বহুদিন আগের কোনো এক আশ্বিনের শুক্লপক্ষের সপ্তমী কি দশমীর সাঁঝের পূর্বে ঝোড়ো পুবালি হাওয়া ভেঙে যেমন ঝিরি–বৃষ্টি হয়েছিল, অনুরূপ তার চার যুগ পরে অন্য এক সদ্য আশ্বিনের ষষ্ঠী কি অষ্টমীর সাঁঝের পূর্বে তেমনি পুবালি ঝোড়ো হাওয়ার ঝিরি-বৃষ্টির ঘটনা ছিল ওই দূর অতীতেরই পুনর্ঘটন; যেমন করে প্রথমবার বাড়ির পেছনের ছাপরা বারান্দার টংগে বসে দেখা ঝিলের কালচে জলে সেই বৃষ্টিতে একখানি বর্ণিল পানশির ছইয়ের মাচায় পালকি বসানো ও বাহারি তালি দেওয়া পালতোলা নৌকা দক্ষিণ থেকে উত্তরে যাত্রাকালে কলের গানে পানশির মাস্তুলে বাঁধা চোঙ্গায় বিচ্ছুরিত আব্বাসউদ্দীনের ‘ওকি একবার আসিয়া/ সোনার চান্দ মোর যাও দেখিয়া রে’ চল্লিশ দশকের তার শৈশবকালের ওই গান শুনে টংগে হেলান দিয়ে সুরমা খাতুনের যখন মনে হয় এ পানশি কোথায় যায়, ঠিক তখনই তাঁর পাঁচ বছরের পুত্র, যাকে তিনি দুধ গরম করে দেবেন বলার পরে বাসার পেছনের ঝিলে পালের হাওয়ায় ভেসে যাওয়া পানশি দেখে দুধ গরমের কথা ভুলে পানশি দেখতে বসে গেলে ছেলে পেছনে এসে ‘মা’ বলে ডাক দেওয়ায় তাঁর খেয়াল হয়, পুত্রকে তিনি গরম দুধ দেওয়ার কথা বলেছিলেন এবং এই পুনর্ঘটনার দিন, অর্থাৎ প্রায় অর্ধশতাব্দী পর অতীতের বাগানের ছাপরা বারান্দার টংগে নয়, বরং নতুন আধুনিক টংগে, যেখানে তাদের পুরোনো বাড়ির ভূমিতেই নির্মিত নতুন চৌদ্দতলার ‘সুরমা কাজলা বসতবাড়ি’ নামের ‘পেন্টহাউস’ নকশা ভবনের পাথর-চুন মাটির আকাশ-উদ্যানে মেহগনির কাঠামোয় ঝোলানো দোলনায় (হ্যামোক) মৃদু দুলে ঝিলপানে শুয়ে থাকা সুরমা খাতুন কাজল সেই পুরোনো আশ্বিন অনুরূপ শুক্লা পক্ষ ও তিথির অভিন্ন বৃষ্টি ছাটের সাঁঝকালেই যখন বহু যুগ পরে দেখতে পান ঠিক পানশি নয়, বরং এক অত্যাধুনিক এ যুগের যান্ত্রিক বিয়ের পানশি (ইয়াট), যা কাঁচা ফুলে সেজে সেদিনের মতনই উত্তরে যেতে থাকে, যার ছাদে তরুণী-তরুণদের হল্লা আর যেখানে আব্বাসউদ্দীনের নয়, এড শিরানের গান ‘কাম-অন, কাম-অন নাউ, আই এম ইন লাভ উইথ দ্য শেইপ অব ইউ’ বাজে এবং ঠিক অমন সময়েই ৪৬ বছর পূর্বে যেমন করে ‘মা’ বলে তখনকার পাঁচ বছরের ছেলে ডাক দিয়েছিল যার বয়স এখন একান্ন বছর, সেই পুত্রেরই কাচের দরজার ভেতর থেকে চেনা ডাক ‘মা’ শুনে তিনি এই চৌদ্দতলার ওপরের বাগানের দোলনায় শিউরে উঠলেন!
মাঝে সময় যতই যাক, সন্তানের সেই একই ডাক ‘মা’ শুনে ‘সুরমা কাজল বসতবাড়ির’ স্বত্বাধিকারী সুরমা খাতুন ওরফে কাজলা ‘আসছি’ বলে যান্ত্রিক পানশি থেকে চোখ সরিয়ে তাঁর চৌদ্দতলার পেন্টহাউস উদ্যান থেকে ভেতরে যান। এই ‘গুলশাল লেক’ঝিলে এমন যান্ত্রিক নৌকা তিনি আগে কখনো দেখেননি, তবে জানেন জিনিসটা কী। ১৯৭৫ সালে বলাকায় একটা ইতালিয়ান সিনেমা দেখেছিলেন ‘সোয়েপ্ট এওয়ে’ জিয়ানকার্লো ও মেরিয়েঞ্জেলা অভিনীত, লীনা ওয়ার্টমুলার পরিচালিত। সেই ছবিতে এমন সাজসজ্জার নৌকা ও ইউরোপের ‘সম্পদ-অসম্পদের’ দ্বন্দ্ব তিনি প্রথম বুঝেছিলেন।
এই তল্লাটে আজকাল কোনো আদি স্বত্বাধিকারীদের মিলবে না, যেমন বেঁচেও নেই, আবার চলেও গেছে এই একজন সুরমা কাজল বাদে, যিনি অতীত বৃক্ষগুলোর মতন যেন আগেও ছিলেন যখন গুলশান ছিল ‘ভোলা সামাইর’ এবং যখন এই ঝিলে রাজহাঁস আর গাংচিল চড়ত। এলাকার ষাটের দশক থেকে পুনর্নির্মাণের তোড়ে এখন জেঁকে আছে কেবল অতীত পরিত্যাগী ইটপাথর, লোহালক্কড়ের ইমারতের এক ‘প্রাণহীন প্রাণের’ চাকচিক্য। বাড়িগুলোর আদি নামও নেই, যা আশির দশকেও ছিল।এই তল্লাটে আজকাল কোনো আদি স্বত্বাধিকারীদের মিলবে না, যেমন বেঁচেও নেই, আবার চলেও গেছে এই একজন সুরমা কাজল বাদে, যিনি অতীত বৃক্ষগুলোর মতন যেন আগেও ছিলেন যখন গুলশান ছিল ‘ভোলা সামাইর’ এবং যখন এই ঝিলে রাজহাঁস আর গাংচিল চড়ত। এলাকার ষাটের দশক থেকে পুনর্নির্মাণের তোড়ে এখন জেঁকে আছে কেবল অতীত পরিত্যাগী ইটপাথর, লোহালক্কড়ের ইমারতের এক ‘প্রাণহীন প্রাণের’ চাকচিক্য। বাড়িগুলোর আদি নামও নেই, যা আশির দশকেও ছিল। ঝিলপারের ১৫ তলার ‘সুরমা-কাজল বসতবাড়ি’র উত্তরে ছিল রজ্জব আলীর ‘কলমি আশ্রম’, পাশে ‘বনান্তগার’, আর দক্ষিণে ‘দক্ষিণা পবন’। সময়ের সঙ্গে প্রতিবেশীরা বদলেছে, কেউ বিদেশে, অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। সময়ান্তরে বহুতল ভবন উঠেছে নানা নামের; প্রথম দিকে মধ্যপ্রাচ্যি নাম ‘বুরজ আল মালাজ’, ‘আল ফয়সাল’—এসবের পরে ইংলিশ-আমেরিকান নামের আধিপত্য ‘নাভানা লেক ভিউ’, ‘ফিনিক্স লেইক টাওয়ার’ ইত্যাদি। এর মধ্যে এই সুরমা-কাজল বসতবাড়িই একমাত্র আদি নামে আছে, যেমন গুলশান লেক রেখেছে তার আদি জলময়তা।
এই ‘সুরমা-কাজল বসতবাড়ি’ জমি সুরমার শ্বশুরসূত্রে পাওয়া। বাড়ির নাম স্বামী ইসাহাক খান রেখেছিলেন তাঁর স্ত্রীর সুরমার নামে। আর সুরমা নাম এসেছিল স্ত্রীর দাদিজান থেকে। স্বামী লাহোর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়নোর সময়ে ১৮ বছরের সুরমার সঙ্গে বিয়ে। ১৯৫৯ সালে লাহোরেই তাঁদের প্রথম সন্তান ইব্রাহিম কালান্দার খানের জন্ম। সব মিলিয়ে ১০টি সন্তান, যার মধ্যে গর্ভজাত ৮, আর অন্য দুজন শেষ সন্তানের বছরই নেওয়া দত্তক সন্তান, ওদের জন্ম বছর এক, সবার ছোটটি হচ্ছে কন্যা। দত্তক বিষয়টি অতি ঘনিষ্ঠজন ছাড়া অজানা, এ নিয়ে আলাদা চর্চাও নেই, কেউ কিছু বললে তাঁদের যাতায়াত এ বাড়িতে চিরতরে বন্ধ হয়েছে। তাঁদের পারিবারিক প্রতিপত্তি ছিল এসবে সহায়ক। শেষ তিন সন্তানের দুজন ঔরসজাত নয়, তা কেউ জানলেও আর কোনো কৌতূহলী ছিল না। অশীতিপর সুরমার সন্তানেরা কেউ ইউরোপে, কেউ ইউএস-কানাডায়। অন্যরা দেশে। সবাই প্রতিষ্ঠিত। বিধবা মা সন্তানদের এমনভাবে বড় করেছেন, যেন অপ্রতিষ্ঠিত হওয়া অসম্ভব। সব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত। এই ১৫ তলা ভবনের ২৮ আবাসনের ১৫টির মালিকানা নিজের, যাতে কর্তৃত্ব থাকে। সন্তানেরা জানে, তারা অন্য কোথাও থাকতে পারে, যদি এ বাড়িতে বউ বা জামাইসহ কেউ থাকতে না চায়। তিন সন্তান এই ভবনেই, অন্যেরা ভাড়া বা নিজস্ব আবাসে। এই আবাসনের আয় সন্তানদের হিসাব-তহবিলে যায়।
সংক্ষিপ্তভাবে সুরমা খাতুন: জন্ম-দক্ষিণের সুন্দরবনের সাগরপারের অজপাড়াগাঁয়। নিজে ও সবাই জানে তিনি ভিন্ন জাতের মানুষ! ’৪৭-এ পাকিস্তান হওয়ার পরে বাবার সঙ্গে নতুন জামা-‘প্যান্টে’ একদিন তুলাতলীর হাটে গেলে এক সুপারি চোরের চোখ তুলে নেওয়া হলে শিশুমনে সেই তার প্রথম মানসিক আঘাত; এবং বুঝেছিল তিনি ভিন্ন মানুষ। ষাটের দশকের শেষ দিকে উত্তরবঙ্গে গরু চোরদের পিটিয়ে মারার খবর এড়াতে তিনি সংবাদপত্র পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ’৬৯ সালে বড় ছেলে বাবার মতোই একই প্রতিষ্ঠানে পড়তে লাহোরে গিয়েছিল। মেজ ছেলেও ’৭১-এর শুরুতে পাকিস্তানে পড়তে যায়। এ নিয়ে ভিন্ন গুঞ্জন ছিল যে নভেম্বরে ওই ছেলেকে ঢাকায় ‘ক্র্যাক প্লাটুনের’ কাজে দেখা গেছে। সুরমার হিংস্রতাবিমুখী স্বভাব হেতু ওই যুদ্ধ সময়জুড়ে তিনি বেতার-বার্তা ও সংবাদপত্র শোনেননি বা পড়েননি, সন্তানদের নিয়েই থেকেছেন। তিনি ’৭৯ সালে বিধবা হন। ছোট ছেলেমেয়েদের কলেজে যাওয়ার দু-এক বছর আগে ১৯৮৭ সালের আন্দোলন না যেন ’৮৮–র বন্যার সালে সুরমা খাতুন কাজল তাঁর সামর্থ্যবান বন্ধুদের নিয়ে সংগঠন করেছিলেন গণহিংস্রতা নিরোধ সচেতনতার লক্ষ্যে। সেই সংগঠনের আজ অধিকাংশই গত হয়েছেন। দীর্ঘদিন ও ধরনের মামলা চালানোর অর্থ দিতেন। এমনকি পর্যায়ক্রমে দুই নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছেন, খ্যাতনামা আইনজীবী ও পাশ্চাত্যে শিক্ষিত আহিনীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কোনো ফল হয়নি। অবশেষে বুঝেছেন—সমস্যা আইনের চেয়েও বড়; এটি এক সংস্কৃতি, কালান্তরে আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সে সময়ে সংগঠন করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ময়মনসিংহে ছেলেধরা সন্দেহে এক মানসিক রোগী হিংস্রতার শিকারে প্রাণ হারিয়েছিল দেখে।
ছোট সন্তানদের মধ্যে নিজ গর্ভেরটিকে ‘ছোটা’ বলে ডাকতেন। আরও দুই সন্তান যোগ হলে ‘ছোটা’ ডাকনাম ঠিক রেখে অপর দুজনার নাম হলো ‘ছোটু’ ও কন্যা ‘ছোটি’। এভাবে সব কটিতেই ‘ছোট’ শব্দও থাকল আবার ভিন্নও। বড় হলে ছোটা এবং ছোটি ১৬ বছর বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলো। আর ছোটু গেল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সংক্ষিপ্তভাবে সুরমা খাতুন: জন্ম-দক্ষিণের সুন্দরবনের সাগরপারের অজপাড়াগাঁয়। নিজে ও সবাই জানে তিনি ভিন্ন জাতের মানুষ! ’৪৭-এ পাকিস্তান হওয়ার পরে বাবার সঙ্গে নতুন জামা-‘প্যান্টে’ একদিন তুলাতলীর হাটে গেলে এক সুপারি চোরের চোখ তুলে নেওয়া হলে শিশুমনে সেই তার প্রথম মানসিক আঘাত; এবং বুঝেছিল তিনি ভিন্ন মানুষ। ষাটের দশকের শেষ দিকে উত্তরবঙ্গে গরু চোরদের পিটিয়ে মারার খবর এড়াতে তিনি সংবাদপত্র পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।ছোটি মায়ের নেওটা, ছাত্রীনিবাস থেকে প্রতিদিন ফোন করে, সপ্তাহের ছুটিতেও বাসায় চলে আসে, কখনো ক্লাস শেষেও। একবার বিদ্যালয় শেষে বসায় এলে মায়ের মনে হলো মেয়ে হয়তো কিছু বলতে চায়, ভাবে নিশ্চয়ই কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্ভাবনা হতে পারে। তবু পরদিন যাওয়ার সময় ছোটিকে বললেন, ‘মা কিছু বলতে ইচ্ছা করলে বলো, আবার সময় নিতে ইচ্ছা হলে নাহয় নাও।’ মেয়ে ‘আচ্ছা ঠিক আছে’র অভিব্যক্তিতে মাথা নেড়ে লম্বা করে চোখের পাপড়ি মুদে কিছু না বলেই বিদায় নেয়।
কয় দিন না যেতেই আর একদিন সকালে ছোটি চলে এলে মা বুঝলেন, মেয়ে ক্লাস না করেই চলে এসেছে। কেননা তার আগের দিন সন্ধ্যায় বলেছিল কাল সকালে ক্লাস আছে। এমন অসময়ে মেয়েকে দেখে বুঝলেন ওর মন অস্থির। আদর করে বুকে জড়িয়ে বললেন, ‘মা রে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে বুঝি, বলে ফেলো।’ মেয়ে মায়ের বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোফায় বসল। মা পাশে বসে আবার মেয়ের বাহু ছোঁয়, ‘তুমি কি আমার আর একটু কাছে বসবে?’ মেয়ে তখন কেঁদে দিয়ে বলল, ‘মা ছোটাদা অনেক দিন ধরে বাসায় আসে না, তুমি তো কিছু বলো না ওকে।’ মা বলেন, ‘আমি তো আমার কোনো সন্তানকেই কিছু বলি নারে মা, তুই আসিস বলে, না হলে তোকেও তো বলতাম না।’ মেয়ে মাথা নেড়ে ভাব করে, ‘জানি মা।’ তিনি বোঝেন নিশ্চয় এমন কিছু যে সে ছোটাকে ‘ছোটাদা’ বলে সম্বোধন করেছে, যা কেবল সে খুব ছোট সময়ে করত। বড় হয়ে ওরা একে অপরকে নাম ধরে ডাকে, তুমি সম্বোধনে কথা বলে। মেয়ে বলে, ‘ছোটাদা অনেক দিন ধরে অন্য রকম আচরণ করছে। প্রথমে দেখতাম একা হাঁটার সময়ে কথা বলছে, আমাকেও লক্ষ করত না, এরপর আমাদের মূল বিদ্যালয় ভবনের পাশে শিমুলগাছতলায় দাঁড়িয়ে একা কথা বলতে দেখি, যেন কারও সঙ্গে তর্ক করছে, অন্য সহপাঠীরাও এ তথ্য জানিয়েছে। এরপর দেখলাম একদিন দুটো ইট পেতে তার ওপর দাঁড়িয়ে শিমুলতলায় বক্তৃতার মতন করে হাত উঁচিয়ে কথা বলছে। এই নিয়ে একদিন ওকে জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর করেনি, খুব বিষণ্ন তাকিয়ে ছিলমাত্র মা। আজ ক্লাস চলাকালে অঙ্গব্যবচ্ছেদবিদ্যার তত্ত্ব নিয়ে কথা বলা শুরু করেছে, অথচ আমাদের এখনো তা পড়ানো হচ্ছে না। শিক্ষক বুঝে ওর কাছে গেলে মনে হলো যেন হুঁশ ফিরেছে; এদিক–ওদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজছে। আমার বেঞ্চ ছেড়ে ওর পাশে গিয়ে বসতেই আমার কাঁধে মাথা রেখে ছোট্ট সময়ের মতন কেঁদে দিল মা; এই বলে মেয়ে এবারে মায়ের কাঁধে মাথা রেখে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। মা বলে, ‘তুমি এত কষ্টও পেয়ো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ছোটার চিকিৎসা ও পড়াশোনা চলতে থাকে, যদিও দ্বিতীয় বর্ষেই পড়াশোনার ইতি টানতে হয়েছিল। জীবনযাপনের অন্য কিছুতেই তেমন পরিবর্তন হলো না। না জানলে কারও বোঝার নয় এ ছেলের ‘মানসিক বিপত্তি’ আছে। তার দুনিয়ার অন্যান্য পড়াশোনা—সাহিত্য, সিনেমা, নাটক, গান হেন শিল্পকর্ম, খেলাধুলা নেই, যা তার চর্চায় নেই। মা তাকে দুজন উচ্চশিক্ষিত উচ্চ বেতনের নারী ও পুরুষ সহকারী দিয়েছেন, যাঁরা তার যাবতীয় বিষয় দেখে থাকেন।
ছেলের জীবনে বহুবিধর সঙ্গে যোগ হয়েছিল দুখানা ইটমাত্র; যার ওপরে দুই পায়ে দাঁড়ায়ে শাহবাগে জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের প্রবেশদ্বারগোড়ায় অথবা গ্রন্থাগার ও চারুকলা অনুষদের সামনে দিনের কোনো এক সময়ে কথা বলা, বক্তৃতা করা। এ দৃশ্য নিয়মিত, নব্বই দশক থেকে। কথা শুনতে আগে কিছু লোক জড়ো হতো, এখন হয় না। মা নিজের গাড়িটি দিয়েছেন যখন ছেলে ভাষণ দিতে যায়। অনেক দিন মা দূর থেকে ছেলের ভাষণ শুনে মুগ্ধ হয়েছেন স্বাভাবিক! ছেলের জন্য সব ব্যবস্থাই নিশ্চিত থাকে। শাহবাগে গাড়ি থেকে ছেলে নেমে যাবে। তার নারী সহকারী ও গাড়িচালক অনুসরণে রাখবেন।
২০২৩ সালের আশ্বিনের ওই বৃষ্টি সাঁঝে যান্ত্রিক নৌকা অভিজ্ঞতাকালে ৪৬ বছর আগের মতো ছেলে ডেকেছিল, কারণ সে মায়ের দেওয়া গরম দুধ খাবে। অশীতিপর বয়সে মা এখন দুধ গরম করতে পারেন না, অন্যেরা করে কিন্তু ছেলেকে মায়ের খেতে বলতে হয়। এরপর সুরমা খাতুন বিষণ্ন হলেন। সহকারী ডরোথি রোজারিওর উৎকণ্ঠা, কেন তাঁর এই বিষণ্নতা? প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘খারাপ লাগে। সারা জীবন ছেলেটাকে আগলে রাখলাম। আমি না থাকলে ও একা হয়ে যাবে।’ ডরোথি আশ্বস্ত করেন, ‘দুশ্চিন্তার কিছু নেই জনাবা, আপনি তো সব ব্যবস্থাই করেছেন।’
সেই আশ্বিনের তিন মাসের মাথায় পৌষের এক ঘন কুয়াশার সকালে দেখা গেল ঘুমের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সেদিন গুলশান ঝিল অবিশ্বাস্য কুয়াশায় ঢাকা ছিল। ছেলে ‘প্রান্ত মুক্তাদির ছোটা’র তেমন অস্বাভাবিক কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না। শেষকৃত্যের সব প্রথার সে অংশ ছিল। মরদেহ চার দিন রাখতে হয়েছিল হিমাগারে সব ছেলেমেয়ের আসার জন্য।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বোন ছোটি ও তার স্বামী এসে যখন ‘ছোটাদা’কে ‘এইরে আমাদের সহপাঠী’ বলে জড়িয়ে ধরলে প্রথমবারের মতো ছোটাকে কেউ কাঁদতে দেখেছিল মায়ের মরণে।
এক বছর পর যেদিন মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, সেদিন ছেলে তার দুই ইটের ওপরে দাঁড়িয়ে চারুকলার সামনে মাকে নিয়ে বিষণ্ন বক্তব্য শুরু করে।
ওই দিন বিকেলে ‘সুরমা কাজল বসতবাড়ির’ চৌদ্দতলায় ও দশতলায় প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। মিলাদ সঞ্চালিত করেন গুলশান জামে বেইতুশলাতেশা’বেহ মসজিদের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ মাওলানা গুলাবুদ্দিন হামজা। তিনি যখন মোনাজাত ধরেছিলেন, তখন একজন সহকারী এসে তাঁর কানে এমনভাবে একটা কিছু বললেন যে তা সবাই শুনল। মাওলানা মোনাজাতের ভেতরে ঠা ঠা করে কেঁদে ‘কী লাভ, হে আল্লাহ ক্ষমা করো’ বলে জায়নামাজে লুটিয়ে পড়লেন। চৌদ্দতলায় দাদি ও নানির প্রিয় সব সংগীতও বন্ধ হলো। কেননা খবর এসেছে, শাহবাগে তিনজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা সবাই এ বাড়িরই মানুষ। ছোটা সাহেব, তার সহকারী চন্দ্রিমা মাহমুদ ও চালক হেদায়েত মিয়া।
সন্ধ্যার মধ্যে সুরমা কাজলের বিশেষ সহকারী ডরোথি বাসায় এলেন দেশের খ্যাতনামা বিলেতফেরত এক দোর্দাণ্ডপ্রতাপের নারী আইনজীবীসহ। যিনি জানালেন, এই ছোটা সাহেবের লাশ যেন কেউ গ্রহণ না করে। কেননা এ বিষয়ে যেমন উইল করা আছে, তেমনি কোনো মানসিক প্রতিবন্ধীর অস্বাভাবিক মরণের লাশের দায় পরিবারের নয়, তা রাষ্ট্রের দাদন বলে গণ্য হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ষ ট র দশক সন ত ন র প রথম ম র প রথম হয় ছ ল ক জল ব একদ ন সহক র বলল ন র সময় র মতন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
যৌনকর্মীদের কাছে কনডম নেই, এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি
যশোরের বাবুবাজার যৌনপল্লিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে আছেন যৌনকর্মী আশা (ছদ্মনাম)। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কনডমের ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট ধারণা আছে। তবে ধারণা থাকলে কী হবে, সেই সুরক্ষাসামগ্রী এখন আর বিনা পয়সায় পাচ্ছেন না তিনি। বছর দুয়েক হলো এ সমস্যা। এখন কনডমের সংকট চরমে, জানান আশা।
যৌনপল্লিতে এখন খদ্দের অনেক কম বলে জানান তিনি। এরপর শুরু হয়েছে কনডমের সংকট। আশার কথা, ‘নিজির টাকায় কনডম কিনতি হয় বাইরের দোকান থেইকে। অনেক দাম দিতি হয়। কাস্টমারের বেশির ভাগই কনডম আনে না। আর আমার ঘরে কনডম না থাকলি কাস্টমার চলি যায়। কী আর করব, খাবার জোটাই মুশকিল। এখন কনডম কিনতি খরচ বেশি।’
খদ্দেরদের কাছে যদি কনডম না থাকে তখন এটা ছাড়াই যৌনকাজ করতে হয় বলে জানান আশা।
আশার মতো দেশের লক্ষাধিক যৌনকর্মী সুরক্ষা বা কনডমের স্বল্পতায় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। এদিকে দেশে প্রতিবছর যৌনবাহিত রোগ এইডসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই বাবুবাজার যৌনপল্লিতেই চলতি বছর একাধিক যৌনরোগবাহিত নারী যৌনকর্মীর সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক স্বাস্থ্যকর্মী।
গত সোমবার (১ ডিসেম্বর) পালিত হয়েছে বিশ্ব এইডস দিবস। চলতি বছর দিনটির প্রতিপাদ্য ছিল, ‘চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে, নতুনভাবে এইডস প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’
নতুনভাবে এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বললেও, সুরক্ষাসামগ্রীর অভাব এই রোগের ঝুঁকিতে থাকা লক্ষাধিক যৌনকর্মীকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। যৌনকর্মী, বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের কথা, যৌনপল্লি এবং ভাসমান যৌনকর্মীদের সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়ার কাজটি মূলত বেসরকারি সংগঠনগুলোই করত। মূলত এইচআইভি থেকে সুরক্ষায় এই কনডম দেওয়া হতো। এখন এ খাতে বিশেষত বৈদেশিক সহযোগিতা একেবারেই কমে গেছে। আর তাতে বাড়ছে এই নারীদের ঝুঁকি।
বাড়ছে এইডস রোগ
চলতি বছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ হাজার ৮৯১ জন এইডস রোগের ভাইরাস এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়েছেন। একই সময়ে দেশে এইডসে মারা গেছেন ২১৯ জন। গতকাল বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস ও এসটিডি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানা যায়।
এ সময় আরও বলা হয়, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ বছর ২১৭ জন এইচআইভিতে সংক্রমিত হয়েছেন। আর দেশে এখন এইচআইভিতে সংক্রমিত ব্যক্তির মোট অনুমিত সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি (এইডসের ভাইরাস) পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হন। এরপর প্রতিবছর এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। দু-এক বছর এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমে গেলেও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাই ছিল বেশি। গত বছর (২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) ১ হাজার ৪৩৮ জন নতুন করে সংক্রমিত হন। এ সময় এইডসে মারা যান ১৯৫ জন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে আক্রান্তদের মধ্যে ৫২ শতাংশের বেশি বিবাহিত। আক্রান্তদের মধ্যে ৮১ শতাংশ পুরুষ।
দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায়। সেখানকার যৌনকর্মী মালিহা (ছদ্মনাম) দুই বছর ধরে এ পাড়ায় আছেন। এখানে আসার পর বিনা মূল্যে কনডম পেলেও এখন একেবারেই সেই সরবরাহ নেই বলে জানান তিনি।যৌন রোগ বাড়ছে
যশোরের বাবুবাজার যৌনপল্লিতে পিএসটিসি নামের একটি সংগঠন যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সহায়তা দেয়। তবে তাঁদের কনডম দেওয়ার কর্মসূচি এখন আর নেই। এ সংগঠনের কর্মী সালমা খাতুন জানিয়েছেন, যৌনকর্মীদের মধ্যে কনডম বিতরণের কর্মসূচি এখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এতে মেয়েরা নানা রোগ এবং গর্ভধারণের শিকার হচ্ছে।
চলতি বছর এ যৌনপল্লিতে ছয়জন নারী সিফিলিসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান সালমা। গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের সংখ্যা ছয়। তিনি বলেন, ‘আগের বছর এ রকম কেস পাইনি। তবে এ বছর রোগ বাড়তিছে মেয়েদের মধ্যে।’
আগে পাড়াগুলোতে এনজিওদের কাজ ছিল। এখন তো কোনো কাজই নেই। মেয়েগুলো অসহায়। কনডম না থাকার কারণে বড় ঝুঁকি আছে।মোর্চা সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের সভাপতি নূর নাহারদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায়। সেখানকার যৌনকর্মী মালিহা (ছদ্মনাম) দুই বছর ধরে এ পাড়ায় আছেন। এখানে আসার পর বিনা মূল্যে কনডম পেলেও এখন একেবারেই সেই সরবরাহ নেই বলে জানান তিনি।
দেশের যৌনকর্মীদের সংগঠনগুলোর মোর্চা সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ১১টি যৌনপল্লিতে ৪ হাজার ৫৩১ জন যৌনকর্মী আছেন। নেটওয়ার্কের সভাপতি নূর নাহার (রানু)। প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আগে পাড়াগুলোতে এনজিওদের কাজ ছিল। এখন তো কোনো কাজই নেই। মেয়েগুলো অসহায়। কনডম না থাকার কারণে বড় ঝুঁকি আছে।’
ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়ে বড় ঝুঁকি
সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি যৌনকর্মী আছে ভাসমান। কনডমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় যৌনপল্লিগুলোর চেয়ে এই ভাসমান যৌনকর্মীরা অনেক বেশি ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কনডম সরবরাহের হার এখন অনেক কমে গেছে। এখন হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান সরবরাহ দেয়। আগে যেখানে মেয়েরা ১০টি কনডম পেত, সেখানে এখন বড়জোর ৩টি পায়।কল্যাণময়ী নারী সংঘের সভাপতি রীনা বেগমরাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় যৌনকাজ করেন মর্জিনা (ছদ্মনাম)। তিনি বলছিলেন, ‘এখন চেয়েচিন্তে কনডম নেওয়া লাগে। রাস্তার লোক তো কনডম রাহে না। আমাদেরই রাকতে অয়। কিন্তু আমরা কিনে কিনে কত দিন চালাব?’
ঢাকার ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে কল্যাণময়ী নারী সংঘ। এ সংগঠনের সভাপতি রীনা বেগম বলছিলেন, ‘কনডম সরবরাহের হার এখন অনেক কমে গেছে। এখন হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান সরবরাহ দেয়। আগে যেখানে মেয়েরা ১০টি কনডম পেত, সেখানে এখন বড়জোর ৩টি পায়।’
এইচআইভি থেকে সুরক্ষায় কমছে সহায়তা
জাতীয় পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে এখনো নিম্ন বিস্তৃতির দেশ হলেও গত কয়েক বছরে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী—যার একটি অংশ যৌনকর্মী ও তাঁদের খদ্দের—তাঁদের মধ্যে সুরক্ষাহীন যৌন সম্পর্কই সংক্রমণ বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এইচআইভি বাড়লেও এ খাতে দেশে দাতাদের সহায়তা কমছে ব্যাপক হারে। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশের না।
বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে ইউএনএইডসের ‘ওভারকামিং ডিসরাপশন: ট্রান্সফরমিং দ্য এইডস রেসপন্স’ নামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্তরে এইচআইভি খাতে সহায়তা কমে যাওয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। জাতীয় এইডস ব্যয় মূল্যায়ন সম্পন্ন করা আটটি দেশের (বাংলাদেশ, বেলিজ, বেনিন, কোত দিভোয়ার, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি) তথ্য বলছে—বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন এ খাতে ৯৯ শতাংশ অর্থসহায়তা পায় দাতাদের কাছে থেকে। দেশের নিজস্ব উৎস থেকে পাওয়া সহায়তা মোট ব্যয়ের শূন্য দশমিক ১ শতাংশেরও কম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক জুবাইদা নাসরিন বলেন, ‘যৌনপল্লিগুলোতে কনডম সরবরাহ কমে গেছে, তা জানি। এর মূল কারণ ইউএসএইডসহ দাতারা এ খাতে যে অর্থ দিতেন তা কমে গেছে। আমরা কিছু দাতা সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি এ খাতে এগিয়ে আসতে।’
সরকারের পক্ষ থেকে কনডম বা লুব্রিকেন্টের যে সরবরাহ তাতে ঘাটতি নেই। যৌনপল্লি বা ভাসমানদের মধ্যে কনডমের সংকটের কথাটা শুনলাম।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এইচআইভি/এসটিডি) মো. খায়রুজ্জমানস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, দেশের ৩১টি ড্রপ-ইন সেন্টার থেকে নিয়মিত কনডমসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়। তারা যৌনপল্লিতে সরবরাহের কাজ করে না। এটা কখনোই করা হতো না বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এইচআইভি/এসটিডি) মো. খায়রুজ্জমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কনডম বা লুব্রিকেন্টের যে সরবরাহ তাতে ঘাটতি নেই। যৌনপল্লি বা ভাসমানদের মধ্যে কনডমের সংকটের কথাটা শুনলাম।
এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে বৈশ্বিক সহায়তা কমে যাওয়ার কারণেই যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অনেক বেশি উপক্ষিত এখন। এ ক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগী হওয়াটা দরকার বলে মনে করেন গবেষক ডি এম অহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এইচআইভি–সংক্রান্ত কাজে গুরুত্ব ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তরুণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন সংক্রমণ বাড়ায় বাংলাদেশকে তার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কৌশল পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।