আমরা আর তার স্কুল—এই ছিল তার জীবন: মাইলস্টোনের শিক্ষক মাসুকা বেগমের বড় বোন
Published: 26th, July 2025 GMT
দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেক দিন ধরেই আমি অসুস্থ। চোখেও কিছুটা কম দেখি। (মাসুকা বেগম) নিপু নিজের ব্যস্ততার মধ্যেও নিয়মিত আমার খোঁজ রাখত। গত শুক্রবারও ওর সঙ্গে কথা হলো। দুই ঘণ্টা ধরে কত কী নিয়ে যে আলাপ করল বোনটা—আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিল, ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিল আরও কত কী। সারাক্ষণ আমাকে নিয়েই ওর যত চিন্তা। নিজের বলতে বোনটার তো কিছু ছিল না, আমার ছেলেমেয়ে, সংসার নিয়েই চিন্তা। আমার তিন সন্তানও খালামণি বলতে পাগল। সে যেন ছিল তাদের আরেক মা।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে আমার কলেজশিক্ষক মেয়ের কাছে শুনি নিপুদের স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তখনো কিন্তু জানি না যে আমার বোনটাও আহত হয়েছে। আমার স্বামী-সন্তান নিজেদের মতো করে নিপুর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সময় যত গড়াচ্ছিল, তাদের আচরণ দেখে বুঝতে পারছিলাম—আমার কলিজার টুকরাটার কিছু একটা হয়েছে, ওরা লুকাতে চাচ্ছে। রাত সাড়ে আটটা কি নয়টার দিকে জানতে পারি, নিপু আহত হয়েছে। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এরপর তো মৃত্যুর সংবাদই পেলাম।
আমাদের ছোট বোনআমাদের আদি বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে চিলোকুট গ্রামে। তবে বেড়ে উঠেছি শহরের মেড্ডা সবুজবাগ এলাকায়। বাবা (সিদ্দিক আহমেদ) এখনো সেখানেই থাকেন। আমাদের তিন ভাইবোনের মধ্যে নিপু সবার ছোট। ওর সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য আট বছর।
আমার অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের দিনের কথা এখনো মনে আছে। আমি খুব কাঁদছিলাম। নিপুর বয়স তখন ৫ কি ৬ বছর। আমার দেখাদেখি সে–ও কাঁদছিল। এরপর শ্বশুরবাড়িতে এলাম। কিন্তু সংসার কিছু বুঝি না। দেখা যেত বাবার বাড়িতেই তখন বেশি থাকতাম। আমি বাড়ি থাকলে ওর আর আনন্দের সীমা থাকত না।
আমাদের আদরের বোন ছিল নিপু। ছোটবেলায় নিপু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ত, আমরা কান্নাকাটি শুরু করে দিতাম।
আরও পড়ুনএ সপ্তাহে কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব এবং চালকের আসনে থাকবেন কারা৭ ঘণ্টা আগেউত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চলছে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
গিল-সুন্দর-জাদেজার সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের সমান এক ড্র
ম্যান্ডেটরি শেষ এক ঘণ্টার খেলা যখন শুরু হবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এগিয়ে গেলেন ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যানের দিকে। উদ্দেশ্য ড্র মেনে নিয়ে করমর্দন করা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরিয়ে দিলেন স্টোকসকে। না, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না জাদেজা-সুন্দরের ভারতের। ৮৯ ও ৮০ রানে দাঁড়ানো দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির এত কাছে থেকে ফিরতে চাননি বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন স্টোকসের প্রস্তাব।
এরপর যা হলো সেটিকে হাস্যকর বলাই ভালো। প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা মাঠে বল করলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো অনিয়মিত স্পিনাররা। আর জাদেজা ও সুন্দর মেরেকেটে দ্রুতই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। প্রথমে সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন জাদেজাই। ব্রুককে ছক্কা মেরেই পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা সুন্দর তিন অঙ্ক ছুঁলেন ১৫ বল পর ব্রুকের বলেই ২ রান নিয়ে। এরপরই দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়ে ড্র মেনে মাঠ ছাড়েন। আর তাতে ওভালে সিরিজের শেষ ম্যাচটাই হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী। চার ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
শেষটা অদ্ভুতুড়ে হলেও জাদেজা ও সুন্দরের অবশ্য সেঞ্চুরি পাওনা হয়েই গিয়েছিল। সকালে লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিলের বিদায়ের পর শেষ দুই সেশনে কী প্রতিরোধটাই গড়েছেন দুজন। ইনিংস হারের শঙ্কা উড়িয়ে ম্যাচটা ড্র করে ভারতকে সিরিজে টিকিয়ে রাখার পুরস্কারই তো সেঞ্চুরিতে পেলেন দুজন।
ম্যাচটা যখন শেষ হলো ভারতের স্কোর ৪২৫/৪। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চেয়ে দলটি এগিয়ে গিয়েছিল ১১৪ রানে। স্টোকস যখন প্রথমবার ড্রর প্রস্তাব দিলেন তখন দলটি এগিয়ে ছিল ৭৫ রানে। পঞ্চম উইকেটে ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া জাদেজা ১৮৫ বলে ১০৭ ও সুন্দর ২০৬ বলে ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
আজ শেষ দিনটা ভারত শুরু করে ২ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে। ৩১১ রানের ঘাটতি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলটি গতকাল শূন্য রানেই প্রথম ২ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কায় পড়ে। তবে গিল-রাহুল সেদিন আর উইকেট পড়তে দেননি। দলটি তৃতীয় উইকেট হারায় ১৮৮ রানে। ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে এলবিডব্লু করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির পাননি রাহুল। তবে ১৮৮ রানের জুটিতে তাঁর সঙ্গী শুবমান গিল সেঞ্চুরি তুলেই ফিরেছেন, করেছেন ১০৩ রান। এই সিরিজে যা ভারত অধিনায়কের চতুর্থ সেঞ্চুরি। তাতে এক সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে দুই কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে বসেছেন গিল।
গিল ফেরেন ২২২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ভারত তখন পিছিয়ে ৮৯ রানে। এরপর আর উইকেট হারায়নি ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ৩৫৮ ও ১৪৩ ওভারে ৪২৫/৪ (গিল ১০৩, জাদেজা ১০৭*, সুন্দর ১০১, রাহুল ৯০; ওকস ২/৬৭, স্টোকস ১/৩৩, আর্চার ১/৭৮)।ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৬৯।
ফল: ড্র
সিরিজ: ৫-ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১-এ এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন স্টোকস।