বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের
Published: 27th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও দেশটির নহাভা শেভা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।
তবে এভাবে একের পর এক পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোল পেট্রাপোল বন্দরে পণ্যের জোগান কমতে শুরু করেছে। এতে হতাশায় ভুগছেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে একের পর এক নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব অজয় ভাদু স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাত দ্রব্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ভারতের অনেক ছোট ছোট আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে পার্ট ও পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতো। এসব ছোট আমদানিকারকরা সমুদ্রপথে এ পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবেন।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন অনেক পাট ও পাটজাত দ্রব্য ভারতে রপ্তানি হয়। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হঠাৎ করে স্থলপথে পাট ও পাটজাত পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় অনেক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়বে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দর দ য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্কের উদ্বেগজনক ধারা চলছে
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যে অশুল্ক বাধার ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের দুই দেশের জন্য একটি উদ্বেগজনক ধারা চলছে। সম্প্রতি ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চার ধরনের পাটজাত পণ্যের ক্ষেত্রে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির পরিবর্তে শুধু মুম্বাইয়ের নাভোসেভা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ৯৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি স্থলপথেই ভারতে যায়। এই নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু খরচ বাড়াবে না, বরং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় ধরনের লজিস্টিক জটিলতাও তৈরি করবে। যদিও ভারত এসব সিদ্ধান্তকে নিয়মকানুন বা গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে দেখাতে পারে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞার হঠাৎ প্রয়োগ ও পুনরাবৃত্তি একটি কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিষয়ে সন্দেহ তৈরি করে।
তবে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও একই পথে হাঁটছে। ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় সুতা ও কয়েকটি পণ্যের আমদানিতে স্থলবন্দর দিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, অবকাঠামোর অভাব ও সীমিত বাণিজ্য কার্যক্রম। এসব পদক্ষেপকে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা ও নিয়ন্ত্রণমূলক প্রবণতার অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এসবই একধরনের রক্ষণশীল অর্থনৈতিক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা পারস্পরিক আস্থা ও দ্বিপক্ষীয় স্থিতিশীল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এত দিন ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে পরিচিত ভারত ও বাংলাদেশ এখন বাণিজ্য সমস্যা সমাধানে স্বচ্ছ সংলাপের পরিবর্তে একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও অশুল্ক বাধার দিকে ঝুঁকছে। এসব পদক্ষেপ শুধু দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষতি করছে না (যেখানে ভারতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারসাম্যহীনভাবে বেশি রপ্তানি হয়। ভারত থেকে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো), বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির সম্ভাবনাও ধ্বংস করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বাড়ছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা দরকার। এর পাশাপাশি সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণ না করা। এসব সরবরাহ চেইন ভেঙে দেয় এবং শিল্পোন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে।
বর্তমানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করা উচিত, যা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে মুক্ত। বাণিজ্যকে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহনশীলতার মাধ্যম হিসেবে দেখা, চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার নয়। দুই সরকারকেই কাঠামোগত আলোচনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে, অশুল্ক বাধা–সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় খুঁজে বের করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ সহজতর করতে প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। রাজনৈতিক মতভেদ যেন বৃহত্তর অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুফলকে ছাপিয়ে না যায়। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অনেকটাই এ সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে।