পুনে দুর্গে নামাজ আদায় করা নিয়ে ভারতে তোলপাড়
Published: 21st, October 2025 GMT
ভারতের পুনে শহরের ঐতিহাসিক দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়ার’ ভেতর খোলা মাঠে চাদর পেতে তিন-চারজন নারীর নামাজ আদায় করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিও ভারতের রাজনীতিতে নতুন করে ধর্মীয় বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে হিন্দুদের একটি দল যেখানে নামাজ আদায় করা হয়েছে, সেই স্থানে ‘গোমূত্র’ ছিটান। ‘গোমূত্র’ ছিটানোর ভিডিও চিত্রও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নামাজ আদায় করা স্থানটিতে ‘গোমূত্র’ ছিটানো হচ্ছে, সঙ্গে চলছে শিব বন্দনা।
পুনের ‘শনিবার ওয়াড়া’ মারাঠা সাম্রাজ্যের স্থাপনা। এটি পুনে দুর্গ নামেও পরিচিত। সেখানে নামাজ আদায় করার সমালোচনা করে মহারাষ্ট্র রাজ্যের মন্ত্রী নিতেশ রানে বলেন, ‘শনিবার ওয়াড়ার একটি ইতিহাস আছে। এটা সাহসিকতার প্রতীক। শনিবার ওয়াড়া হিন্দু সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠ। যদি হিন্দুরা “হাজি আলী”তে হনুমান চালিসা পাঠ করেন, তবে মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে কি না?’
নিতেশ রানে আরও বলেন, ‘মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করুন। যদি “হাজি আলী”তে হনুমান চালিসা আর আরতি করা হয়, তাঁদের আর অপমানবোধ করা উচিত হবে না।’
বিজেপি সংসদ সদস্যের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির মুখপাত্র রুপালি পাতিল থোম্বরে পুলিশের প্রতি ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।তবে বিজেপির সংসদ সদস্যের ওই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপির মুখপাত্র রুপালি পাতিল থোম্বরে পুলিশের প্রতি ওই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
থোম্বরে বলেন, ‘নিতেশ হিন্দু বনাম মুসলমান ইস্যু তুলছেন। অথচ পুনেতে দুই সম্প্রদায় শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করে।’
এদিকে এ ঘটনায় অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান বিজেপির বিরুদ্ধে ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুমতবাদ ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছেন।
ওয়ারিশ পাঠান বলেন, ‘তাঁরা শুধুই ঘৃণা ছড়াচ্ছে। যদি তিন-চারজন মুসলিম নারী জুমার দিন এক জায়গায় নামাজ আদায় করেন, তাতে কী এমন সমস্যা হয়? যখন হিন্দুরা ট্রেনে বা বিমানবন্দরে নিজেদের ধর্মীয় আচার পালন করেন, আমরা তো কখনো আপত্তি জানাই না।’
ওয়ারিশ পাঠান আরও বলেন, ‘এএসআই-সুরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। তিন মিনিটের নামাজ আপনাদের জন্য এত সমস্যার কারণ হলো। অথচ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা আছে। তাহলে আর কত ঘৃণা ছড়াবেন? আপনাদের মন পরিশুদ্ধ করা উচিত—সেই মন, যেখানে ঘৃণা বাসা বেঁধে আছে।’
তাঁরা শুধুই ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। যদি তিন-চারজন মুসলিম নারী জুমার দিন এক জায়গায় নামাজ আদায় করেন, তাতে কী এমন সমস্যা হয়? যখন হিন্দুরা ট্রেনে বা বিমানবন্দরে নিজেদের ধর্মীয় আচার পালন করেন, আমরা তো কখনো আপত্তি জানাই না।ওয়ারিশ পাঠান, অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের মুখপাত্রপুলিশ কী বলছেআর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে দুর্গের মাঠে নামাজ আদায় করা অজ্ঞাতপরিচয় নারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। দুর্গের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, ‘শনিবার ওয়াড়া’ এএসআই-সুরক্ষিত স্থাপনার ভেতর প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদের অভিযোগ যা–ই হোক, এএসআই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। এটি একটি এএসআই-সুরক্ষিত স্থাপনা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। এ পথে ঢুকলে ফেরার রাস্তা নেই। কাজেই আগেই সাবধান হতে হবে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের সন্তানদের সময় দিন। ব্যস্ততা থাকবে, কাজ থাকবে, কিন্তু সন্তানদের সময় দিন। সময় না দিলে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’
আজ রোববার দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষকদের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যে শিক্ষকেরা আমাদের পড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ডেডিকেশনের অভাব ছিল না। তাঁরা প্রচণ্ডভাবে ডেডিকেটেড ছিলেন ছাত্রদের প্রতি। খুবই যত্ন নিতেন আমাদের। তাঁদের তুলনায় আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের বেতন অনেক ভালো। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের যাঁরা পড়িয়েছেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, একজন শিক্ষকের বেতন ছিল ৩২ টাকা। আমার বাবা বেতন পেতেন ৫০০ টাকার বেশি। তাঁরাও কিন্তু প্রচণ্ড ডেডিকেশন নিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের (শিক্ষকদের) যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি জানি, শিক্ষকদের কত সমস্যা। এরপরও আপনাদের আন্তরিকতা ধরে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নেপাল থেকে মালয়েশিয়াতে একজন কর্মী যায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। আমাদের এখান থেকে যায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। একই কাজের জন্য একই বেতনে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি। বাঙালি আছে সব জায়গাতে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, সবচেয়ে কম বেতনে চাকরি করে বাঙালিরা। কারণ, প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষার অভাব। আমাদের যে ম্যানপাওয়ার এজেন্ট আছেন, তাঁরাও প্রতারিত করেন। এটা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা। এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি নাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। তোমাদের সামনে প্রচুর সুযোগ আছে। যে জাতি আগে লেখাপড়া শিখেছে, তারা আগে উঠতে পেরেছে। তোমরা লেখাপড়ার প্রতি মনযোগী হও। কারণ, আমাদের এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের কোনো শর্টকাট নেই, কাজেই আমাদের কঠিন পথে এগোতে হবে। আমাদের সময়ের তুলনায় তোমাদের সুযোগ অনেক বেশি। তোমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যোগ্যতা অর্জনের পথ একমাত্র লেখাপাড়া।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা জামান, মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ।