প্রাচীন দার্শনিক সেইন্ট অগাস্টিনের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে– ‘বিশ্ব একটি পুস্তক, যিনি ভ্রমণ করেননি তিনি শুধু তার একটা পৃষ্ঠাই পড়েছেন।’
অপার সৌন্দর্যময় এ পৃথিবীর কত কিছুই না আমরা দেখার সুযোগ পাই না এই জীবনে। ভ্রমণপিপাসুদের হয়তো তার কিছু কিছু দেখা হয়। নানা অভিজ্ঞতা হয়, যা জীবনের চলার পথে স্মৃতি হয়ে থাকে। আনন্দময় স্মৃতির সঙ্গে কিছু বিরূপ অভিজ্ঞতাও হয় বইকি। সে রকমই টক-মিষ্টি-ঝালের অভিজ্ঞতা হয়েছিল ইস্তাম্বুলে।
গত মে মাসে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আমন্ত্রণে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার ইতালির মিলান গিয়েছিলাম। মিলানের জমজমাট বার্ষিক সভায় ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার অতিথি। সদস্য দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন মানুষের জমায়েত। তবে মিলানে ঘুরতে গিয়ে বাংলাদেশের একজন বারবার সাবধান করলেন– টাকার ব্যাগ যাতে সামলে রাখি। এখানে নাকি ভদ্রবেশী চোর ঘুরে বেড়ায়। 
নিরাপত্তার জন্য যা কিছু জমানো টাকা ছিল,  সবটাই নিয়েছিলাম ইউরোপে। মেয়েকে নিয়ে গিয়েছি, কখন কী দরকার হয়! তবে ব্যাগে দুই-তিন ভাগে টাকা রাখা ছিল সাবধানতার জন্য। ইউরোপের কিছু দেশ ঘুরে যখন তুরস্কে এলাম, প্রথম দিন ভালোই কাটল। ব্লু বা সুলতানস মসজিদে আসরের নামাজ এবং আয়া সোফিয়ায় মাগরিব পড়ে আমি আর মেয়ে হোটেলে ফিরলাম।
পরের দিন আমাদের সফর পরিকল্পনা ছিল ইস্তাম্বুলের তোপকাপি প্রাসাদ ও বসফরাস ভ্রমণ এবং ফেরার পথে একটু কেনাকাটা। যেহেতু কেনাকাটার পরিকল্পনা, সব টাকাই সঙ্গে নিলাম এবার। হোটেল থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে ট্রাম নিলাম। এগিয়ে দিলেন বাংলাদেশের এক ভাই। নাম তাঁর ওমর ফারুক হেলালী। তিনি ইস্তাম্বুল থাকেন। যেতে যেতে কথা হচ্ছিল, ইস্তাম্বুলে এসে মোবাইল সিম কেনা হয়নি। কারণ ইউরোপের সিমটাই মাঝেমধ্যে কাজ করছে।
ট্রাম থেকে নামার পরপরই হেলালী ভাই ফোন করলেন এবং ব্যাগ সাবধানে রাখতে বললেন। কারণ ইস্তাম্বুলে খুব চুরি হয়। আমিও বেশ সতর্ক হলাম। ব্যাগের চেইনে হাত রাখলাম। হেঁটে আয়া সোফিয়ার সামনে দিয়ে তোপকাপির গেটে স্ক্যানিং মেশিনে ব্যাগ দিলাম। যখন টিকিট কাউন্টারে গেলাম, ব্যাগের দুটি চেইনই বন্ধ ছিল। চেইন খুলে দেখি আমার টাকার ব্যাগ গায়েব! চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না এটি কীভাবে সম্ভব! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। একদম কপর্দকশূন্য হয়ে টুরিস্ট স্পট থেকে হোটেলে ফিরব কীভাবে– সেটিই ভাবছিলাম। আমার ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ডসহ যাবতীয় কার্ড ওই ব্যাগে ছিল। শুধু রক্ষা যে পাসপোর্ট আলাদা ছিল।
যেহেতু তুরস্কে আমি সিম কিনিনি, এখানে মোবাইল কাজ করবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে তোপকাপির রিসেপশনে গেলাম, যদি একটা ফোন করতে দেয়। না শোনার ভান করে তারা আমাকে এক পাশে দাঁড়াতে বলল। কী যে এক অসহায় অবস্থা! ইস্তাম্বুলে বাথরুমে যেতেও টাকা লাগে। বিনা পয়সায় আমাকে ফোন করতে দেবে না এটিই স্বাভাবিক। ওদের সাহায্য না পেয়ে, খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো নিজের ফোনেই ইউরোপে নেওয়া সিমটা কাজ করে কিনা চেক করলাম। আল্লাহ সহায়, ফোন করা গেল।
হেলালী ভাইকে ফোন দিলাম। তিনি দ্রুত কিছু টাকা দিয়ে আরেকজন ভাই মাগফুরকে (তিনি পিএইচডি করছেন ইস্তাম্বুলে) সেই স্পটে পাঠালেন। বিশেষভাবে মাগফুরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ এই বিপদে তিনি আমাদের পাশে ছিলেন। পুলিশ স্টেশনে গেছেন, সারাক্ষণ সাহস দিয়েছেন।
এরই মধ্যে ওদের টুরিস্ট পুলিশকে বললাম। টুরিস্ট পুলিশ থানায় খবর দিল। প্রায় ছয় ঘণ্টা ইস্তাম্বুল পুলিশ স্পটে ও থানায় বসিয়ে রাখল। কোনো কমপ্লেইন নিল না। একটা স্টেটমেন্টও লিখল না। খালি বলে সিসিটিভি দেখবে। বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে বলল, ‘৫টা বেজে গেছে, অফিসের সময় শেষ, তারা আর দেখতে পারবে না। এই ছয় ঘণ্টায় তাদের হম্বিতম্বি দেখে আমি হতবাক। পুরো পুলিশ স্টেশনে মাত্র একজন ইংরেজি জানে, তারা ব্যাপক উদ্ধত। কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই মারমুখী হয়ে যাচ্ছে। কী ভয়াবহ দুর্ব্যবহার! যারা বলেন আমাদের পুলিশ খারাপ, একবার ইস্তাম্বুল ঘুরে দেখে আসতে পারেন, জঘন্য আর কুৎসিত তাদের ব্যবহার। হতাশ হয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে চলে এলাম।
মাগফুরের এই পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কাউন্সেলিং কাজে দিল। আমি আর মেয়ে প্রাপ্তি সিদ্ধান্ত নিলাম বসফরাস ঘুরে হোটেলে যাব– যা হওয়ার হয়েছে। পুলিশ স্টেশন থেকে সরাসরি বসফরাসে চলে গেলাম। ঘুরে বেড়িয়ে হোটেলে ফিরলাম। মনের জোর বরাবরই বেশি আমার। যা চুরি গেছে, তা আমার রিজিকে ছিল না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নদ ফ ন কর ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নিয়ে কটাক্ষের শিকার মাধুরী
  • ফিফপ্রোর একাদশ: মেসি–রোনালদোর জায়গা হয়নি, ইয়ামাল সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ
  • নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহীর মৃত্যু
  • অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী ডায়ান মারা গেছেন
  • এক যে আছে মন
  • নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, কুওমোকে সমর্থন ট্রাম্পের
  • ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
  • ত্রাস সৃষ্টি, টার্গেট কিলিং: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবমূর্তি
  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার