একই গ্রামে বাড়ি তিন তরুণের। তিনজনই ছিলেন বন্ধু। কাজও করতেন একই কারখানায়। আর একসঙ্গেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। তাঁদের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামটিতে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকায় আরশিনগর ফিউচার পার্ক বিনোদন কেন্দ্রের পেছনে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন ওই তিন তরুণ। তাঁদের বাড়ি উপজেলার মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন—দিদারুল আলমের ছেলে মো.

আরাফাত (১৮), আবু তাহেরের ছেলে মো. আনিস (১৮) ও জিয়াউর রহমানের ছেলে মো. রিয়াজ (১৮)। তাঁদের মধ্যে আনিস বাড়ির পাশের বিএসআরএম কারখানার গাড়ির চালক এবং অন্য দুজন চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।

মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকাটি ছোট ছোট টিলাবেষ্টিত। সেসব টিলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু শ্রমজীবী মানুষের বসতি। এ এলাকারই পাশাপাশি তিনটি বাড়ির বাসিন্দা আরাফাত, আনিস ও রিয়াজ। সবারই ঘর বেড়া আর টিনের ছাউনি দেওয়া।

আনিস বিয়ে করেছেন ২০ দিন আগে

গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরসরাইয়ের মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিনজনের বাড়িতেই শোকের মাতম চলছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মো. আনিস বিয়ে করেছেন মাত্র ২০ দিন আগে। আনিসের মৃত্যুর খবরে তাঁর ঘরে স্বজনেরা ছুটে এসেছেন। আহাজারি করতে করতে ঘরের ভেতর মূর্ছা গিয়ে পড়ে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। বেশ কিছু নারী ও শিশু আর্তনাদ করে চলেছে। আনিসের বাবা আবু তাহেরকে দেখা যায় ঘরের এক কোণে বসে আছেন। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল তাঁর।

ছেলে আমার নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে মাত্র ২০ দিন আগে। এর মধ্যেই তার বউটা বিধবা হলো। আমি মেয়েটাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব, আমার ছেলেটারেও তো আর পাব না।— আবু তাহের, নিহত মো. আনিসের বাবা

ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে মাত্র ২০ দিন আগে। এর মধ্যেই তার বউটা বিধবা হলো। আমি মেয়েটাকে কী বলে সান্ত্বনা দেব, আমার ছেলেটারেও তো আর পাব না।’

আরফাতের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তাঁর নানি বিবি আমেনা। জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার করে কেবল বলছেন, ‘আমার সোনার চানরে কোথায় নিলা আল্লাহ।’ স্বজনেরা জানান, শৈশবেই আরাফাত মাকে হারান। মায়ের মৃত্যুর পর নানি বিবি আমেনা কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছেন আরাফাতকে।

নিহত মো. রিয়াজ বাবা জিয়াউর রহমানের একমাত্র ছেলে। ছেলে চাকরি করে কিছুটা আয়রোজগার করায় বেশ সচ্ছলভাবে চলছিল সংসার। তবে গতকাল রাতের দুর্ঘটনা যেন সব এলোমেলো করে দিয়েছে। জিয়াউর রহমান আহাজারি করছিলেন, ‘আমার শান্ত ছেলেটারে কেন নিয়ে গেলা আল্লাহ।’

আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মো. আরাফাতের নানি বিবি আমেনা। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গতকাল রাতে তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ফ ত আহ জ র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী

চলতি মাসে নেপাল জুড়ে বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন কেপি শর্মা ওলি। ২০২৪ সালে শের বাহাদুর দেউবা সরকারের পতনের পর ফের ক্ষমতায় আসা ওলি এক বছরের মধ্যেই দেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সম্পদ অপব্যবহার ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে থাকে। তার সরকারের পতন ঘটে চলতি মাসে টানা কয়েক দিনের বিক্ষোভ থেকে, যেখানে নেতৃত্বে ছিল ‘জেন জি’ তরুণ প্রজন্ম। বর্তমানে ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে নেপাল। আর এই আবহে নিরাবতা ভাঙলেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) নেপালের সংবিধান দিবসে ফেসবুকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ওলি দেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। তিনি সংবিধানকে ‘নেপালি জনগণের নিজেদের জন্য লেখা একটি ভবিষ্যতের রেখা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি দাবি করেন, “জেন-জির শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলাকালীন অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। যেসব ষড়যন্ত্রকারীরা এতে অনুপ্রবেশ করেছিল, তারা সহিংসতা উস্কে দেয় এবং আমাদের তরুণদের হত্যা করে। সরকার বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দেয়নি। পুলিশের কাছে নেই- এমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা তদন্ত করা উচিত।” 

৮ সেপ্টেম্বরের ওই সহিংসতায় ১৯ জন নিহত হন। ওলি দাবি করেন, বিক্ষোভে গোপন ষড়যন্ত্রকারীরা অনুপ্রবেশ করে হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার ফলেই এতগুলো প্রাণহানি ঘটেছে। ওলি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী (পদ) থেকে আমার পদত্যাগের পর সিংহ দরবার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, নেপালের মানচিত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সংসদ, আদালত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলের অফিস, তাদের নেতা ও কর্মীদের বাড়িঘর, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছাই করে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ঘটনার পেছনের ষড়যন্ত্র নিয়ে আমি আজ বেশি কিছু বলব না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই নিজে নিজেই প্রকাশ পাবে। কিন্তু আমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমাদের জাতি কী গড়ে উঠছিল, নাকি ভেঙে ফেলা হচ্ছিল? এই ক্ষোভ কী কেবল একটি মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর বর্ণনা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল?” 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী জানান, “আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেরাই সত্য বুঝতে পারবে। আর যারা দেশ ছেড়ে যাওয়া তরুণদের অবজ্ঞা করে, সময় তাদের মনে করিয়ে দেবে যে, তাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। অবশেষে নতুন প্রজন্ম সবকিছুই বাস্তবে দেখতে পাবে।” 

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ওলি জনসাধারণকে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সংবিধান রক্ষার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমাদের, নেপালিদের সকল প্রজন্মকে, সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণ মোকাবিলা করতে এবং সংবিধান রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যদি সার্বভৌমত্ব আমাদের অস্তিত্ব হয়, তাহলে সংবিধান আমাদের স্বাধীনতার ঢাল।”

কাঠমাণ্ডু পোস্টের খবর অনুসারে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অলি সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় ছিলেন। ব্যারাকে ৯ দিন কাটানোর পর গত বৃহস্পতিবার তিনি একটি ব্যক্তিগত জায়গায় চলে গেছেন।

নেপালের সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ৯ দিন সামরিক সুরক্ষায় থাকার পর তার ব্যক্তিগত বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ