শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল
Published: 24th, June 2025 GMT
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও ছাত্রত্ব বাতিল করার দাবিতে মশাল মিছিল হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে ক্যাম্পাসে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়। ছাত্রী হল প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে মিছিল শেষ হয়। সেখানে রাত ১০টার দিকে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত ৯টা থেকে মশাল মিছিল হাতে গোলচত্বরে জমায়েত হন শিক্ষার্থীরা।
মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষকদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্রত্ব বাতিল চাই, বাতিল করো করতে হবে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘হ্যাঙ দ্য রেপিস্ট, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও লড়াই কর’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মেসে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত দুজন হলেন ওই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্বাগত দাস (পার্থ) ও শান্ত তারার (আদনান)। এ নিয়ে ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। মামলা করার পর ওই দুই ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল ওই দুই ছাত্রের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি করছেন।
গতকাল রাতে সমাবেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নূরউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শাস্তির মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে কেউ বিন্দুমাত্র কোনো সাহস না করে।’
আরেক শিক্ষার্থী জেমিমা জামান বলেন, ‘আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। অভিযুক্তদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে, তবে মামলার বিষয়টি যেন থেমে না যায়। দ্রুতই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক—আমরা মশাল মিছিল থেকে এই বার্তা দিচ্ছি।’
আরও পড়ুনধর্ষণের মামলায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ৪ দিনের রিমান্ডে২১ ঘণ্টা আগেসমাবেশ শেষে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রতীকী ছবিতে আগুন ধরিয়ে শাস্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ওই ঘটনায় আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জরুরি সিন্ডিকেটের বৈঠক ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।
হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়মসালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:
১. অজু করা
সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।২. নিয়ত করা
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’
নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)
আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়
প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।
দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
৪. নামাজের পর দোয়া
নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:
উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)
৫. অতিরিক্ত দোয়া
ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।
আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:
রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।
ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।
জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)
সালাতুল হাজতের ফজিলতসালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)
এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।
সতর্কতানিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।
খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।
হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।
ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)
সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫