ছাত্রত্ব ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট জাবি ছাত্রদল আহ্বায়কের
Published: 26th, June 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তরে পুনঃভর্তি ও ছাত্রত্ব ফিরিয়ে পেতে আদালতে রিট আবেদন করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। রিটের শুনানি শেষে আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (২৫ জুন) হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আকরাম এইচ. চৌধুরী ও দেবাশীষ রায় চৌধুরী বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
একইসঙ্গে, কেন আবেদনকারীর পুনঃভর্তির আবেদন যথাযথভাবে নিষ্পন্ন না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবৈধ কাজ করেছেন বলে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
গত ২৭ ও ২৯ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে পুনঃভর্তি ও ছাত্রত্ব পুনরায় ফিরিয়ে পাওয়র জন্য আবেদন করেন জহির উদ্দিন বাবর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির নিষ্পত্তি করেননি।
এ বিষয়ে জহির উদ্দিন বাবরের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “আমার মক্কেল জহির উদ্দিন বাবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে পুনঃভর্তি ও ছাত্রত্ব ফিরে পেতে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পক্ষে আবেদনটির নিষ্পত্তি করেনি। ফলে আমার মক্কেল বিষয়টি নিয়ে আদালতের দারস্ত হন।”
তিনি বলেন, “আদালত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ জহির উদ্দিন বাবরের পূর্বে করা আবেদন আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে, কেন আবেদনকারীর পুনঃভর্তির আবেদন যথাযথভাবে নিষ্পন্ন না করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবৈধ কাজ করেছেন বলে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাঁর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া বা বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
ছাত্রদল নেতা জহির উদ্দিন বাবর বলেন, “মেধা তালিকায় ভর্তি হয়েও ছাত্রলীগের নির্যাতন নিপিড়ন এবং তৎকালীন বিশ্বিবিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতায় আমি আমার শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারিনি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমার স্নাতকোত্তের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তির বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আদেশ দিয়েছেন। আশা করি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার স্নাতকোত্তর ভর্তি কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতা করবে।”
এ বিষয়ে জাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, “আমরা এ বিষয়ে একটি আবেদন পেয়েছি। তবে সেটি যথাযথ পদ্ধতিতে, অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে আসেনি। আরো একটি বিষয় হলো, আবেদনে আবেদনকারীর স্বাক্ষর ছিল না। ফলে সেটি প্রকৃতপক্ষে তার কি না, তা যাচাই করার চেষ্টা চলছে “
আবেদনপত্র অনুযায়ী, তিনি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তিনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যেহেতু তিনি নিয়মিতভাবে ভর্তি ছিলেন, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে তার মাস্টার্স সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন ভর ত ছ ত রদল কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, তবে কখনো কোচিং বা প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেননি। বাবার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে তাঁর শিক্ষাভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এবার তিনি যাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সেখানে।
ঢাবি থেকে জাবি, সেখান থেকে অক্সফোর্ড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সামিয়া ইসলাম। কিন্তু তাঁর মনে ছিল অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাই এক বছর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের প্রথম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। স্নাতকোত্তরের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোফাইল। অক্সফোর্ড ছাড়াও ইয়েল, ওয়ারউইক ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডাক দিয়েছিল। তবে তত্ত্বীয় অর্থনীতিতে বিশেষ আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত অক্সফোর্ডকেই বেছে নেন।
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
শুরু থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন সামিয়া ইসলাম। স্নাতকে ৩.৯২ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯১ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুব পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলাম না। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তাম। তবে ক্লাস কখনো মিস করিনি। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাই আমাকে ভালো ফল করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।’
একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত গবেষণা কার্যক্রমেও। ইন্টার্নশিপ করেছেন, ভাষাগত পরীক্ষা (আইএলটিএস এবং জিআরই) প্রস্তুতিও নিয়েছেন আগেভাগেই। সব মিলিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাঁকে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম
গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন সামিয়া ইসলাম। ইতিমধ্যে তাঁর একটি গবেষণাপত্র ও কনফারেন্স পেপার প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। এ ছাড়া সানেমে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সক্রিয় ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (জিইউডিএস) সহসাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, এসব কার্যক্রম ব্যক্তিগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরি করে।
আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা২২ ঘণ্টা আগেপরিবারের প্রেরণা
শৈশব থেকেই কোচিং-প্রাইভেটের বদলে বাবার কাছে পড়াশোনা করেছেন সামিয়া ইসলাম। বাবাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মনে করেন। সামিয়া বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আসার ব্যাপারে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছেন। এতে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।’
নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তাও সামিয়ার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি। সামিয়া বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা কঠিন হতো।’
আরও পড়ুনবেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ক্ষমতা হারাল পরিচালনা পর্ষদ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫তরুণদের জন্য শিক্ষা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সামিয়ার অভিজ্ঞতা একটি পথনির্দেশের মতো। তিনি মনে করেন, আগে ঠিক করতে হবে কোনো বিষয়ে পড়তে চান, তারপর সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক ফল ভালো হলে সুযোগ অনেক বেড়ে যায়, তবে গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত থাকা জরুরি। আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসওপি–স্টেটমেন্ট অব পারপোজ, যা মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আর ভাষাগত পরীক্ষাগুলো আগেভাগেই দিয়ে রাখা উচিত, নয়তো শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োতে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বিশেষ পরামর্শ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
সামিয়া ইসলাম এখনো চূড়ান্তভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি অর্থনীতির জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিবারের সমর্থনে সামিয়ার এ অর্জন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে।