দেশে হঠাৎ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বোর্ডের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এ সময় আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা প্রায় আধা ঘণ্টা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়ক অবরোধ করে রাখেন। ফলে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য জরুরি সেবার গাড়িগুলো চলাচলের অনুমতি দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, করোনা সংক্রমণ আবারো ঊর্ধ্বমুখী। অনেক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্য ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তারা প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। এখন পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে।

আরো পড়ুন:

এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকবে মেডিকেল টিম

এইচএসসি পরীক্ষায় নকল ঠেকাতে ৩৩ নির্দেশনা

তারা করোনার পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রেখে একটি যৌক্তিক সময়সূচি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান। আন্দোলন চলাকালে সেখানে পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিআরটি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে শিক্ষার্থীদের ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়কালে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করা হয়, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে। এছাড়া আগামী ১৯ জুন একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা আছে। সেই সভায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এ আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ১৯ জুন তাদের দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলে তারা আন্দোলনে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার মতো অবস্থায় আসেনি। তারপরও বিভিন্ন বোর্ডেই শিক্ষার্থীরা এ দাবি নিয়ে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার তারিখ তো বোর্ড দেয় না। আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি, পরিস্থিতি যদি সে রকম হয় সরকার নিশ্চয় সেটা বিবেচনা করবে। এছাড়া তো আমাদের কিছু বলার নেই।’’
 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এইচএসস পর ক ষ র পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক