ইরানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান হামলা চালানোর ৭২ ঘণ্টা না যেতেই দেশটির ফর্দো ও নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) একটি প্রাথমিক গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদন ফাঁস করে জানিয়েছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা মাঝারি থেকে গুরুতর হতে পারে। যদিও এটি প্রাথমিক মূল্যায়ন হওয়ায় প্রতিবেদনটিতে ‘কম আত্মবিশ্বাস’-এর কথা বলা হয়।

অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, ওই কেন্দ্রগুলো ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে।

এ মতভেদ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সক্ষমতা অন্তত কয়েক বছরের জন্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল নষ্ট করতে পেরেছে কি না, সেই বিষয়টি।

ইসরায়েল বহু বছর ধরে প্রমাণ ছাড়াই দাবি করে আসছে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির পরিকল্পনা করছে। কিন্তু ইরান বরাবরই বলে এসেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। চলতি বছর মার্চে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, তেহরান পারমাণবিক বোমা বানাচ্ছে না। তবে জুনের শুরুতে ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, সেসব নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ কী? এ পর্যন্ত কতটা ক্ষতি হয়েছে? যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কি ইরানকে আবারও কর্মসূচিটি শুরু করতে দেবে? আর ২০১৫ সালের যে চুক্তিটি ট্রাম্প বাতিল করার আগপর্যন্ত কার্যকর ছিল, সেটি কি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে? উঠে আসছে এমন নানা প্রশ্ন।

ইরান কী চায়

ইরানে মার্কিন হামলার পর প্রথমবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ‘গুরুতর কিছু হয়নি’।

তেহরান থেকে আল–জাজিরার সংবাদদাতা রেসুল সেরদার জানান, খামেনি বলেন, ‘বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি এবং ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় কি না, তা নিয়ে সাংঘর্ষিক দাবি ও মূল্যায়নের মধ্যেও একটি বিষয় স্পষ্ট—তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটবে না।

ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামি গত মঙ্গলবার বলেন, ‘(পারমাণবিক কর্মসূচি) পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং আমাদের পরিকল্পনা হলো, উৎপাদন বা সেবায় যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে।’

নাতাঞ্জ ও ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও, স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জুন শুরু করা একাধিক হামলায় ইসরায়েল ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানীকেও হত্যা করেছে।

তবে, ডিআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনকে ট্রাম্প প্রশাসন গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাতে বলা হয়, এ হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে পড়েছে মাত্র। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান আগেই ওই সব কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। একই দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারাও।

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ অভিযোগ করেছে, ইরান ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছে। এই মাত্রা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ থেকে বেশি দূরে নয়।

গত বুধবার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি মনে করেন, হামলার আগে ইরান ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিয়েছিল? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সবকিছু ওখানেই ছিল, ওরা সরাতে পারেনি।’ পরে আবার জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এত দ্রুত ও জোরালোভাবে আঘাত করেছি যে সরানোর সময়ই পায়নি।’

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সুযোগ না থাকায় কেউই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না।

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ)’ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ইরানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্গঠনে কয়েক বছর লেগে যাবে।’ অথচ এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএর প্রাথমিক মূল্যায়নে ভিন্ন সময়রেখা তুলে ধরা হয়েছে।

তবে মনে রাখা জরুরি, ২০০৩ সালে ইরাকের নেতা সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে কি না, তা নিয়েও ডিআইএ ও সিআইএর মূল্যায়ন এক রকম ছিল না।

ডিআইএ জাতিসংঘের সঙ্গে একমত হয়ে বলেছিল, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, সাদ্দামের কাছে এমন অস্ত্র নেই। অন্যদিকে, সিআইএ এমন গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণের অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। এ তথ্য পরে ভুল প্রমাণিত হয়। সেই সময় সিআইএকে ডিআইএর চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরও নমনীয় মনে হয়েছিল।

বেশির ভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত রয়েছে এবং ইরান তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।—আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে, ট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেছেন।

সামাজিকমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) গ্যাবার্ড লিখেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। ইরান যদি পুনর্নির্মাণে আগ্রহী হয়, তাহলে তাদের নাতাঞ্জ, ফর্দো ও ইসফাহানের সব স্থাপনা একেবারে নতুন করে গড়তে হবে। তাতে সম্ভবত কয়েক বছর লাগবে।’

তবে গ্যাবার্ড ট্রাম্পের অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এর আগেও নিজের বক্তব্য পাল্টেছেন।

গত মার্চে মার্কিন কংগ্রেসের গোয়েন্দা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সামনে গ্যাবার্ড তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ করছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ২০০৩ সালে যে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন, সেটি আবার চালুর অনুমোদন দেননি।’

পরে ২০ জুন ট্রাম্পের কাছে গ্যাবার্ডের এ মূল্যায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি (গ্যাবার্ড) ভুল বলছেন।’

সেই দিনই গ্যাবার্ড পোস্ট করে বলেন, ‘অসৎ গণমাধ্যম’ তাঁর বক্তব্য বিকৃত করেছে এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ইরান যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।’

আরও পড়ুনইরানে বোমা হামলার সঙ্গে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার তুলনা করলেন ট্রাম্প২৫ জুন ২০২৫

তবে গ্যাবার্ডের এ ব্যাখ্যা তাঁর আগের বক্তব্যের বিরোধিতা করে না। কেননা, তিনি বলেছিলেন, ইরান বর্তমানে সক্রিয়ভাবে বোমা তৈরির চেষ্টা করছে না।

একটি ফরাসি রেডিও নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে কি না, জানতে চাইলে, আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ‘আমি মনে করি ‘‘ধ্বংস’’ শব্দটা বাড়াবাড়ি হবে। কিন্তু এটা যে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা নিশ্চিত।’

যদি ইরান পারমাণবিক পথে ফেরে, আমরা তো আছি—তখন কিছু একটা করতে হবে। —ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

গত বুধবার ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশন সিআইএর সঙ্গে একমত প্রকাশ করে জানায়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ অকার্যকর’ হয়ে গেছে এবং ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে বহু বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে’।

ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইরানের ইসফাহানে স্থাপনার উপরিভাগের ধ্বংসই প্রমাণ করে যে ইরান আর পারমাণবিক বোমা বানাতে পারবে না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কনভার্সন ফ্যাসিলিটি ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র বানানো যায় না। আমরা তো খুঁজেই পাচ্ছি না, সেটা এখন কোথায়, আগের মানচিত্রে যে জায়গায় ছিল, সেখানে তা আর নেই।’

আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কড়া নিন্দা না জানিয়ে কী অর্জন করতে চাইছেন এরদোয়ান২৩ জুন ২০২৫২০১৫ সালের চুক্তি কি আবার কার্যকর করা সম্ভব

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সই হওয়া ‘যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা’ বা জেসিপিওএ ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে একমাত্র সফল আন্তর্জাতিক চুক্তি।

এ চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত, তবে তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা ৩ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হতো। ইসরায়েলের অনুরোধে ২০১৮ সালে ট্রাম্প এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং পরের বছর ইরানও চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। এর আগপর্যন্ত এটি কার্যকর ছিল।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ওবামার করা জেসিপিওএ-তে আর ফিরবেন না। কিন্তু এমন একটি নতুন চুক্তি করতে পারেন, যা মূলত জেসিপিওএর মতোই হবে। মূল প্রশ্ন হলো, এবার ইসরায়েল কি এমন চুক্তির পক্ষে থাকবে? আর ইরানকে কি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তার অধিকার মেনে অন্তত শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অনুমতি দেওয়া হবে?

অবশ্য, বুধবার দ্য হেগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্পের মন্তব্যে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ‘আমরা হয়তো কোনো চুক্তি করব। জানি না। আমি মনে করি, সেটা ততটা জরুরি নয়’, বলেন তিনি।

জেসিপিওএ ধরনের যেকোনো চুক্তির জন্য ইরানকে আবার আইএইএর পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দিতে হবে; যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন—তেহরান পারমাণবিক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি মানছে।

মঙ্গলবার আইএইএ জানায়, (ইসরায়েল–ইরান) সংঘাতকালীন সময়েও তাদের পরিদর্শকেরা ইরানে অবস্থান করছিলেন এবং দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও পারমাণবিক উপাদানের মজুদ যাচাই করার জন্য আবার কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।

এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের প্রভাবশালী গার্ডিয়ান কাউন্সিল পার্লামেন্টে গৃহীত এক বিল অনুমোদন করেছে। বিলে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বর্তমানে তেহরান জাতিসংঘের কোনো তদারকি গ্রহণে আগ্রহী নয়।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ তীব্র না হয়ে থেমে গেল কেন২২ ঘণ্টা আগেইরান যদি আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে

‘ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে চায়, তারা সেটা চালাতে পারে; বিশ্বের অনেক দেশ যেমনটা চালায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করলেই হয়’, গত এপ্রিল মাসে পডকাস্ট ‘অনেস্টলি’-তে সাংবাদিক বারি ওয়েইসকে বলেছিলেন মার্কো রুবিও।

‘কিন্তু তারা যদি নিজেরাই সমৃদ্ধকরণে (ইউরেনিয়াম) অনড় থাকে, তাহলে তারা হবে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যাদের কোনো অস্ত্র কর্মসূচি নেই, কিন্তু নিজেরাই সমৃদ্ধকরণ করছে—যা সত্যিই সমস্যার’, বলেন রুবিও।

যুক্তরাজ্যের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানবিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আনসারি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘ইরানের ভেতর থেকেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের আহ্বান উঠেছে।’

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানি কর্মকর্তারা যেসব জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন, বিশেষত গতকাল বৃহস্পতিবার খামেনি যা বলেছেন—সেসব শুনে মনে হচ্ছে, তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করার মতো অবস্থায় নেই।

গত কয়েক দিনে ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি চান, ইরান পুরোপুরি পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করুক। মঙ্গলবার নিজ মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি পোস্ট করেন, ‘ইরান আর কখনোই তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুনর্গঠন করতে পারবে না!’

বুধবার ওই অবস্থানে আরও জোর দেন ট্রাম্প। ‘ইরান খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাদের রয়েছে দারুণ তেলসম্পদ, তারা অনেক কিছু করতে পারে। আমি মনে করি না, তারা পারমাণবিক কর্মসূচিতে ফিরবে। ওদের সেই পথ শেষ হয়ে গেছে’, দ্য হেগে ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিন সাংবাদিকদের বলেন তিনি।

এরপর ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, ইরান পারমাণবিক বোমা না বানালেও যুক্তরাষ্ট্র আবার তাদের স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। ‘যদি ইরান পারমাণবিক পথে ফেরে, আমরা তো আছি—তখন কিছু একটা করতে হবে’, বলেন তিনি। আর যদি তিনি না করেন, তাহলে কেউ একজন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেবে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকেরা বলেন, এই ‘কেউ একজন’ ইসরায়েল; যারা বহুদিন ধরেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে চাচ্ছে।

ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে আবার যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে কি না। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, একদিন তা হতে পারে। এমনকি খুব শিগগির শুরু হয়ে যেতে পারে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য প র র জন য ইসর য় ল ক র যকর অবস থ ন বল ছ ল কর ছ ল বল ছ ন ড আইএ স আইএ

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভোগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেছেন, “বাংলাদেশে কম বয়সী শিশুদের সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক। শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন, আয়রন, জিঙ্ক ও আয়োডিনের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে।” 

তিনি বলেন, “অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জিঙ্ক এবং ৪২ শতাংশ আয়োডিন ঘাটতিতে আক্রান্ত। অপুষ্টি ও ভিটামিন-খনিজ ঘাটতি বর্তমানে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই লবণ ছাড়াও অন্যান্য খাবারে এসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধকরণ (ফর্টিফিকেশন) জরুরি হয়ে পড়েছে।”

আরো পড়ুন:

পায়রা নদীর তীর থেকে শিশুর মরেদেহ উদ্ধার

রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ‘বাংলাদেশে খাদ্য সমৃদ্ধকরণের (ফুড ফর্টিফিকেশন) গুরুত্ব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। বাকৃবির কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)।

মূল প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেন, ‘ফুড ফর্টিফিকেশন হলো খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। এতে খাদ্যের সঙ্গে এক বা একাধিক ভিটামিন বা খনিজ উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানো হয়। বর্তমানে চালের ফর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে— ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, ফলিক এসিড, আয়োডিন, আয়রন ও জিঙ্ক। এছাড়া ভোজ্যতেলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে নারী ও শিশুর ভিটামিন-ডি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।”

তিনি করেন, “এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই বাধ্যতামূলক খাদ্য সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করেছে। যেমন— চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় লবণে আয়োডিন সমৃদ্ধকরণ চালু রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে গমের আটা, তেল, চাল ও চিনি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কেবল লবণ আয়োডিনেশন কার্যকর রয়েছে। গমের আটা বা অন্যান্য খাদ্যে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।”

পিএমএইচসিএল-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. শরিফুল হক ভূঁইয়া।

কর্মশালায় ‘বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের ফুড ফর্টিফিকেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।

তিনি বলেন, “খাদ্য সমৃদ্ধকরণের জন্য আমাদের দেশে কোনো কেন্দ্রীয় হাব নেই। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ায় এ নিয়ে কাজ করছি। গবেষণার জন্য দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যার একটি হলো বাকৃবি। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফর্টিফিকেশন নয়, বরং বায়োফর্টিফিকেশন নিয়ে কাজ করছি। বায়োফর্টিফিকেশন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ডাল জাতীয় ফসলে জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে।”

তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তেলে ভিটামিন-এ এবং লবণে আয়োডিন যোগ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ ভোক্তা আসলে কতটুকু ভিটামিন-এ ও আয়োডিন পাচ্ছেন, সেটিও গবেষণার বিষয়।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে জাতিকে সচেতন করা জরুরি, যাতে সবাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। সচেতনতার অভাবে আজ অনেক মানুষ ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে সফল করতে আমার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য পুষ্টিগুণ বিষয়ে সচেতনতা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প আলাদা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হলে ফলাফল আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে