মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের কর্মী কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খলিল
Published: 21st, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক মাহমুদ খলিল গতকাল শুক্রবার মুক্তি পেয়েছেন। লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে তাঁকে রাখা হয়েছিল। শুক্রবারই কয়েক ঘণ্টা আগে একজন বিচারক তাঁকে মুক্তির আদেশ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই রায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এক বড় বিজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনপন্থী এক আন্দোলনকারীকে নিশানা করেছে, যা অবৈধ।
লুইজিয়ানার জেনা শহরের আটক কেন্দ্র থেকে মুক্তির সময় খলিল বলেন, ‘ন্যায়বিচার জয়ী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনেক দেরিতে। এটা ঘটতে তিন মাস লাগা উচিত ছিল না।’
ইসরায়েলের গাজায় হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে সক্রিয় থাকায় গত ৮ মার্চ খলিলকে নিউইয়র্কের ম্যানহ্যাটানে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের লবি থেকে আটক করেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, যেসব বিদেশি ছাত্র এসব বিক্ষোভে অংশ নেন, তাঁদের দেশ থেকে বের করে দেবেন। খলিল হন তাঁর এই নীতির প্রথম শিকার।
নিউ জার্সির বিচারক মাইকেল ফারবিয়ার্জ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণই দেওয়া হয়নি যে খলিল পালিয়ে যাবেন বা জনসাধারণের জন্য তিনি হুমকি।
বিচারক বলেন, এ মামলায় ‘আসামিকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিবাসন আইন ব্যবহার করা হয়েছে—এমনটা বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ আছে’। এটি সংবিধানবিরোধী।
খলিল হলেন সেই বিদেশি ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের একজন, যাঁদের গত মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে আদালতের নির্দেশে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে আছেন মোহসেন মাহদাভি ও রুমাইসা ওজতুর্ক।
মাহমুদ খলিল বলেন, তাঁর রাজনৈতিক মতপ্রকাশের জন্য তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, যা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ‘আমি ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আছি, সেটা আগেও বলেছি।’
সিরিয়া থেকে আসা এই অভিবাসী শিক্ষার্থী এখন নিউইয়র্কে স্ত্রী ডা.
খলিলের স্ত্রী বলেন, ‘আজকের রায় আমাদের পরিবারের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যায়ের মাত্র সামান্য প্রতিফলন। আজ আমরা খলিলের মুক্তি উদ্যাপন করছি, যিনি আবার আমাদের ছোট পরিবার ও সেসব মানুষের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন—যাঁরা শুরু থেকেই আমাদের পাশে ছিলেন।’
হোয়াইট হাউস আদালতের এই রায়ের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, খলিলের মুক্তি অবৈধ। তাঁকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিরোধী কর্মকাণ্ড ও ভিসা জালিয়াতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন বলেন, ‘নিউ জার্সির একজন স্থানীয় বিচারকের এখতিয়ার নেই লুইজিয়ানার আটক কেন্দ্র থেকে কাউকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার। আপিলে আমরা সঠিক বিচার পাব বলে বিশ্বাস করি।’
তবে খলিলের অভিবাসন মামলা চলছে। বিচারক ফারবিয়ার্জ তাঁকে আপাতত যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের আদেশ স্থগিত রেখেছেন। কারণ, খলিল এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
আটক কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সামনে খলিল তাঁর হাতে কেফিয়েহ পরে এবং মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসননীতির নামে বর্ণবাদের চর্চা করছে।
খলিল বলেন, এই কেন্দ্রে আরও শত শত মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এখানে থাকার কথা নয়। কেউ অবৈধ নন, কোনো মানুষ অবৈধ নন।
খলিল বলেন, আটক কেন্দ্রে কাটানো সময় তাঁর চোখ খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখানে গিয়ে আপনি একেবারে আলাদা বাস্তবতা দেখবেন। যে দেশ নিজেদের মানবাধিকার ও স্বাধীনতার পক্ষের বলে দাবি করে—সে দেশের আটক কেন্দ্র চিত্রটা পুরো ভিন্ন।’
লুইজিয়ানার এক অভিবাসন বিচারক শুক্রবার খলিলের আশ্রয় আবেদন নাকচ করে বলেন, তাঁকে অভিবাসন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে বহিষ্কার করা যেতে পারে।
বিচারক ফারবিয়ার্জের মুক্তির আদেশের ফলে জামিন শুনানির প্রয়োজন আর থাকেনি।
খলিলের আইনজীবীরা বলছেন, অভিবাসন ফর্মে তথ্য গোপনের অভিযোগে সাধারণত কাউকে আটক করা হয় না। ১৬ জুন খলিলের পক্ষ থেকে তাঁরা আবার আবেদন করেছিলেন, যেন তাঁকে জামিনে মুক্তি বা নিউ জার্সির আটক কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়, যাতে তিনি পরিবারের কাছে থাকতে পারেন।
ফারবিয়ার্জ বলেন, একজন অভিবাসীকে শুধু আবেদনপত্রে তথ্য গোপনের অভিযোগে কারাগারে রাখা ‘অস্বাভাবিক’ ঘটনা।
খালিল (৩০) গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে মার্কিন নাগরিক।
ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা বলেন, খলিলের মুক্তির আবেদনের বিষয়টি অভিবাসন মামলার বিচারকের কাছে জানানো উচিত ছিল। কারণ, তিনি মূল মামলার বিচার করছেন। খলিলকে যুক্তরাষ্ট্রে রাখা যাবে কি না, সেই রায় ওই বিচারক দেবেন।
তবে বিচারক ফারবিয়ার্জ খলিলের ৮ মার্চের গ্রেপ্তার এবং আটক থাকা সংবিধানসম্মত কি না—সেটি বিবেচনা করছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল স ত নপন থ র আটক ক ন দ র য ক তর ষ ট র ফ রব য় র জ ব চ রক
এছাড়াও পড়ুন:
সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির আরিফ ও নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময়ের দুটি মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ও দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান থানা এলাকায় কামাল হোসেন প্রকাশ সবুজ হত্যা মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।
আর গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট কোতোয়ালি থানার সিএমএম কোর্ট এলাকায় রোফায়েদ হাসানসহ ২৫–৩০ জন আন্দোলনকারীর ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, গত ২৮ ও ৩০ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আরিফ ও কামালকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই দিন আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আজ শুনানির জন্য তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতকড়া ও হেলমেট পরিয়ে তাঁদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। আরিফ ও নজরুল আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিচারক আসেন। আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক অনুপ ঘোষ। তাঁর আইনজীবী জামিন শুনানির জন্য পাওয়ার চান এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান। আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
নাসার নজরুলের মামলার শুনানি শুরু হলে তাঁরা দুজন কাঠগড়ার সামনের অংশের দিকে যান। এরপর নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, ‘জিডির মাধ্যমে এ মামলা হয়েছে। ফরোয়ার্ডিংয়ের সঙ্গে সাপোর্টিভ কোনো ডকুমেন্টস নেই। এ মামলায় কোনো ১৬৪ ও ১৬১ ধারার জবানবন্দি নেই। ঘটনাস্থলে থাকার কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কেউ বলেনি, উনি আওয়ামী লীগকে টাকা দিয়েছেন। তাহলে এ মামলার সন্দিগ্ধ আসামি কীভাবে হন? এটা গ্রেপ্তার দেখানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ডিএমপি পরিদর্শক আসাদ আদালতকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন। আন্দোলনকে দমন করার জন্য তিনি অর্থসহায়তা দিয়েছেন। সে জন্যই গ্রেপ্তারের আবেদন করেছেন।’
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘কোনো ডকুমেন্টস আছে? তথ্য দেন। এমনিতে বললে তো হবে না।’ এরপর বিচারক নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাঁদের দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর দেশ টিভির এমডি আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।