মমতাজের জনপ্রিয় পঞ্চমিশালি আচার
Published: 5th, December 2025 GMT
২০২০ সালের কথা। তখন করোনা মহামারি চলছিল। ঘরবন্দী বেশির ভাগ মানুষ। দ্বিতীয় সন্তান পেটে আসে গৃহবধূ মমতাজ পারভীন মমর। ঘরে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছিল তাঁর। মাথায় আসে কিছু একটা কাজ করে সময় কাটানোর। বাজার থেকে কিছু আম আর জলপাই কিনে শুরু করেন আচার বানানো। ছোট পরিসরে এসব আচার স্থানীয় লোকজনের কাছে বিক্রিও শুরু করেন। এরপর প্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। এতে ব্যাপক সাড়া পান। অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে এখন অনলাইনে জনপ্রিয় হয়েছে মমতাজের ‘পঞ্চমিশালি’ আচার।
মমতাজ পারভীন পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের প্রধানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মমতাজ অনলাইনে নিজের তৈরি আচার বিক্রি করে পেয়েছেন সাফল্য। পাঁচ বছর ধরে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আচার বিক্রি করে আসছেন তিনি।
মমতাজ পারভীনের ভাষ্য, ভেজালমুক্ত ও মজাদার এই আচার এখন শুধু দেশেই নয়, প্রবাসীদের কাছেও ব্যাপক চাহিদার পণ্য হয়ে উঠেছে। প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁর আচার পৌঁছে যাচ্ছে। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে এই আচার। এতে দিন দিন ব্যবসার পরিধি ও আয়ও বাড়ছে।
ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে নিজে কিছু করার প্রবল ইচ্ছা ছিল মমতাজ পারভীনের। কিন্তু স্নাতক শেষ না হতেই বিয়ে হয়ে যায়। তবু পড়ালেখা চালিয়ে যান। সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম আর বাচ্চা সামলানোসহ নানা কাজে একঘেয়েমি লাগা শুরু করে। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় ঘরবন্দী অবস্থায় দ্বিতীয় সন্তান গর্ভধারণ করেন তিনি। এ সময় টেলিভিশন দেখা, ফেসবুক চালানো—কোনো কিছুই ভালো লাগত না। পরে অনলাইনে ঘরে তৈরি আচারের ব্যবসা করবেন বলে স্বামীকে জানান। প্রথম দিকে বেসরকারি চাকরিজীবী স্বামী মোর্শেদ আলম সম্মতি না দিলেও শ্বশুর-শাশুড়ির উৎসাহে আচার বানানোর কাজ শুরু করেন। নাম দিলেন ‘পঞ্চমিশালি আচার’।
মমতাজ পারভীন জানান, প্রথম দিকে স্থানীয় লোকজনের কাছে আচার বিক্রি শুরু করে প্রচার চালান ফেসবুকে। এতে নানাজনের নানা কটূক্তির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। তারপরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাড়া পেতে থাকেন ক্রেতাদের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের পাশাপাশি প্রবাসী ও তাঁদের স্বজনদের মাধ্যমে অন্তত আটটি দেশে সরবরাহ হচ্ছে তাঁর আচার। এতে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন।
আচারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্ষতিকারক প্রিজারভেটিভ ছাড়াই তৈরি করা হয়। নির্দিষ্ট কাঁচামালে প্রয়োজনমতো মসলা, তেল, বিট লবণ ও ভিনেগার মিশিয়ে তৈরি করা এসব আচার নির্ধারিত জারে সরবরাহ করা হয় ক্রেতাদের কাছে। রেফ্রিজারেটরে রেখে এসব আচার এক বছর পর্যন্ত খাওয়া যায় বলে জানান মমতাজ।
মমতাজের আচারের মধ্যে আছে কাঁচা আমের আচার, আমের মোরব্বা, পাকা আমের মাসালা আচার, আম-কাসুন্দি, আমের বার্মিজ আচার, আমের ঝুরি আচার, বরই আচার, বরই-তেঁতুল মিক্সড আচার, তেঁতুল আচার, জলপাই আচার, শর্ষেপাই আচার, কাঁচা মরিচের আচার, চালতার আচার, আমড়ার আচার ও কাঁঠালের আচার। প্রতি কেজি কাঁঠালের আচার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি আমলকীর আচার ৭০০ টাকা, আমসত্ত্ব ৮০০ টাকা, রসুনের আচার ৮০০ টাকা এবং গরুর মাংসের আচার ১ হাজার ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মমতাজ পারভীন বলেন, ‘আমাদের আচার একেবারে স্বাস্থ্যকর এবং স্বাদে অতুলনীয়। আমি আচার তৈরি করি, যাতে কোনো ধরনের রাসায়নিক বা ভেজাল থাকে না। প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে আচার বিক্রি করতাম, কিন্তু অনলাইনে যখন অর্ডার আসা শুরু করল, তখন ব্যবসা আরও বড় হয়েছে। এখন আমাদের আচার শুধু পঞ্চগড়েই নয়, দেশের নানা জায়গায় পাঠানো হয়, এমনকি বিদেশেও আমাদের পণ্য যাচ্ছে।’ ভবিষ্যতে তাঁর পণ্য আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে দেওয়া এবং ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করাই একমাত্র লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
ঢাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক নারী মমতাজের নিয়মিত ক্রেতা। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মমতাজ পারভীনের পঞ্চমিশালি নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমেই তাঁর আচারের বিষয়ে জানতে পারি। সেখান থেকেই আমি আচারের অর্ডার করি। এখন আমি পঞ্চমিশালি আচারের নিয়মিত কাস্টমার। আচার শেষ হলেই ফোন করি। হোমমেড পঞ্চমিশালি আচার আমার কাছে মানসম্মত মনে হয়েছে। এমনকি দামও হাতের নাগালে আছে।’
মমতাজ পারভীনের শ্বশুর শামসুল আলম অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মমতাজের পরিশ্রমই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাতদিন পরিশ্রম করে এত যত্নসহকারে আচার তৈরি করায় তাঁর আচারের মান ভালো। প্রথম দিকে ভেবেছিলেন, গ্রামে থেকে কীভাবে অনলাইনে বিক্রি হবে? কিন্তু এখন দেশ-বিদেশের ক্রেতাদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম দ ক মমত জ র সরবর হ ফ সব ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন
নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।
জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।
জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।
মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ
খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।