অন্তর্বর্তী সরকার যে জনমতকে সম্মান জানায়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদনে। ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট প্রস্তাবকালে ফ্ল্যাট ও ভবন নির্মাণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কালোটাকা সাদা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় তা বাদ দেওয়া হয়।

অতীতে এমন সুযোগ বারবার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে; অর্থাৎ সাদা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এ সুযোগ নেননি।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদেরা বাজেটে কালোটাকা সাদা করার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এর মাধ্যমে সরকার নিয়মমাফিক করদাতাদের প্রতি অবিচার করেছে। এ রকম কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হন।

রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রহিতসহ ২ জুন ঘোষিত বাজেটে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাটসংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আনা হয়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেট কার্যকর করা হবে।

চূড়ান্ত অনুমোদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর অর্থ ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। যদিও ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয়ের বাজেট অপরিবর্তিতই থাকছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় শুল্ক-করহারেও কিছু পরিবর্তন করেছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি, যাদের পরিশোধিত মূলধনের অন্যূন ১০ শতাংশ শেয়ার আইপিও বা সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আয়ের সাড়ে ২২ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। তবে ব্যাংক লেনদেনের শর্তে এ হার হবে ২০ শতাংশ।

এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের করহার ১৫ শতাংশের স্থলে ১০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে কর সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কর্তনের হার ৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ ও ৪ শতাংশের স্থলে কমিয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ৩ শতাংশ ও ২ শতাংশ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে বাজেটটিকে মন্দের ভালো বলা যায়। বাজেট পেশের পর দেওয়া সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টাও বাজেট কিছুটা গতানুগতিক হয়েছে বলে স্বীকার করেছিলেন। এবারের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, আর আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪৪ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে হবে। দেশীয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিলে তার সুদ গুনতে হবে জনগণকেই।

এবারের ইতিবাচক দিক হলো বাজেট ঘোষণার পর নিত্যপণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। আর উদ্বেগের বিষয় হলো বাজেট শেষ না হতেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পূর্বাভাস দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ চার মাস বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকছে না। নতুন সরকার আসবে। তাদের অর্থনৈতিক নীতি ও জনগণের কাছে কী প্রতিশ্রুতি থাকে, তার ওপরও বাজেটের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।

অন্তর্বর্তী বা নির্বাচিত—যে–ই সরকারই থাকুক, বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অন্যথায় বাজেট যত ভালো হোক না কেন, তার সুফল বৃহত্তর জনগণ পাবেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।’ কিয়েভ নির্বাচন এড়াতে ‘যুদ্ধকে ব্যবহার করছে’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করার পরে বুধবার জেলেনস্কি এ ঘোষণা দিলেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কির পাঁচ বছরের মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাশিয়ার আক্রমণের পর সামরিক আইন জারি হওয়ায় ইউক্রেনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

পলিটিকোতে ট্রাম্পের ব্যাপক সমালোচনামূলক সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলেনস্কি জানান, তিনি আইন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব তৈরি করতে বলবেন। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্রদের সহায়তায় ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় তবে আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তিনি বলেন, “আমি এখনই অনুরোধ করছি, এবং আমি প্রকাশ্যেই বলছি, নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাকে, সম্ভবত আমাদের ইউরোপীয় সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে সাহায্য করুক। আমাদের অংশীদারদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আমি বিশ্বাস করি, ইউক্রেনে নির্বাচনের বিষয়টি সর্বপ্রথম আমাদের জনগণের উপর নির্ভর করে এবং এটি ইউক্রেনের জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন, অন্যান্য দেশের জনগণের উপর নয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমি বলতে শুনেছি যে আমরা ক্ষমতা আঁকড়ে আছি অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্রপতির পদ আঁকড়ে আছি এবং কারণেই যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক আখ্যান।”

প্রসঙ্গত, জেলেনস্কি ২০১৯ সালে ৭৩ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন।
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্রাগন ফল বিক্রি করে কারও আয় ১০ লাখ, কারও ১৫ লাখ টাকা
  • ভোটের মাঠে জোটের ভিড়ে জনপ্রত্যাশা কোথায় গেল 
  • পার্বত্য ৩ আসনে প্রার্থী না দিতে জাতীয় দলগুলোর প্রতি আহ্বান ইউপিড
  • শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান ইসলামী ফ্রন্টের
  • ডিসেম্বরে ১০ দিনে প্রবাসী আয় ১২৯ কোটি ডলার
  • তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • ‘নির্বাচন সহজ হবে না, পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামতে হবে’
  • আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে পুরোপুরিভাবে জয়লাভ করতে হবে: নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল
  • বাবুগঞ্জে এবি পার্টির ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ুমিছিল
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি