ঈদে, বিশেষত কোরবানির ঈদে জিবটাকে শাসন করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। কখনো ভুনা, কখনো ঝোল। কখনো ভাতে, কখনো রুটিতে, কখনো পোলাওয়ের সঙ্গে শুধু মাংস আর মাংস। ফ্রিজ খুললে মাংসের গন্ধ চিতার মতো লাফিয়ে পড়ে নাকের ওপর। দরজা খুললে পাশের বাসার জামদানি চোখে পড়ার আগে মাংসের গন্ধের আমদানি টের পাওয়া যায়। এ শুধু মাংসের দিন...

এ লগন ভক্ষণ করিবার...!

ঠিক এ রকম মাংসময় সময়ে ঠিক করলাম, ওজন কমাব।

ওজন আমার ঠিকই ছিল। ঠিক মানে বেশ ঠিক। ছিপছিপে শরীরটা কলেজ মাঠে ছেড়ে এসেছিলাম সত্যি, কোমরের আশপাশে বয়সের সঙ্গে একটু একটু চর্বির মৃদু আন্দোলন ছিল—সেও সত্যি; তাই বলে অতিকায় কিছু আমি কখনোই ছিলাম না। কিন্তু বছরখানেক আগে রিকশায় করে বাসায় ফিরতে ফিরতে হঠাৎই মনে হলো, নাহ্‌! কী যেন এক ঝামেলা হয়েছে!

ঝামেলাটা যে কী, তা প্রথম বলল রিকশাচালক—মামা, দশটা টেকা বাড়ায়া দেন!

আমি আকাশের দিকে তাকালাম। রোদ নেই। বৃষ্টি নেই। নিদেন মেঘও নেই। বললাম, কী জন্য বাড়িয়ে দেব? ঝড়বৃষ্টি তো নেই!

রিকশাচালক হেসে বলল, ‘আপনের শরীলটা দ্যাখছেন? ম্যালা ওজন!’

এরপর রিকশাচালককে টাকা বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। বাসায় ফিরেই দাঁড়ালাম আয়নার সামনে। ওখানে কে রে? এই শরীরই কি আমার!

 ‘মেদ ভুঁড়ি কী করি’র বিজ্ঞাপন শৈশব থেকে দেখে এসেছি। কোনো দিন ভাবিনি এই বিজ্ঞাপন আমার জীবনের ওপর আসর করবে। সারা দিন মাথার ভেতর ঘোরে—মেদ ভুঁড়ি, কী করি! মেদ ভুঁড়ি কী করি! মেদ ভুঁড়ি কী যে করি!

রুনাকে বললাম, ‘দেখো তো, আমাকে কি একটু মোটা মোটা লাগছে?’

রুনার মুখে কুলুপ। কথা কয় না। আমি বললাম, ‘কী হলো?’

রুনা বলল, ‘এসব নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলা ঠিক না! গতকালও যে বলছিলাম অতগুলো ভাত খেয়ো না! তখন তো আমার দিকে বিষচোখে তাকিয়েছিলে!’

 ‘আমি জানতে চেয়েছি, আমাকে কি মোটা দেখাচ্ছে!’

 ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না!’

 ‘আশ্চর্য! কেন?’

 ‘এ রকম কোনো সময় আমারও আসতে পারে। তখন যেন তুমিও কিছু না বলো!’

আরও পড়ুনটাকাতো মারিয়াছির সঙ্গে যেভাবে আমার পরিচয় হলো২৪ আগস্ট ২০২৩

আশ্চর্য জীবন! এ জীবন নিয়া কী করিব, সেটাও বুঝে আসে না! সোফায় বসলে মনে হয় সোফা ককিয়ে উঠল! খাটে বসলে খাট ক্যাঁচক্যাঁচ করে ওঠে! উপায়ন্তর না দেখে জুতা কিনলাম। রানিং কেডস! এক জোড়া চকচকে রানিং কেডস সব সময় চোখের সামনে রাখি। যাব, একদিন এই জুতা পরে দৌড়াতে যাব।

কিন্তু সেই দিনটা আর আসেই না। রুনা বলল, ‘ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখো। তাহলে ক্যালেন্ডার দেখে মোটিভেশন পাবা!’

আমার ক্যালেন্ডার দাগে দাগে ভরে উঠল। দৌড়াতে যাওয়া হলো না। একদিন জুতা পরে কাঁচাবাজার পর্যন্ত হেঁটে এলাম। ব্যস, ওইটুকুই।

মিজান বলল, ‘তুই সমুদ্র ভালোবাসিস, না পাহাড়?’

আমি বললাম, ‘ক্যান?’

 ‘আরে সাইকোলজিটা বুঝতে দে...সমুদ্র না পাহাড়?’

 ‘সমুদ্রই ভালো লাগে।’

 ‘এ জন্যই তো! এইটাই ঘটনা!’

 ‘কী ঘটনা?’

 ‘তুই তো দৌড়াতে পারবি না। রানিং তোর কাপ অব টি না। তুই জন্মাইছোস সাঁতারের জন্য। তোর ফিটনেস লুকিয়ে আছে পানির ভেতরে মামা!’

ঢাকায় সাঁতরানোর উপযুক্ত পানি পাওয়া মুশকিল আছে। আমি অনেক খুঁজে খুঁজে একটা সুইমিং পুল আবিষ্কার করলাম। সেখানকার সদস্য হয়ে গেলাম। সদস্য হতে বড় অঙ্কের টাকাও গেল। বলা যায় টাকাটা আক্ষরিক অর্থে পানিতেই গেল। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম পুলে। আমার এ দেহখানি তুলে ধরো তুলে ধরো...শরীর থেকে কমিয়ে ফেলতে হবে তাবৎ ওজন। না মেদ ভুঁড়ি থাকবে...না থাকবে জামা ফিট না হওয়া জীবন!

তিন দিন সাঁতরানোর পর চতুর্থ দিন শরীরের ব্যথায় বিছানা নিলাম। সে রাতেই এল তীব্র জ্বর। দেখলাম, আমি শূন্যে উঠে যাচ্ছি। কিন্তু ওজন বেশি হওয়ায় খুব একটা উঠতে পারছি না। সারা রাত কাটল আমার ঊর্ধ্বপতনে!

দৌড়, সাঁতার ফেল মারলে মিজানই এল পরামর্শ নিয়ে। বন্ধুর পরামর্শ বন্ধুদের সব সময় নিতে হয় না। কিন্তু আমি মিজানেরটা নিলাম। সে বলল, ‘নতুন একটা ফর্মুলা মার্কেটে এসেছে...সেটা এক মাস অ্যাপ্লাই করলেই তুই চিকনা হয়ে যাবি...’

মিজান সাদা পাতায় ছক কেটে খাওয়ার সিস্টেম করে দিল। সন্ধ্যায় খেতে হবে, তারপর আর কিছু খাওয়া যাবে না দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ১২টায় খেতে হবে একটু মুরগি...ইত্যাদি।

এ সিস্টেম চলতে থাকল দিনের পর দিন। না খেয়ে খেয়ে আমার মাথা সব সময় ঝিমঝিম করা শুরু করল। পাঁচ দিনের মাথায় মেজাজ চড়া শুরু করল। ধমক ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি না। একদিন ভরা মিটিংয়ে বসকে ধমক পর্যন্ত দিয়ে দিলাম। বস কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হীরক, আপনার মনে হয় ডায়েট চলছে। আপনি ঐচ্ছিক ছুটি নিয়ে বাসায় এক সপ্তাহ থাকেন। এরপর আসবেন।’

এক সপ্তাহ না, এর দুই দিন পর বাসা থেকে আমাকে বের করে দিল রুনা। বলল, ‘মোটা মানুষের সঙ্গে ঘর আমি করতে পারব, কিন্তু বদমেজাজির সঙ্গে পারব না।’

আমি গভীর রাতে বাসায় হাজির হলাম। হাতে এক পাউন্ডের কেক। রুনাকে বললাম, ‘দুজন মিলে পুরোটা শেষ করব। চলো খাই!’

রুনা কেক খেতে খেতে বলল, ‘দেখো তো, আমাকে কি মোটা মোটা লাগছে?’

প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও থমকে গেলাম। কেক এবং কথা, দুটোই গিলে ফেললাম
কপ করে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বলল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ। আরবি মাসের ১০ জিলহজ তারিখে এই ঈদ উদ্‌যাপিত হয়। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় দিনটি উদযাপন করবে। মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

ঈদুল আজহা মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এই ঈদ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে আসছে। সকালে মুসল্লিরা কাছাকাছি ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আজহার সঙ্গে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ পালন করেছেন।

স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী শুক্রবার সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজিরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বহু দেশ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছে।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা। তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন, তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে আজ দেশের প্রতিটি শহর, গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় পশু কোরবানির দৃশ্য দেখা যাবে। রাস্তাঘাটে দেখা যাবে ঈদ আনন্দে ভাসমান মানুষের মুখ। এদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।

এবার ঈদের ছুটি সরকারি কর্মীদের জন্য চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত— সব মিলিয়ে এবারের ঈদে মিলেছে ১০ দিনের ছুটি। প্রসঙ্গত, ঈদে শহর থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িতে গেছেন প্রিয়জনের সঙ্গে উৎসব উদযাপন করতে। ফলে রাজধানী এখন কিছুটা ফাঁকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ