পাওয়া যায়। সে সময় আমি পার্লামেন্টে চিলকট তদন্তের প্রতিক্রিয়ায় বক্তব্য দিয়েছিলাম।

বক্তব্য শেষে আমি পাশের চার্চ হাউসে যাই। সেখানে আমরা যুদ্ধফেরত সেনা, ইরাকি নাগরিক এবং নিহত ব্রিটিশ সেনাদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমি সেখানে ইরাকে যুদ্ধ করার দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আজ ইতিহাস আবারও যেন ঘুরে এসেছে এবং লেবার সরকার আরেকটি ভয়াবহ ভুল করছে।

আরও পড়ুনইসরায়েল, গাজা এবং পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা০৪ মার্চ ২০২৪

২০ মাস ধরে চালানো ইসরায়েলি হামলায় গাজার নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। যারা বেঁচে আছে, তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আজীবন শারীরিক ও মানসিক ক্ষত বয়ে বেড়াবে। ইসরায়েল একা একাই সব করছে না। তারা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা পাচ্ছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর ব্রিটেনে সরকার বদলালেও ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ একই রকম আছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছিল, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির অনুমোদনের কিছুটা বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু তার কিছুদিন পরই, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে লেবার সরকার ইসরায়েলে যত অস্ত্র দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে, তা ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভ সরকার যতটা দিয়েছিল, তার চেয়েও বেশি।

আমরা অনেকবার বলেছি, ব্রিটেন এখনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে পাঠাচ্ছে—এটা খুবই দুঃখজনক। আমি অবাক হচ্ছি, সরকার নিজেই বলছে, অস্ত্র রপ্তানির ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও তারা ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে এই যন্ত্রাংশ পাঠানো চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যতিক্রম কি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যা ঠেকানোর দায়িত্ব থেকেও ছাড় পাচ্ছে?আরও পড়ুনইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে০৮ এপ্রিল ২০২৫

আমরা অনেকবার বলেছি, ব্রিটেন এখনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ইসরায়েলে পাঠাচ্ছে—এটা খুবই দুঃখজনক। আমি অবাক হচ্ছি, সরকার নিজেই বলছে, অস্ত্র রপ্তানির ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও তারা ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে এই যন্ত্রাংশ পাঠানো চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ব্যতিক্রম কি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যা ঠেকানোর দায়িত্ব থেকেও ছাড় পাচ্ছে? আমরা বারবার জানতে চেয়েছি, সাইপ্রাসে অবস্থিত ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভূমিকা কী ছিল? ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র পৌঁছানো এবং সামরিক গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে এই ঘাঁটিগুলোর কোনো ভূমিকা আছে কি?

২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কিয়ার স্টারমার যখন সাইপ্রাসের আরএএফ আকরোটিরি ঘাঁটি পরিদর্শনে যান, তখন তাঁকে ক্যামেরায় সেনাদের উদ্দেশে বলতে দেখা গেছে, ‘পুরো বিশ্ব তোমাদের ওপর নির্ভর করছে এবং আমাদের দেশের মানুষও তোমাদের ওপর নির্ভর করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেক কিছুই হয়, যা সব সময় প্রকাশ করা যায় না…আমরা সব সময় বলতে পারি না, এখানে কী হচ্ছে।’ তাহলে সরকার কি লুকাতে চায়?

আরও পড়ুনইসরায়েল এখনো বুঝতে পারছে না, তারা যুদ্ধে হেরে গেছে১৯ মে ২০২৫

আমাদের এসব প্রশ্নের জবাবে আমরা শুধু এড়িয়ে যাওয়া এবং নীরবতাই পেয়েছি। ফলে সরকারের দায়িত্ব পালনের বিষয়গুলো কীভাবে সম্পন্ন হচ্ছে, তা মানুষ জানতে পারছে না। অথচ গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি। ব্রিটিশ জনগণ জানার অধিকার রাখে যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা কতটুকু।

এ কারণেই আমি একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল (এমপিদের ব্যক্তিগত বিল) পেশ করতে যাচ্ছি। তাতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলায় যুক্তরাজ্যের ভূমিকা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ, সর্বজনীন ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হবে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার সত্যতা উদ্‌ঘাটন করা এই তদন্তের লক্ষ্য থাকবে।

এই তদন্তের মাধ্যমে জানতে হবে, ঠিক কী ধরনের অস্ত্র ইসরায়েলের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে; এর কোন কোন অস্ত্র ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছে; সরকার কী ধরনের আইনি পরামর্শ পেয়েছে; আরএএফ আকরোটিরি ঘাঁটি গাজায় অস্ত্র পাঠানোর রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কি না; যুদ্ধক্ষেত্রের কী কী ভিডিও ফুটেজ সরকারের কাছে আছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে কী ধরনের গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করা হয়েছে।

জেরেমি করবিন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য ও লেবার পার্টির সাবেক প্রধান

গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর জ য র ইসর য় ল র তদন ত র সরক র র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফয়েজ হামিদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ফয়েজ হামিদকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি সামরিক আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ফয়েজ হামিদ ২০২৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আইএসআইয়ের প্রধান ছিলেন। ওই সময় পাকিস্তানের সরকারপ্রধান ছিলেন ইমরান খান। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান এখন কারাগারে আছেন।

ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন ফয়েজ হামিদ। ইমরান খান তাঁকে আইএসআইয়ের প্রধান করেছিলেন। ২০২২ সালে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হলে নির্ধারিত সময়ের আগে অবসরে যান গোয়েন্দাপ্রধান ফয়েজ হামিদ।

পাকিস্তানের সামরিক প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধানের পর আইএসআইয়ের প্রধানকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটিতে এর আগে আইএসআইয়ের কোনো প্রধানকে কখনোই সামরিক আদালতে বিচার করা হয়নি।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে পাকিস্তানের সামরিক আইনের আওতায় বিচার কার্যক্রম চলেছে।

ফয়েজ হামিদের আইনজীবী মিয়া আলি আশফাক বলেন, বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকা তাঁর মক্কেল ‘এক হাজার শতাংশ’ নির্দোষ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তিনি।

আরও পড়ুনপাকিস্তানে প্রথমবারের মতো বিচারের মুখে সাবেক আইএসআই প্রধান১২ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যার সত্য উন্মোচনে ফরেনসিক বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছেন নিগার
  • ইসরায়েলের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ইউরোভিশনের ট্রফি ফেরত দিচ্ছেন সুইস সংগীতশিল্পী নেমো
  • ইসরায়েলের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় কেন বন্ধ রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • ব্রিটিশ রাজা চার্লস নিজের ক্যানসার চিকিৎসা নিয়ে ‘সুখবর’ শোনালেন
  • গ্রেপ্তার বমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধের অভিযোগ আনুন, না হয় মুক্তি দিন
  • আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফয়েজ হামিদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
  • ২ কোটি রুপি বেতন কমতে পারে রোহিত–কোহলির, ২ কোটি রুপি বাড়তে পারে গিলের