রাঙ্গুনিয়ায় দশ মাসে ৮ খুন, আসামিরা বহাল তবিয়তে
Published: 13th, July 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গত ১০ মাসে অন্তত আটটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড যেমন আছে, তেমনি আছে চোর সন্দেহে, পূর্বশত্রুতার জেরে মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা। কিন্তু একটি ছাড়া বাকি হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনো আসামিকে পুলিশ এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। খুনের আসামিরা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাগুলোর তদন্ত চলছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলায় সবচেয়ে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে ১০ জুলাই পদুয়া ইউনিয়নের মোবারক আলী টিলা এলাকায়। মোহাম্মদ রাসেল (৩৫) নামে এক যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ধানক্ষেত থেকে রাসেলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রাসেল মোবারক আলী টিলা এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন এবং এক বছর আগে দেশে ফেরেন। এ ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে ২০ জুন উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের কাইন্দারকুল এলাকায় গুলিতে নিহত হন শিবু মারমা (৩০)। পাহাড় থেকে লেবু এনে বিক্রি করতেন শিবু। বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনাতেও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। গত ৬ জুন গোডাউন বাজারে শ্বশুর ওসমান গনিকে (৫০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় কেবল তার জামাতা মোহাম্মদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২৬ মার্চ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম তালুকদার (৭০)। এর আগের দিন ২৫ মার্চ সরফভাটার মীরের খীল বাজারে নিজের দোকানে কুপিয়ে আহত করা হয়েছিল তাঁকে। নিহত নুরুল ইসলাম সরফভাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। তবে এ ঘটনায় এখনও কেউ মামলা করেনি এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ।
গত বছরের ১৯ আগস্ট রাঙ্গুনিয়ায় ইমরান নবী ওরফে জুয়েল (১৬) নামে এক নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই মামলার একমাত্র আসামি মো.
গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ইসলামিয়াপাড়া এলাকায় চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় রবিউল হোসেন রুবেল (৩০) নামে এক যুবককে। বাড়ি চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম হলেও দীর্ঘদিন ধরে রুবেল লালানগর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। পেশায় তিনি ছিলেন দিনমজুর। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী অজ্ঞতা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর হত য ক ণ ড এক য বকক ম হ ম মদ এ ঘটন য় এল ক য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীতে আরও গ্রাম প্লাবিত, দুর্ভোগ
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এ নিয়ে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। এদিকে নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিন বৃষ্টি ঝরে গতকাল থেমেছে। ধীরে নামছে পানি। তবে জনদুর্ভোগ কাটেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফেনীতে নতুন করে প্লাবিত গ্রামগুলোর মধ্যে চারটি ফেনী সদর উপজেলা, পাঁচটি ছাগলনাইয়া উপজেলা ও একটি দাগনভূঞা উপজেলার। তবে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে একজনের মুত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি দৌলতপুর বন্দুয়ার বাসিন্দা।
কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেও এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু কিছু যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল শুরু করেছে।
জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ বাসিন্দা অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তঃসত্ত্বা, অসুস্থসহ ১৮ জনকে সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার করেছেন। ফুলগাজী ও পরশুরামের পানি নামতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। তবে নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামগুলো। পানিতে তলিয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। চরম ভোগান্তিতে স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের দুটি ও মোটবি ইউনিয়নের দুটি গ্রাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম এবং দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশেও বন্যার পানি বেড়ে গিয়ে একটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ভাঙা স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ হলে দ্রুত বেড়িবাঁধ মেরামত করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১১২ গ্রামের মানুষের জন্য সব অংশীজনের সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ঘোষিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ধীরে নামছে পানি
শুক্রবার বিকেলে নোয়াখালী জেলা শহরের সেন্ট্রাল রোড, আল ফারুক একাডেমি, হাউজিং এস্ট্রেট, হাউজিং বালুর মাঠ আবাসিক এলাকা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত সড়ক, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও নতুন বাসস্ট্যান্ডের জেলখানা সড়কে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা কমতে শুরু করেছে। তবে সড়কগুলোতে এখনও পানি আছে। ড্রেনের ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে লোকজন। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আশপাশের অনেক বাড়িঘরে এখনও পানি।
পৌরসভার টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী জেহাদ হোসেন বলেন, ‘টাউন হল-সরকারি আবাসিক এলাকা সড়কটি অবহেলিত। ড্রেনগুলো বহু বছর পরিষ্কার না করায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানি জমে।’ লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘বসতঘরে পানি ঢুকেছে। পাঁচ দিন ধরে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। পানির মধ্যেই রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে।’
টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর ফসলি জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নোয়াখালী কার্যালয় সূত্র জানায়, বৃষ্টির পানিতে ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন ধানের বীজতলা ও শাকসবজির মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে।
সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার দেড় একর জমির আউশ ধান, বস্তায় চাষ করা ১০০ বস্তা আদা, পেঁপে বাগান, ৩০ শতক জমির আমন বীজতলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি কমে যাওয়ায় লোকজন বাড়ি ফিরছেন। গাবুয়া খাল ও নোয়াখালী খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলেই খনন কাজ শুরু হবে।
এদিকে সারাদেশে আরও ১০ দিন বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া অথবা বজ্রসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
(সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতার পাঠানো তথ্য)