কক্সবাজারে পর্যটকদের নতুন ঠিকানা সাম্পান রিসোর্ট
Published: 13th, June 2025 GMT
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে উখিয়ার সোনারপাড়া এলাকায় গেলে চোখে পড়ে রঙিন চারটি নৌকা। নৌকার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে টিনশেডের ঘর। ভেতরে বেড-বিছানা, ফ্যান, বাতিসহ রয়েছে প্রয়োজনীয় আসবাব। নৌকায় ওঠানামার জন্য লাগানো হয়েছে কাঠের সিঁড়িও। নৌকার এসব ঘরে বসে দেখা যায় সাগরের দৃশ্য, করা যায় রাত্রিযাপন। এই অবকাঠামোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নোঙর বিচ রিসোর্ট’। তবে সবার কাছে এটি পরিচিত হয়ে উঠেছে সাম্পান রিসোর্ট নামে। রিসোর্টটির নৌকাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে সাম্পান পট হাউস-১, ২, ৩ ও ৪। রিসোর্টে যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে ফুটবল-ভলিবল খেলা এবং সৈকত ভ্রমণের সুযোগ।
গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যক্তি মালিকানাধীন ১ একরের বেশি জমিতে তৈরি হয়েছে নোঙর বিচ রিসোর্ট। স্থানীয় সোনারপাড়ার দুই তরুণ মাসুদ পারভেজ ও সাজেদুল কবির এর উদ্যোক্তা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসায় নেমেছেন দুজন। সাজেদুল পড়েন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে কখন ক্যারিয়ার গঠন করব, এই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে এখন থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি আমরা দুজন। নিজেরা চিন্তাভাবনা করে নৌকার ওপর থাকার ঘর বানিয়ে ব্যতিক্রমী সাম্পান রিসোর্ট তৈরি করেছি। এই রিসোর্ট গড়ে তুলতে দেড় বছর সময় লেগেছে। ৮ জুন থেকে রিসোর্টটি চালু হয়েছে।’
নোঙর বিচ রিসোর্টে ঢুকতেই সামনে পড়ে কাঠের তৈরি একটি রেস্তোরাঁ। সেখানে চেয়ার-টেবিল সাজানো। কয়েকজন পর্যটক সেখানে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। রেস্তোরাঁর পেছনে খোলা মাঠ। মাঠের শেষ প্রান্তে পাশাপাশি দূরত্বে নৌকার ওপর নির্মাণ করা নীল রঙের ঘরগুলো। রিসোর্টের পরিচালক মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৮৪ কিলোমিটারের মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য কয়েকটি পাঁচ তারকাসহ ৪০-৪৫টি হোটেল-রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। কিন্তু নৌকার ওপর রিসোর্ট কোথাও নেই। ব্যতিক্রমী রিসোর্ট দেখে বহু পর্যটক গাড়ি থেকে নেমে নানা তথ্য জেনে নিচ্ছেন। রিসোর্টের মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারের ঐতিহ্য সাম্পানকে তুলে ধরছি।’ তিনি আরও বলেন, রিসোর্টে যাঁরা অতিথি হচ্ছেন, তাঁদের জন্য খোলা মাঠে তাঁবু টাঙিয়ে রাতযাপনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যাতে শিক্ষাসফর কিংবা গবেষণার জন্য আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কম খরচে থেকে-খেয়ে ভ্রমণ ও গবেষণার কাজ সুন্দরভাবে সামলাতে পারেন।
নৌকার ভেতরে রাতযাপনের কক্ষ। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যটকে মুখর চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার
এবার ঈদুল আজহায় দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি মিলেছে। সেই ছুটি উভভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র।
ঈদের ষষ্ঠ দিনে প্রকৃতি প্রেমিরা ভিড় করছেন সবুজ চা বাগান, জাতীয় উদ্যান লাউয়া ছড়া ও মাধবপুর লেকে।
স্থানীয় রিসোর্ট মালিকদের তথ্য মতে জানা গেছে, রিসোর্টের ৯০ ভাগ রুম ভাড়া হয়ে গেছে। তাই নতুন করে আসা কোন পর্যটক ভাড়া না পেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্থানে থাকতে পারছেন না।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মো. সামাদ বলেন, “এবারের ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি ঘুরতে বের হই। এবার পরিবারসহ শ্রীমঙ্গলে এসেছি। এখানকার চা-বাগানের সবুজ দৃশ্য, পাখির ডাক আর সবুজ বনের শীতল বাতাস মন ভরিয়ে দিচ্ছে।’’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা পর্যটক মৌমিতা বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ছুটি থাকায় পরিবারসহ এসেছি শ্রীমঙ্গলে। অনলাইনে দেখেছি, তাই সরাসরি শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে এলাম। তবে গরমের কারণে বাচ্চাদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।”
শ্রীমঙ্গল লেমন গার্ডেন রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক এল.এন.এম.কে.এস সুলতান বলেন, “অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি পর্যটক শ্রীমঙ্গলে এসেছেন। আমাদের এখানে রুম বুকিং ছাড়াও টিকেট ক্রয় করে পর্যটকরা প্রবেশ করতে পারেন।”
পরিবেশ কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা সাজু মারচিয়াং ও আহাদ মিয়া বলেন, “এখানে বন্যপ্রাণির দেখা পেতে পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন। শহরের লোকজন প্রাকৃতিক বনের গাছগাছালি ও মনোরম দৃশ্যাবলী উপভোগ করেন। বিশেষত ছুটির সময়ে পর্যটক, যানবাহনের হুড়োহুড়ি ও লোকে লোকারণ্য থাকায় বনে বিচরণকৃত বন্যপ্রাণির দেখা পাওয়া দায়। দলবদ্ধ মানুষের চিৎকার, যানবাহনের হর্ন- সব মিলিয়ে উদ্যানের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সুরক্ষা নিয়ে রীতিমতো উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।”
বনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, বনের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের ভিড় জমানো মোটেও ঠিক নয়। এসব কারণে বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র বাধাগ্রস্ত হবে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, “এ কয়েকদিনে প্রায় চার হাজার পর্যটক এসেছেন। ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময় বেশি থাকে। তবে বেশি পর্যটকের কারণে পরিবেশ কিছুটা বিঘ্ন হলেও এখানে গাইড রয়েছেন। পরিবেশের ক্ষতি যেন না হয় সেদিকে তাদেরকে খেয়াল রাখতে বলে দেওয়া হয়েছে।”
ঢাকা/আজিজ/এস