দলীয় শৃঙ্খলা–পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতরুজ্জামান পঞ্চমবারের মতো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। তবে নানা সময় সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে টক শো কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে তিনি আলোচনায় ছিলেন।

সম্প্রতি নিজ এলাকার রাজনীতির মাঠে আলোচনায় ফিরেছেন আখতরুজ্জামান। বিএনপি থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি ও দলে ফিরতে চাওয়ার আগ্রহ তাঁকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। তিনি এরই মধ্যে কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-২ থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জালাল উদ্দিনের পক্ষে কাজ করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর থেকে আলোচনার শুরু।

আখতারুজ্জামান বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাড়ি কটিয়াদী। কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন আসনটি কেবল কটিয়াদী উপজেলা নিয়েই ছিল। এখন এই আসনে যুক্ত করা হয়েছে পাকুন্দিয়া উপজেলাকেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান পুলিশের সাবেক আইজি নৌকার নূর মোহাম্মদের কাছে। তিনি জেলা বিএনপিরও সভাপতি ছিলেন। তিনি স্পষ্টবাদী ও একরোখা স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত। প্রতিবারই টক শোতে দলের বিরুদ্ধে যায়, এমন কথা বলে কেন্দ্রের রোষানলে পড়েন এবং দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে কটিয়াদী উপজেলার গচিহাটা এলাকায় আখতারুজ্জামান সভা করেন। ওই সভায় অনেক মানুষ অংশ নেন। সেখানে উপস্থিত জনতা আখতারুজ্জামানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জোরালো দাবি তোলেন। বক্তারাও একই দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।

এ ক্ষেত্রে বক্তাদের যুক্তি, আখতারুজ্জামান বারবার বহিষ্কৃত হন সত্য, তবে রাজনীতি ছাড়েননি। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছেন ও সুকিচিৎসার দাবি তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আখতারুজ্জামানকে দলে ফেরানো গেলে দলীয় প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। এ জন্য বক্তারা খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার সুদৃষ্টি কামনা করেন।

সভায় আখতারুজ্জামান সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন। শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। বক্তব্যে নির্বাচনকে ঘরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। বর্তমান রাজনীতিকে তিনি নতুন প্রজন্মের রাজনীতি হিসেবে দেখেন। তাঁর রাজনীতি দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য জানিয়ে শেষে তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়ার নাম উচ্চারণ করে স্লোগান দেন।

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুল রহমান একজন। আখতারুজ্জামানের প্রসঙ্গ উঠতেই বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। দলের নিয়ম–নীতি অনুসরণ করে চলা আমার দায়িত্ব। আখতারুজ্জামান এখন আমাদের দলের কেউ নন। সুতরাং তাঁকে নিয়ে অতিরিক্ত ভাবার কিছু নেই।’ দলে ফেরা না–ফেরা নিয়েও মন্তব্য নেই বলে জানান আরিফুর।

দলের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর পরপর আখতারুজ্জমান বহিষ্কৃত হবেন, নেতা–কর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা আগে থেকেই রয়েছে। শুধু বহিষ্কার নয়, আবার তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, সেটিও বিশ্বাস তাঁদের। ফলে এবার নতুন করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি সামনে আসার পর ইস্যুটি মাত্রা পায়। দলের অনেক নেতার মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি করে। বিশেষ করে রাজনীতি এখন নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। নতুন নতুন বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে হঠাৎ আখতারুজ্জামানের নতুন বার্তা কেবল আঞ্চলিক রাজনীতি নয়, কেন্দ্রীয় রাজনীতির দুরদর্শিতার প্রকাশ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ।

দলে ফেরানো না গেলে দলীয় প্রার্থীর জয় পেতে সমস্যা হবে আখতারুজ্জামানের সমর্থকদের এমন দাবি প্রসঙ্গে দলটির কটিয়াদী উপজেলা বিএনপি সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানের ভাষ্য, বিএনপি একটি বড় দল। দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত, কর্মী-সমর্থক অনেক। আখতারুজ্জামানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির চাওয়া বাস্তবায়িত না হলে দলীয় প্রার্থীর সমস্যা হওয়ার কিছু নেই।

দলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি দলে নেই; কিন্তু রাজনীতিতে আছি। মানুষজন চায় আমি আবার দলে ফিরি।’ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে দলের সাড়া না পেলে কী করবেন—এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর দলীয় পরিচয়ে রাজনীতি করার সুযোগ না পেলে ব্যক্তি পরিচয়ে চালিয়ে যাব।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন আখতারুজ্জামান। প্রার্থী কি আপনার সহযোগিতা চেয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কীভাবে যোগাযোগ রাখবেন? আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তিনি (জালাল উদ্দিন) কি মনোনয়ন হারাবেন?’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র জ জ ম ন র ব এনপ র র জন ত দল য় প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাশেজে বাংলাদেশের আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা

টিভির স্ক্রিনে একবার দেখাল শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদকে। পার্থে টিভি আম্পায়ারের কক্ষে খুব মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিনে চোখ সেঁটে আছেন। দৃশ্যটি দেখে বাংলাদেশের যেকোনো ক্রিকেটপ্রেমীর গর্ব হতে পারে। অ্যাশেজে বাংলাদেশি আম্পায়ার!

শরফুদ্দৌলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক দিন ধরেই এমন গর্বিত করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে জায়গা করে নেন আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি—দুই সংস্করণের বিশ্বকাপেই মাঠের আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন এ বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। তবে শরফুদ্দৌলা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবার নজরে আসেন সম্ভবত গত বছরের ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে।

সেবার মেলবোর্নে চতুর্থ টেস্টে টিভি আম্পায়ার হিসেবে প্রযুক্তি এড়িয়ে নিজের চোখে যা দেখেছেন, সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন শরফুদ্দৌলা। তখন তাঁর সেই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন সাইমন টফেল, রিকি পন্টিং, রবি শাস্ত্রী ও মাইকেল ভন।

গত ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজে বুমরা ও কনস্টাসের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা করেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ