দিনে ক্লাস করেন, সন্ধ্যায় ব্যবসা করেন রুবেল
Published: 25th, September 2025 GMT
দিনভর ক্লাস শেষে বিকেলের ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন অন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্রাম নেয় বা আড্ডায় মেতে থাকে, তখন মো. রুবেল হোসেনের শুরু হয় জীবনের আরেক অধ্যায়। হাতে বইখাতা নয়, চামচ, কড়াই আর দোকানের ছোট্ট কাউন্টার।
ক্রেতারা এসে দাঁড়ায়, কেউ পেয়াজু চায়, কেউবা চপ। ক্লান্তি থাকলেও রুবেলের মুখে লেগে থাকে হাসি। কারণ এই হাসির আড়ালে আছে আত্মনির্ভরতার নির্মল আনন্দ, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এক অদম্য প্রত্যয়।
আরো পড়ুন:
যবিপ্রবির শিক্ষার্থীর আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক অর্জন
একাডেমিক অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বেরোবির ৪৭০ শিক্ষার্থী
রুবেল আর কেউ নয়, তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী।
রুবেলের পারিবারিক অবস্থা একেবারে খারাপ নায়। তবুও তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি কাজ করি অর্থের জন্য নয়, আমি কাজ করি নিজের আত্মসম্মানের জন্য। আমি চাই নিজের খরচ নিজে চালাতে, পরিবারকে সাহায্য করতে।” তাই তো তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি চালাচ্ছেন একটি ফাস্টফুডের দোকান।
পড়াশোনার পাশাপাশি খরচ চালানোর জন্য আগে টিউশনি করতেন রুবেল। কিন্তু সেই সামান্য টাকায় নিজের ব্যয়ভার বহন করা ছিল দুঃসাধ্য। তখনই তার মনে হলো, টিউশনির পাশাপাশি আরেকটা কিছু করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই তার ভিতর জন্ম নিল ছোট্ট ফাস্টফুড দোকানের আত্মনির্ভরশীলতার স্বপ্ন।
তবে একা নয়- সেই গল্পের নেপথ্যে আছেন তারই এক বড় ভাই, নাম মিলন। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বলেন, “ভাই আমার জন্য যা করেছেন, তা নিঃস্বার্থভাবে করেছেন। তার প্রতি আমার ভালোবাসা আর দোয়া কখনো ফুরাবে না।”
প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান সামলান রুবেল। কোনো দিন ক্লাস আগে শেষ হলে দোকানও আগে খুলে দেন। টিউশনির সময়টা কাজে লাগান দোকানে। তাই পড়াশোনা ও ব্যবসা দুটিই সমানতালে এগিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি।
যদিও শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি করতে হয় এবং ক্লান্তি আসে, তবে পড়াশোনায় তেমন কোনো ক্ষতি হয় না বলে জানান রুবেল। বরং পড়াশোনার বাইরে এই কাজ তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।
তার ভাষায়, “কোনো কাজই ছোট নয়। এই কাজ করতে গিয়ে আমার আত্মসম্মান নষ্ট হয়নি, বরং অনেক বেড়েছে।”
সহপাঠী ও বন্ধুদের কাছ থেকে পেয়েছেন অকৃত্রিম সমর্থন। কেউ কটু কথা বলেনি, বরং সবাই তাকে উৎসাহ দিয়েছে। শিক্ষকরাও তার এই উদ্যোগকে প্রশংসার চোখে দেখছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখনো বিশেষ কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি তিনি।
দোকান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজের খরচ সামলানোর পাশাপাশি পরিবারকেও কিছুটা সাহায্য করতে পারেন তিনি। এতে অর্থনৈতিক চাপ অনেকটাই কমেছে।
তবে রুবেলের চোখ শুধু এই দোকানের চার দেয়ালে আটকে নেই। তার বড় স্বপ্ন- একজন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। পাশাপাশি সুযোগ পেলে কৃষি নিয়েও কাজ করার ইচ্ছে আছে বলে জানান রুবেল।
তিনি জানান, এই দোকান তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। এখান থেকে তিনি শিখছেন দায়িত্ব, পরিশ্রম এবং সংগ্রামের মূল্য।
রুবেল অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। তাই কাজ করি, দেশ গড়ি।”
রুবেলের গল্প, নিছক কোনো গল্প নয়। এটি এক তরুণের লড়াই, সম্মান আর স্বপ্নের গল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম থেকে দোকানের কাউন্টার-প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি প্রমাণ করছেন, স্বপ্ন পূরণে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো নিজের উপর বিশ্বাস, আর কষ্টকে হাসিমুখে গ্রহণ করার সাহস।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত ক জ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আজ মুক্তি পাচ্ছে নতুন দুই সিনেমা, হলে আছে আরও ৭ সিনেমা
কুয়াকাটায় একদল ব্যাচেলর
করোনার সময় দীর্ঘদিন ঘরবন্দী ছিল মানুষ। বিধিনিষেধ শিথিল করা হলে কুয়াকাটায় ঘুরতে যায় একদল ব্যাচেলর। সেখানে নারীদের একটি দলের সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। তাদের কেন্দ্র করেই রোমান্টিক, কমেডি ও থ্রিলারের মিশেলে তৈরি হয়েছে নাসিম সাহনিকের ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ।’
সিনেমাটির শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালের শেষ দিকে। প্রথম লটে এক সপ্তাহের মতো শুটিং করার কথা থাকলেও বাজেটের সমস্যায় দুই দিন পর শুটিং টিমকে রেখেই ঢাকায় চলে গেছেন পরিচালক—এমন একটা অভিযোগ সে সময় এনেছিলেন সিনেমার নায়িকা শিরিন শিলা। পরে তিনি আরও জানান, নায়ক-নায়িকাসহ শিল্পীদের থাকা, খাওয়া—সবকিছুতেই অব্যবস্থাপনা ছিল। এতে ইউনিটে অসন্তোষ তৈরি হয়। সে সময় কলাকুশলীরা ধরেই নিয়েছিলেন, এ সিনেমার শুটিং আর হবে না। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পরের বছর শেষ হয় শুটিং। ডাবিং ও পোস্টের কাজ শেষ করতে লেগে যায় আরও এক বছর।
সিনেমায় জুটি হয়েছেন শিরিন শিলা ও কায়েস আরজু। ছবি: কায়েসের সৌজন্যে