আদালতে রাজ্জাকদের প্রতি দুয়োধ্বনি, ‘তোরা জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস...’
Published: 27th, July 2025 GMT
ঘড়ির কাঁটায় তখন চারটা। পুলিশের একটি গাড়ি এসে থামে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে। প্রথমে পুলিশের গাড়ি থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদকে নামিয়ে সিএমএম আদালতের সিঁড়ির কাছে নেওয়া হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখামাত্র আবদুর রাজ্জাক তাঁর ডান হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন।
আর রাজ্জাকের পিঠে মুখ ঢেকে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না), আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।
রাজ্জাকসহ চারজনকে যখন নিচতলার সিঁড়ি থেকে থেকে দুইতলায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন সাধারণ আইনজীবীসহ অনেকে তাঁদের দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোনো কোনো আইনজীবী তাঁদের মারধরের চেষ্টাও করেন।
এ সময় আবদুর রাজ্জাক, ইব্রাহিম, সিয়াম ও সাদাব পুলিশের পিঠের ওপর মুখ রাখার চেষ্টা করেন, যাতে তাঁদের মুখ দেখা না যায়। যখন তাঁরা পুলিশ সদস্যদের পিঠে মুখ রাখতে পারছিলেন না, তখন হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন।
এ সময় সাধারণ মানুষসহ আইনজীবীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাকের উদ্দেশে সমস্বরে বলতে থাকেন, ‘এই চাঁদাবাজ, এই চাঁদাবাজ.
রাজ্জাকসহ অন্যরা যখন নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলেন, তখন কয়েকজন আইনজীবী একযোগে তাঁদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘এই মুখ ঢেকে রাখিস কেন...?’ এ সময় একজন আইনজীবী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘তোরা জুলাই চেতনা বিক্রি করে চাঁদাবাজি করেছিস...।’
রাজ্জাকদের হাঁটিয়ে যখন আদালত ভবনের প্রথম তলা থেকে চারতলায় নেওয়া হয়, তখন সাধারণ আইনজীবীদের কেউ কেউ তাদের উদ্দেশে নানা কটূক্তি করতে থাকেন।
ঢাকার সিএমএম আদালতের চারতলায় যখন পুলিশ রাজ্জাকদের কাঠগড়ায় নিয়ে যায়, তখনো ৩০ থেকে ৪০ জন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকসহ চারজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের যখন কাঠগড়ায় তোলা হয়, তখনো রাজ্জাকসহ অন্যরা নিজেদের হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আইনজীবীরা এজলাসকক্ষে এসেও রাজ্জাকদের চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে শাস্তি দাবি করেন।
মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে রিয়াদ। আজ রোববার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র র জ জ ক র জ জ কসহ আইনজ ব স এমএম
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন।
এর আগে ‘গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তার ২৭৭ জন কারাগারে, রয়েছে ৯ শিশুও’ শিরোনামে ২০ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের শিশু আইন ও শিশু অধিকার সনদ বিবেচনায় নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ২১ জুলাই রিটটি করেন। রিট আবেদনকারী দুই আইনজীবী হলেন উৎপল বিশ্বাস ও আবেদা গুলরুখ। আজ আদালতে রিটের পক্ষে তাঁরা নিজেরাই শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী।
হাইকোর্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে বিবাদীদের প্রতিবেদন দিতে বলেছেন বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস ও আবেদা গুলরুখ।
আইনজীবী আবেদা গুলরুখ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তারের যে ঘটনা, তাতে ৯ শিশু গ্রেপ্তার—এমন খবর ২০ জুলাই পাই। এর ভিত্তিতে শিশুদের আটক ও বিচারের সম্মুখীন করার ক্ষেত্রে ২০১৩ সালের শিশু আইন যেহেতু অনুসরণ করছে না, এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রুল ও নির্দেশনা চাওয়া হয়। রুল পেয়েছি। প্রতিবেদন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে বিবাদীদের। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলার যে পুলিশ সুপার, সবাই মিলে একটা তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দেবে।’
‘গোপালগঞ্জে গ্রেপ্তার ২৭৭ জন কারাগারে, রয়েছে ৯ শিশুও’ শিরোনামে আসা প্রতিবেদন সূত্রে ২০১৩ সালের শিশু আইন ও শিশু অধিকার সনদ বিবেচনায় নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইনসচিব এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারীরা।
আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট রুল দিয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। বিষয়টি আগামী ৫ নভেম্বর আবার কার্যতালিকায় আসবে।