প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালু করবে রাবি প্রশাসন
Published: 29th, June 2025 GMT
প্রায় ১৭ হাজার দুর্লভ প্রত্ননিদর্শনসমৃদ্ধ ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর পরিচালনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ না থাকায় গবেষণার অভাবে দেশের প্রথম জাদুঘরের প্রত্নসম্পদ হারিয়ে যেতে বসেছে। এতে করে বরেন্দ্র অঞ্চলের সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
ইতোমধ্যে নীতিগত সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাবি প্রশাসন এবং খুব শিগগিরই ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে।
শনিবার (২৮ জুন) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
জাবিতে ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে রাবি শিক্ষার্থী আটক
৯ দফা দাবিতে রাবির প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের নতুন পরিচালক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমানও এ উদ্যোগের কথা জানান।
তিনি বলেন, “প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতেই প্রথম হওয়া উচিত ছিল। কারণ উত্তরবঙ্গে যেভাবে আর্টিফ্যাক্ট পাওয়া যাচ্ছে এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—এতো বড় মিউজিয়াম তো আর কোথাও নেই। আমরা আশা করছি দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তখন একটি বিভাগ আলাদাভাবে গবেষণা থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে পারবে।”
১৯৯২ সালে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যাত্রা শুরু করে। ২০১৩ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও খোলা হয় বিভাগটি। এছাড়া ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ‘ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব’ নামে বিভাগ রয়েছে, কিন্তু রাবিতে নেই। গবেষণা, সংরক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, “দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি রাজশাহীতে অবস্থিত। অথচ এটিকে ঘিরে গবেষণার জন্য কোনো স্বতন্ত্র বিভাগ ছিল না, এটি দুঃখজনক। প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এই বিভাগ চালু হলে প্রত্নসম্পদ গবেষণা, সংরক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ঐতিহ্যবাহী জাদুঘর আছে এবং এ অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন মিউজিয়াম এটি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এখানে কোনো আর্কিওলজি বিভাগ নেই।”
তিনি বলেন, “জাবি, বেরোবি ও কুবিতে এ বিভাগ রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে এবং আমাদের বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামের পাশে একটা জমি আছে, যেখানে আমরা উদ্যোগ নিলে মনে করি এটা সম্ভব।”
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালুর বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, “বাংলার প্রথম জাদুঘর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ চালু করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বসহ চিন্তা করছি। আমাদের নীতিগত সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, জাদুঘরের নিদর্শন সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের কাজ চলছে। এসব প্রস্তুতি শেষ হলে ইউজিসির অনুমতি নিয়ে খুব শিগগিরই বিভাগ খোলার চেষ্টা করা হবে।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, “গবেষণাভিত্তিক একটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এটি সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া, তবুও আমরা আশাবাদী। উত্তরবঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব গবেষণার জন্য এটি একটি উপযুক্ত স্থান। একটি সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজশাহীতে অবশ্যই এই বিভাগ থাকা উচিত। আমরা আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চালু হওয়া স্বতন্ত্র বিভাগ হলো ‘ফারসি ভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগ। এটি ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর ন দ র উপ চ র য আম দ র জ দ ঘর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিপ্লব বদলালেন উত্তরবঙ্গের হালকা প্রকৌশলশিল্প
বগুড়ার প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী বিপ্লব করোনা মহামারির সময় তৈরি করেন অক্সিজেন কনসেনট্রেটর। বগুড়া থেকে বিধিনিষেধের সময়ে রাত জেগে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন তিনি। দেশি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নিজের মেধা দিয়ে এক মাসেই বহনযোগ্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর তৈরি করেন মো. মাহমুদুন্নবী। এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে ঘরের বাতাস থেকেই প্রতি ঘণ্টায় ৩০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি করা যায়। এটি ব্যবহারও বেশ সহজ। একটি রেগুলেটরের মাধ্যমে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে যন্ত্রটি। ৩০ কেজি ওজনের কম এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যেকোনো হাসপাতালে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। খরচ পড়েছে ৭০ হাজার টাকা।
১৯৯৬ সালে বগুড়া পলিটেকনিকে শিক্ষকতার পাশাপাশি মো. মাহমুদুন্নবী রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপ গড়ে তোলেন। তার ওয়ার্কশপেই তিনি বন্যা-পূর্ব সতর্কতার একটি বিশেষ যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই যন্ত্র ব্যাটারি ও সৌর প্যানেলে চলে। মাহমুদুন্নবীর বন্যা-পূর্ব সতর্কীকরণ যন্ত্র ২০১৮ সালে বগুড়ায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবকের পুরস্কার পায়। মাহমুদুন্নবীর অন্যান্য উদ্ভাবনের মধ্যে বেবি ইউরিন অ্যালার্ম বেড, রোগীর শরীরে পুশ করার স্যালাইন অ্যালার্ম সিস্টেম, জলজ প্রাণীর জন্য পানিতে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ওয়াটার অ্যারোয়েটর, করোনা প্রতিরোধে অটোমেটিক স্যানিটাইজিং মেশিন, প্যারালাইজড রোগীর ব্যবহারের জন্য অটোমেটিক হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ডিজিটাল ডোর লক, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেমের জন্য লক রিং টুলস অন্যতম। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডে (আইসিইউ) ব্যবহারের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন প্রস্তুত করছেন তিনি।
ধীরে ধীরে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বড় ওয়ার্কশপ হিসেবে গড়ে তুলেছেন কাঁকন রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং ওয়ার্কশপকে। মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘এখন উত্তরবঙ্গে অনেক বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সমস্যা ও ত্রুটি মেরামতের জন্য বিদেশ থেকেও প্রকৌশলী আনা হতো। সেই সমস্যা সমাধানে আমরা স্থানীয় প্রকৌশলীরা কাজ করছি।’ আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২৩–এ মো. মাহমুদুন্নবী সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছেন।