ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের জনপ্রিয় তিন মডেলের মনিটরের মূল্য কমিয়ে এনেছে। মডেলগুলো হলো- এসিসি ব্র্যান্ডের ডব্লিউডিএফ১৩সি২২আই, সিনেক্সা ব্র্যান্ডের ডব্লিউডি২৩৮আই১১ এবং সিনেডি ব্র্যান্ডের ডব্লিউডি২৭জিআই০৬। এরফলে গ্রাহকরা এখন আগের চেয়ে আরও সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত স্পেসিফিকেশনের মনিটরগুলো কিনতে পারবেন।

এটি কোনো সীমিত সময়ের অফার নয় বরং এখন থেকেই নতুন সাশ্রয়ী মূল্যে এই মনিটর মডেলগুলো ওয়ালটনের প্লাজা, অনুমোদিত ডিলার আউটলেট এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।

প্রাণবন্ত ভিজ্যুয়াল, স্টাইলিশ ডিজাইন এবং ব্যবহারবান্ধব ফিচারে সমৃদ্ধ ওয়ালটনের এই মনিটরগুলো অফিসিয়াল কাজ, অনলাইন ক্লাস, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন ও গেমিং পারফরম্যান্সের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তিসঙ্গী।

আরো পড়ুন:

এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ

বিমান বিধ্বস্ত: দেশজুড়ে ওয়ালটন প্লাজায় মিলাদ ও দোয়া

এসিসি ব্র্যান্ডের ডব্লিউডিএফ১৩সি২২আই মডেলটি বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ৮,৯৯৫ টাকায়, যা পূর্বে ছিল ৯,২৫০ টাকা। এই মনিটরে রয়েছে ১০০ হার্জ রিফ্রেশ রেট, ৫ এমএস রেসপন্স টাইম, এইচডিআর সাপোর্ট এবং ৮৫% এনটিএসসি কালার গ্যামট। এতে ২টি বিল্ট-ইন ৩ ওয়াট স্পিকার থাকায় আলাদা সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন পড়ে না। লো ব্লু লাইট ও ফ্লিকার ফ্রি টেকনোলজি চোখের আরাম নিশ্চিত করে। এইচডিএমআই, ভিজিএ, ভিইএসএ মাউন্ট এবং ওয়াই বা টি শেইপ স্ট্যান্ডসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের কানেক্টিভিটি ও ফিচার থাকায় এটি একটি পরিপূর্ণ সলিউশন।

সিনেক্সা ব্র্যান্ডের ডব্লিউডি২৩৮আই১১ মডেলটির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫,৭৫০ টাকা, যা পূর্বে ছিল ১৭,৭৫০ টাকা। ২৩.

৮ ইঞ্চির আইপিএস প্যানেলের এই মনিটরটিতে রয়েছে ৭৫ হার্জ রিফ্রেশ রেট, এইচডিআর ও ফ্রিসিঙ্ক সাপোর্ট, বিল্ট-ইন স্পিকার এবং ইউএসবি ৩.০ সহ একাধিক আধুনিক পোর্ট সুবিধা। ৩ দিকে ফ্রেমলেস ডিজাইন, অ্যাডজাস্টেবল স্ট্যান্ড, পিভট ও হাইট অ্যাডজাস্টমেন্ট ফিচার এটিকে আরও ব্যবহারবান্ধব করে তুলেছে।

সিনেডি ব্র্যান্ডের ডব্লিউডি২৭জিআই০৬ মডেলের হাই পারফরমেন্স গেমিং মনিটরটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২,৭৫০ টাকা যা পূর্বে ছিল ৩৩,৭৫০ টাকা। ২৭ ইঞ্চির কিউএইচডি আইপিএস ডিসপ্লে সমৃদ্ধ এই মনিটরটিতে রয়েছে ১৬৫ হার্জ (ডিপি) ও ১৪৪ হার্জ (এইচডিএমআই) রিফ্রেশ রেট, ১ এমএস রেসপন্স টাইম, এইচডিআর সাপোর্ট, এবং এনটিএসসি ৯৩% ও অ্যাডব আরজিবি ৯৫% কালার গ্যামট। এতে আছে ২টি ২ ওয়াটের বিল্ট-ইন স্পিকার, ফ্লিকার ফ্রি ও লো ব্লু লাইট টেকনোলজি, তিন দিকে ফ্রেমলেস ডিজাইন এবং ব্যাকলাইটিং সুবিধা। কানেক্টিভিটির জন্য রয়েছে এইচডিএমআই ২.০ ও ডিপি ১.৪ পোর্ট, অডিও আউট এবং ভিইএসএ মাউন্ট সাপোর্ট। অত্যাধুনিক অ্যাডজাস্টেবল স্ট্যান্ডটি হাইট, টিল্ট, সুইভেল ও পিভট সাপোর্ট করে- যা গেমার ও প্রফেশনাল ইউজারদের জন্য একে করে তোলে আদর্শ।

ওয়ালটন কম্পিউটারের চিফ বিজনেস অফিসার তৌহিদুর রহমান রাদ বলেন, “বর্তমান প্রযুক্তি-নির্ভর সময়ে গ্রাহকরা যাতে সহজেই কম্পিউটারের মতো অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস ক্রয় করতে পারেন, সেজন্য ওয়ালটনের জনপ্রিয় মনিটরগুলোর মূল্যহ্রাস করা হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য তুলে দেয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ক্রেতাসুবিধাও দিয়ে আসছে ওয়ালটন। বছরব্যাপী ক্রেতাদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।”

এসিসি ডব্লিউডিএফ১৩সি২২আই, সিনেক্সা ডব্লিউডি২৩৮আই১১ এবং সিনেডি ডব্লিউডি২৭জিআই০৬ মডেলের মনিটরগুলো হ্রাসকৃত মূল্যে এখন পাওয়া যাচ্ছে ওয়ালটনের সকল প্লাজা, অনুমোদিত ডিলার আউটলেট এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://waltonplaza.com.bd/global-product/list/monitor?uid=C-LMREG5&type=category&from=megamenu&isIgnoreFilterOption=false)। প্রতিটি মডেলের সঙ্গে থাকছে নির্ধারিত ওয়ারেন্টি সুবিধা ও দেশব্যাপী দ্রুততম আফটার-সেলস সার্ভিসের নিশ্চয়তা, যা গ্রাহকদের দিচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী ও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি অভিজ্ঞতা।

ঢাকা/অগাস্টিন সুজন/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৭৫০ ট ক ড জ ইন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের রোডম্যাপে কবে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মাস দেড়েক আগে বলা হয়েছিল, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। এ দেশে গত ১৫ বছরে সতি্যকার অর্থে কোনো নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন না থাকার কারণেই স্বৈরাচারী শাসন চেপে বসতে পেরেছিল।

নাগরিক কোয়ালিশনও অনেক আগেই নির্বাচনের জন্য ‘ফেব্রুয়ারি রোডম্যাপ’ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার থেকে এখনো কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে জোর গুজব উঠেছে, আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু তারিখ বললেই কি নির্বাচন হয়?

২.

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা অনুযায়ী আমরা কি আদৌ কিছু শুরু করতে পেরেছি, নাকি আবারও সেই পুরোনো অভ্যাস, অর্থাৎ সময়ক্ষেপণ, সন্দেহ আর পরস্পরবিরোধী বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে? বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১৩ জুন লন্ডনে তারেক রহমান ও সরকারপ্রধানের বৈঠক হলেও এরপর আর কোনো গঠনমূলক অগ্রগতি নেই।

অনেকেই ভাবছেন, নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন মানে হাতে তেমন সময় নেই। বাস্তবতা হলো, সরকার যদি সত্যিই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বড় সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করতে হবে। আর তা করতে হলে এখন থেকেই খুব জোরেশোরে কাজ শুরু করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানেই নিয়ন্ত্রিত প্রহসন। এ জন্য আমাদের হাতে যেসব কাজ রয়েছে: 

ক. ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের জন্য জুলাই চার্টার।

খ. নির্বাচন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জন্য ন্যূনতম সংস্কারসহ নতুন আইন প্রণয়ন।

গ. ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ।

ঘ. নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতি। এর মধ্যে আছে অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বিশাল ক্রয়াদেশ এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা।

এই কাজগুলো সময়মতো না হলে তারিখ শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা থাকবে; নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে; গণতন্ত্র ফিরবে না। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে তা দেশকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে।

৩.

এ স্থিতাবস্থার প্রথম কারণ ঐকমত্যের ঘাটতি। অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, এনসিপি, জামায়াত—সব পক্ষই পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে সন্দেহের চোখে। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন করলেও এখন তাদের সবার পথ আলাদা। সংস্কার নিয়ে সবার আলাদা মত।

নাগরিক কোয়ালিশনের মূল যেসব প্রস্তাব ছিল, তার মধ্যে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক বণ্টন নিয়ে বিএনপিসহ দু–একটি দল ছাড়া আর সবার মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ দেখা যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একেকজন একেক রকম মত দিচ্ছে।

অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে যদিও সবাই একমত হয়েছে, এরপরও নারী আসনে সরাসরি ভোট নিয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেই। নিরপেক্ষ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো আলোচনা এগোচ্ছে না।

নাগরিক কোয়ালিশনের ৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্যই প্রয়োজনীয় ছিল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আবার তা বিবেচনা করার অনুরোধ রইল।

৪.

এদিকে কোনো রাজনৈতিক দলই নিজেদের দলীয় বা অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কাজ শুরু করেনি। এত সব ডামাডোলে তা হারিয়েই যাচ্ছে। রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে, নতুন রাজনীতির নিজ নিজ দলকে উপযোগী করে পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে।

 এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বললেও প্রশাসন এখনো ‘ধীরে চলো’ নীতিতে আছে। নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তি ও তালিকা হালনাগাদ খুব ধীরগতিতে চলছে।

এই অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে নির্বাচন কমিশন ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করতেই ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা ২০২৪ সালের নির্বাচনের খরচের প্রায় কাছাকাছি। বাজেট বরাদ্দ হলেও কাজে গতি নেই। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আস্থা পাচ্ছে না।

২০২৪ সালের নির্বাচনে পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাড়ে ছয় লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাদের পুলিশ কি প্রস্তুত? গোপালগঞ্জের অবস্থা দেখে এ প্রশ্নের উত্তর মনে হয় সবাই জেনে গেছেন।

পত্রিকায় এসেছে, গাড়ির অভাবে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের প্যাট্রোলিং ব্যাহত হচ্ছে। এই গাড়িগুলো কবে কেনা হবে? ২০২৪ সালে নির্বাচনের জন্য শুধু পুলিশের জন্যই বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। এবার কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটা এখনো জানা যায়নি।

এবার নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি বুথে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি, রাতে পাহারা এবং বিস্ফোরণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা থাকতে হবে। ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি বুথে এই সিসিটিভি ক্যামেরার আয়োজন বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপার।

এ ছাড়া নির্বাচনের জন্য অমোচনীয় কালি থেকে শুরু করে বিশালসংখ্যক স্টেশনারি পণ্য প্রয়োজন হয়, টেন্ডারের মাধ্যমে কিনতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগে। কিন্তু এসবের জন্য এখনো কোনো টেন্ডারের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার হলেও অত্যাবশ্যকীয় এবং সময়সাপেক্ষ।

৫.

এদিকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তাঁদের বিবেচনায় রাখলে দেশের বাইরে প্রায় দুই কোটি ভোটার আছেন। নির্বাচনে কোন পদ্ধতিতে তাঁদের করা যুক্ত হবে কিংবা এত কম সময়ে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, সেটা একটা বড় প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে থাকা আমাদের দূতাবাসগুলোর আরও গতিশীলতা দরকার।

 এদিকে সীমানা নির্ধারণ এখনো ঝুলে আছে। কোন এলাকা কোন আসনে পড়বে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ব্যাপারটি ঠিক না হলে প্রার্থীরা প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে? সীমানা ঠিক না করে নির্বাচনের ঘোড়া ছুটিয়ে লাভ নেই।

প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন মানে প্রায় বছরব্যাপী প্রস্তুতির একটি প্রক্রিয়া। এদিকে ঘোষিত সময় থেকে মাত্র সাত মাস আগে বাংলাদেশে এখনো আইনকানুন আর সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা চলছে।

তবে ব্যয়ের দিক থেকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে যাচ্ছি। ভারতের তুলনায় জনপ্রতি প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। কিন্তু এই খরচ জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছে না।

৬.

আগামী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু দেশের মানুষ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত, চীন—সবাই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। কিন্তু স্থিতিশীলতা মানে শুধু একটি নিয়ম রক্ষার ভোট নয়। সংস্কার আর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে এ নির্বাচনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া কঠিন হবে। আমরা যদি নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান না করি, বাইরের চাপ আরও বাড়বে।

এদিকে মানুষের মধ্যে  হতাশা বাড়ছে। ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সব শ্রেণি–পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। তারা ভেবেছিল, এবার কিছু বদলাবে। কিন্তু এখন দেখছে আবারও সময়ক্ষেপণ আর দোষারোপের রাজনীতি। তাদের যদি আবারও হতাশ করা হয়, তাহলে অনাস্থা আরও গভীর হবে। এটা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর।

এদিকে অর্থনীতিও ঝুলে আছে; নেই বড় কোনো বিনিয়োগ। যে কোটামুক্ত সরকারি চাকরির জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে দৃশ্যমান কোনো কাজ চোখে পড়ছে না। ফলে বেকারত্ব বাড়ছেই।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তবেই নতুন সরকার সংস্কারমুখী বাজেট নিতে পারবে। নতুন বিনিয়োগ আসা, আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) পরবর্তী কিস্তি পাওয়া—সবই এই সংস্কারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু নির্বাচন দেরিতে হলে অর্থনীতিও সংকটে পড়বে।

৭.

সামনে কী হতে পারে? যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয় এবং এ রকম অরাজকতা চলতেই থাকে, তাহলে সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। এতে নতুন করে সংকট তৈরি হবে।

কিন্তু সবচেয়ে বড় ভয়—ক্ষমতার নতুন পুনর্বিন্যাস হবে; গণতন্ত্র ফিরবে না। বিশ্বাসের সংকট আরও প্রকট হবে। সে রকম কিছু হলে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে।

বিগত স্বৈরাচারী সরকার এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা অনেকখানি বদলে ফেলেছে, যার অনেক কিছুই আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমাদের দরকার মানুষের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যা হতে হবে সুষ্ঠু ও অবাধ। আর তার জন্য শুধু সরকার নয়, সব দলকেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

এ রকম অবস্থায় বড় দলগুলোর জন্য একটি সর্বসম্মত ‘রাজনৈতিক নৈতিকতা সনদ’ প্রণয়ন করতে পারে নির্বাচন কমিশন বা নাগরিক সমাজ। এর ভিত্তিতে দলগুলোই ‘কন্ডাক্ট সেল’ করে সরকারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে।

৮.

এখনো কিছু সময় হাতে আছে। আমরা যদি টাইমলাইন নির্ধারণ করে এবং সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করতে না পারি, তাহলে সরকার বদলাবে ঠিকই, কিন্তু পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পাল্টাবে না।

সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যদি রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি হয়, সংবিধান সংস্কারের খসড়া তৈরি হয়, ভোটার তালিকা আর সীমানা নির্ধারণ শেষ হয় এবং সব দল যথাসাধ্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলেই শুধু এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হবে।

বিগত স্বৈরাচারী রেজিম এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তাই একটি নির্বাচনের জন্য আমাদের সবারই দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আর যদি তা না পারি, ইতিহাস আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না।

সুবাইল বিন আলম সদস্য, নাগরিক কোয়ালিশন

[email protected]

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ