পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি এখন ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে: রাজনাথ সিংয়ের হুমকি
Published: 18th, October 2025 GMT
পাকিস্তানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতি ইঞ্চি ভূমি এখন তাঁদের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালের মধ্যে রয়েছে। তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র তার প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে এবং বিশ্বজুড়ে ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাকে সুদৃঢ় করেছে।
রাজনাথ সিং ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আজ শনিবার ব্রহ্মস অ্যারোস্পেস লিমিটেডের লক্ষ্মৌ ইউনিটে তৈরি সুপারসনিক ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচটির উদ্বোধন করেন।
এ উপলক্ষে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ ব্রহ্মসকে ‘ভারতের ক্রমবর্ধমান দেশীয় শক্তির প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি পাকিস্তানকে সতর্ক করে বলেন, তাদের ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি এখন ক্ষেপণাস্ত্রটির নাগালে।
বিজেপির এই মন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্ব ও আনন্দের বিষয় যে অত্যাধুনিক ব্রহ্মস বুস্টার ভবনটি আজ লক্ষ্মৌতে উদ্বোধন করা হচ্ছে।’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ জোর দিয়ে বলেন, ধনতেরাসের দিন (দিওয়ালির প্রথম দিন) চারটি ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় আত্মনির্ভরতার একটি মাইলফলক, যা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
রাজনাথ লক্ষ্মৌ ইউনিটের গতি ও দক্ষতার প্রশংসা করেন। ২০০ একরজুড়ে ৩৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত মে মাসে এই ইউনিট উদ্বোধন করা হয়েছিল। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে এটি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ তৈরি করে সরবরাহ করেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর জন্য বছরে প্রায় ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে। বছরে এটি ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন এবং ৫০০ কোটি টাকার জিএসটি রাজস্ব আয় করবে। এই অর্জনের গতি ও দক্ষতা একটি রেকর্ড তৈরি করেছে।
ব্রহ্মসের সক্ষমতার ওপর জোর দিয়ে রাজনাথ বলেন, এর সুপারসনিক গতি, নির্ভুলতা ও দূরপাল্লার আঘাত হানার ক্ষমতা এটিকে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থায় পরিণত করেছে।
রাজনাথ আরও যোগ করেন, লক্ষ্মৌ, কানপুর, আগ্রা, ঝাঁসি, আলিগড় ও চিত্রকূটকে নিয়ে গঠিত প্রতিরক্ষা উৎপাদন করিডরের ছয়টি কেন্দ্রই এখন পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে কাঙ্ক্ষিত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত নন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, তিনি ও ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা বললেও এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, পরিস্থিতি আরও খারাপ হোক, যুক্তরাষ্ট্র তা চায় না।’
বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিয়েভ এবং মস্কোকে তারা ‘যেখানে আছে সেখানে থামার’ এবং যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার এক দিন পর জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনায় দুই নেতা হাঙ্গেরিতে বৈঠকে বসতে রাজি হন।
জেলেনস্কি মনে করেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানলে পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প অবশ্য ইউক্রেনকে এ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেননি। তবে শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে তাঁর বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আশা করি তাদের এটি লাগবে না। আশা করি, আমরা টমাহক নিয়ে না ভেবেই যুদ্ধ শেষ করতে পারব। আমার মনে হয়, আমরা যুদ্ধ শেষ করার বেশ কাছাকাছি আছি।’
ট্রাম্প এই অস্ত্রটিকে ‘বড় ব্যাপার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন। ইউক্রেনকে টমাহক সরবরাহ করলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে, তবে সেগুলো পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা চলবে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি পুতিনকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে উৎসাহিত করেছে কি না, বিবিসির এমন প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সেই হুমকি (ক্ষেপণাস্ত্রের) ভালো, তবে সেই হুমকি সব সময়ই আছে।
ইউক্রেনের নেতা ইঙ্গিত দেন, টমাহকের বিনিময়ে তাঁর দেশ ড্রোন দিতে পারে। এতে ট্রাম্পের মুখে হাসি ও তাঁকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে দেখা যায়।
জেলেনস্কি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে ইঙ্গিত দেন, মার্কিন নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করতে সেই গতিকে কাজে লাগাতে পারেন।
বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে একজন সাংবাদিক জেলেনস্কির কাছে জানতে চান, পুতিন কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চান নাকি বুদাপেস্টে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের মাধ্যমে শুধু সময় নিচ্ছেন—এ বিষয়টি তিনি কীভাবে দেখছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি জানি না।’ তবে তিনি যোগ করেন, ইউক্রেনের টমাহক পাওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়াকে ‘ভীত’ করেছে। কারণ, এটি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
ইউক্রেন টমাহক পাবে কি না, ওয়াশিংটন ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও আশাবাদী কি না, জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি বাস্তববাদী।’
ইউক্রেনীয় নেতা আরও ইঙ্গিত দেন, বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর যুদ্ধ থামানোর ট্রাম্পের পরামর্শে তিনি রাজি হতে পারেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা যেখানে আছি, সেখানে থামতে হবে। তিনি ঠিক, প্রেসিডেন্ট ঠিক।’ তিনি যোগ করেন, এর পরের পদক্ষেপ হবে ‘কথা বলা’।
পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আলোচিত বিষয় সম্পর্কে জানাতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোন করেছেন। এখন প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যতটা সম্ভব জীবন রক্ষা করা, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউরোপে সবাইকে শক্তিশালী করা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এই আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইউকে মানবিক সহায়তা ও সামরিক সমর্থন পাঠানো অব্যাহত রাখবে।
গতকাল শুক্রবার একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন, পুতিন নতুন একটি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সম্মত হয়ে সময় নষ্ট করছেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন।’
আরেক সাংবাদিক যখন জিজ্ঞেস করেন, বুদাপেস্টে সম্ভাব্য আলোচনায় জেলেনস্কি থাকবেন কি না, তখন ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে ‘খারাপ সম্পর্ক’ আছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে চাই। আমাদের তিনজনের অংশগ্রহণে থাকবে, তবে এটি আলাদা হতে পারে।’