Risingbd:
2025-12-13@13:14:45 GMT

অনিরাপদ খাদ্যে ভয়াবহ ঝুঁকি

Published: 7th, June 2025 GMT

অনিরাপদ খাদ্যে ভয়াবহ ঝুঁকি

শনিবার (৭ জুন) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস। ‘ফুড সেফটি: সায়েন্স ইন অ্যাকশন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দিবসটি  উদযাপিত হচ্ছে । নিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের বিষয় নয়, এটি বিজ্ঞানের প্রয়োগ, কার্যকর নীতিনির্ধারণ ও সামাজিক সচেতনতার সম্মিলিত অর্জন।

বাংলাদেশে এ দিবসটি এসেছে এক জটিল বাস্তবতায়। যেখানে অনিরাপদ খাদ্য হয়ে উঠেছে একটি ভয়াবহ জনস্বাস্থ্য সংকট।

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিনই
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস না থাকার পাশাপাশি বাজারে ভেজাল ও রাসায়নিক মিশ্রণের প্রসার জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা ও ক্যানসারের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিদিন বাড়ছে।

আরো পড়ুন:

গরুর মাংসের পুষ্টিগুণ

মাসিকে কম রক্তপাত হওয়া কি খারাপ

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ এখন এমন এক পুষ্টিজনিত সংকটে পড়েছে, যেখানে খাদ্যাভ্যাস-নির্ভর রোগই হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে এক কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে মারা যায়। অথচ এর বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য শুধু স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কার্যকর খাদ্যনীতি অনুসরণ করলেই।

আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনিরাপদ খাদ্যের কারণে প্রতিবছর ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়, যা স্বাস্থ্য সেবা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতার পতন থেকে আসে।

বাংলাদেশে এনসিডি স্টেপস জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, ৩৭ শতাংশ  মানুষ প্রতিদিন অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খান। ১৩ শতাংশ মানুষ নিয়মিত মাত্রাতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ ফাস্ট ফুড গ্রহণ করেন।এসব খাদ্যাভ্যাস হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে।

প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান)  নির্বাহী পরিচালক   এবি এম জুবায়ের বলেন, “শুধু সচেতনতা নয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, আঁশযুক্ত ও শাকসবজি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ, খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো এবং কঠোর আইন প্রয়োগ করাই পারে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ কমাতে।”

তিনি আরো বলেন, “খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন প্রতিটি স্তরে বিজ্ঞানভিত্তিক তদারকি প্রয়োজন। বাজারে অনিরাপদ খাদ্যের বিস্তার বন্ধ করতে হলে খাদ্য বিশ্লেষণ, ল্যাব পরীক্ষা, জীবাণু ও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে শুধু আইন নয়, প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য বিশ্লেষণ ও গবেষণা ল্যাবরেটরি সংরক্ষণ প্রযুক্তি। মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ও কেমিক্যাল টেস্টিং। প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের বৈজ্ঞানিক মানদণ্ড। ট্রেসেবিলিটি ও কুইক রেসপন্স সিস্টেম।

কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, বাজারে ফরমালিন, কার্বাইড, বিষাক্ত রং, নিষিদ্ধ কীটনাশক ও ভেজালের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার বন্ধ হয়নি।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এর মতো প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবায়নে এখনো স্পষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বহু দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে শুরু করতে হবে ঘর থেকেই। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত করা। অভিভাবক, হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক ও হকারদের প্রশিক্ষণ। গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার। এসবই এখন জরুরি হয়ে উঠেছে।

পুষ্টিবিদ ডা.

হুমায়রা খানম বলেন, “সুস্থ জাতি গড়তে হলে শুধু খাদ্যের প্রাপ্যতা নয়, তার মান নিশ্চিত করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।”

বাংলাদেশের অবস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয়
জাতিসংঘ ২০১৮ সালে ৭ জুনকে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস ঘোষণা করে। ২০১৯ সাল থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) হলেও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে সংকট রয়েছে।

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তঃদপ্তরীয় সমন্বয়, প্রযুক্তি হালনাগাদ ও মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া এ সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এখন আর কেবল স্বাস্থ্যগত প্রয়োজন নয়, এটি একটি অধিকার। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে অর্থনীতি, শিক্ষা, নীতি এবং সর্বোপরি নাগরিক সচেতনতা। খাদ্যে যা আছে, তা ই স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে এই উপলব্ধি থেকেই সরকার, গবেষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের একযোগে কাজ করতে হবে। তবেই গড়ে উঠবে একটি সুস্থ ও নিরাপদ বাংলাদেশ।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

১২ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি কেরানীগঞ্জে বহুতল ভবনের আগুন

ঢাকার কেরানীগঞ্জের আগানগরে জমেলা টাওয়ারে লাগা আগুন ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট। আগুন লাগা ভবনে আটকেপড়া ৪৫ জনকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস৷

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের ডাইরেক্টর (অপারেশন) তাইজুল ইসলাম। এর আগে, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ১২ তলা ওই ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে।

আরো পড়ুন:

কৃষিজমি ক্ষতির শঙ্কায় ভেকুসহ মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ

সুনামগঞ্জে আগুনে পুড়ল ৭ ঘর 

তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরে আরো ১০টি ইউনিট যুক্ত হয়। বর্তমানে ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে পড়া ৪৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘ভবনের ভেতরে বিপুল পরিমাণ দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে রবিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে অতিরিক্ত ইউনিট মোতায়েন করা হবে এবং আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।’’

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘এখনই সূত্রপাত বলা যাবে না, আগে আগুন নিয়ন্ত্রণ করব, তারপর সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।’’

ঢাকা/শিপন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ