বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সামনে আটটি মূল চ্যালেঞ্জ দেখছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নির্ভরতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেছে সিপিডি। সেমিনারে ‘জাতীয় বাজেটে (২০২৫-২৬) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে কি?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক, তবে তা পূরণ হয়নি। বরং আগের চেয়েও হতাশ হতে হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সামনে আটটি মূল চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে পিডিবি, বিপিসি ও পেট্রোবাংলার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বোঝা; গ্যাস সরবরাহে স্বল্পতা; উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারা; জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি; সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রে ধীরগতি; দেশি-বিদেশি কোম্পানির বিল বকেয়া ও চড়া সুদে ঋণ এবং জ্বালানি রূপান্তরের নীতি পরিবর্তনের ধীরগতি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রূপরেখা নেই এবারের বাজেটে।

সিপিডি বলছে, চড়া দামে এলএনজি আমদানি করে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে না। এলএনজি নির্ভরতায় আরও বাড়তে পারে গ্যাসসংকট।

নিবন্ধে বলা হয়, সরকার আমদানির দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি এলএনজির আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। অথচ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তেমন কোনো প্রণোদনা নেই। বিদ্যুৎ খাতে আগের বাজেটের চেয়ে এবারের বাজেটে পরিচালন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে, উন্নয়ন খাতে কমেছে। এটা বিপরীত ধারা; বাড়ানোর কথা উন্নয়ন বাজেট। আর বেতন–ভাতা, সরকারি সুবিধার নামে পরিচালন খরচে লাগাম টানার কথা।

নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এরপরও সংস্থাটির লোকসান ৮ হাজার ৮৮০৩ কোটি টাকা। একই সময়ে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নিয়ে মুনাফা করেছে ১০৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দুই হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। সরকারি কোম্পানি রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) বাপেক্স মুনাফা করেছে।

নিবন্ধে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের এত বেশি মুনাফার কথা নয়। এগুলো সমন্বয় করার পরিকল্পনা নেই বাজেটে। এক সংস্থার মুনাফা থেকে অন্য সংস্থায় ভর্তুকি প্রদান করা যেতে পারে। দাম বাড়ানোর কারণেই এভাবে মুনাফা করতে পারছে কোম্পানিগুলো। এ ছাড়া বিপিসির জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সূত্র ত্রুটিপূর্ণ। এটি সংশোধন করা হলে প্রতি লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম কমানোর সুযোগ আছে।

এলএনজিনির্ভরতা বাড়ছে উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট গ্যাসের প্রায় ৮ শতাংশ এসেছে এলএনজি থেকে। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। দেশীয় গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর রূপরেখা বাজেটে নেই। গ্যাসসংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়।

বিদ্যুৎ সঞ্চালনের গ্রিডেও সমস্যা আছে উল্লেখ করে গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকটি বাজেটে রাখার প্রত‍্যাশিত ছিল।

সেমিনারে বলা হয়, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র করে তেমন সাড়া পাচ্ছে না সরকার। এর পেছনে দুটি কারণ আছে। একটি হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা সাংঘর্ষিক। আর হঠাৎ করে আগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি পাওয়া ৩৭টি কেন্দ্রের সম্মতিপত্র বাতিলের প্রভাবও পড়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক‍্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, দেশ জ্বালানি আমদানি দেশে পরিণত হচ্ছে। জ্বালানি খাতে সব কোম্পানি মুনাফা করে। আগের সরকার লুণ্ঠন করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো ফ‍্যাসিস্টের চরিত্র ধারণ করে আছে, তাদের পতন হয়নি। তিনি বলেন, ভোক্তাদের সবাই ঠকছে অথচ ঠকার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় না। অধিকার আদায়ে লড়াই করতে হবে।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ-এর পরিচালক রাজীব হায়দার বলেন, প্রতিদিন সকাল শুরু হয় গ্যাস সরবরাহের দুশ্চিন্তা নিয়ে। গত দেড় বছর ধরে গ‍্যাসের সংকটে ভুগছেন। কিছুদিন ধরে সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। বিদ্যুৎ সক্ষমতা এত না বাড়িয়ে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিলে আজকের হাহাকার হতো না। তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে এলএনজি ছাড়া গতি নেই। গ্যাসসংকট উত্তরণে বাজেটে কোনো পরিকল্পনা দেখা যায়নি বলেও মন্তব্য করেন রাজীব হায়দার।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, দেশের উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাতের অবদান তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি আখতার হোসেন বলেন, বস্ত্র খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ খুবই জরুরি। এটা দেবে বলে ২০২৩ সালে দাম বাড়ানো হয় অনেক। বাড়তি দাম দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সেই গ্যাসসংকটেই আছেন।

সেমিনারে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তাঁরাও বাজেট নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতের সংকট যতটা দেখা যায়, বাস্তবে এটি তার চেয়ে আরও গভীরতর। এটা সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলতে হবে। সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ সরক র র ন বন ধ র র পর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নিউমার্কেট থেকে ১১০০ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৯

রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার কয়েকটি দোকান ও গুদামে শনিবার অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০টি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এসব অস্ত্র বিক্রি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ আর্মি ক্যাম্পে শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক বিগ্রেডের ডেয়ারিং টাইগার্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজিম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি এই আইটেমগুলো (ধারালো অস্ত্র) কোনো একটা জায়গা থেকে সন্ত্রাসীদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে হচ্ছে এবং গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে, এমনকি ভাড়াও দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু সময় ফ্রি ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে, হোম ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ঢাকার কোনো একটি জায়গা থেকে এই আইটেমগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে দেওয়া হয়।’

নাজিম বলেন,‘আমাদের কাছে গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীরা স্বীকার করেছে, একটা স্থান থেকে তারা এই সামুরাইগুলো সাপ্লাই পাচ্ছে। এরপর আমরা আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করি। গত কয়েক দিন ধরে আমাদের গোয়েন্দারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খোঁজ নেয় এবং নিশ্চিত হয় যে, কোন কোন স্থানগুলোতে এই ধারালো অস্ত্রগুলো পাওয়া যাবে। এর ভিত্তিতে আমরা আজ (শনিবার) নিউমার্কেটে গিয়ে তিন থেকে চারটি দোকানে তল্লাশি চালিয়ে এই ধারালো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আজ আমরা এই কাজে জড়িত হিসেবে নয়জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। মোট তিনটি দোকান থেকে মূল এই আইটেমগুলো পাওয়া যায়। আমরা গত কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করেছি, সন্ত্রাসীরা এই ধরনের দেশি অস্ত্রই বেশি ব্যবহার করে। গত তিন-চার মাস ধরে এগুলো বিশাল আকারে মজুত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের হাতে দেখা যাচ্ছে।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিলামে ৮৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • একই পে স্কেলের দাবিতে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজারের শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
  • বিশ্ববাজারে চালের দাম আট বছরে সর্বনিম্ন, দেশের বাজারে বাড়তি
  • নিউমার্কেট থেকে ১১০০ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৯
  • ‎ বন্দরে মাদকের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর বিক্ষোভ
  • আগামীকাল থেকে ট্রাকে তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি করবে টিসিবি
  • স্বস্তিতে বিদ্যুৎ, সংকটে গ্যাস সরবরাহ 
  • চীন-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা উন্নয়ন প্রদর্শনীর উদ্বোধন
  • অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: বাণিজ্য আদালত প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ