অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে সভাপতি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

পাঁচ সদস্যের এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।

এ কমিটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবে। কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো কর্মকর্তাকে কমিটির কাজের জন্য সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০০ টাকা, ৫%, ৭.৫%, শেষে ১৫%—শিক্ষকেরা কত টাকা বেশি পাবেন

তিন সপ্তাহ আগে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসে বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানো হবে। মানে এখনকার বাড়িভাড়া মিলিয়ে দেড় হাজার টাকা হবে। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই গত রোববার নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তও প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার বাড়িভাড়া মূল বেতনের ১৫ শতাংশ (ন্যূনতম দুই হাজার টাকা) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই বৃদ্ধি হবে দুই ধাপে। এর মধ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী মাস অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে। বাকি আরও সাড়ে ৭ শতাংশ কার্যকর হবে আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে।

এখন অনেকের জিজ্ঞাসা, নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে একজন শিক্ষকের হিসাবের খাতায় কত টাকা বাড়িভাড়া যাবে? এর এককথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, সব শিক্ষকের বেতন সমান নয়। যাঁরা পুরোনো শিক্ষক, তাঁদের মূল বেতন বেশি। আবার নতুন শিক্ষকদের মধ্যেও বিষয় ভিন্নতার কারণে বেতনের তারতম্য আছে। যেমন চাকরির শুরুতে মাধ্যমিক পর্যায়ের একজন সহকারী শিক্ষকের (বাংলা, ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞানের শিক্ষক ইত্যাদি) মাসে মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তবে কৃষিশিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির শিক্ষকদের মূল বেতন শুরুতে ১৬ হাজার টাকা। আবার কলেজের শিক্ষকদের মূল বেতন চাকরির শুরুতে (নবম গ্রেডে) ২২ হাজার টাকা।

বর্তমানে সারা দেশে ছয় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রায় পৌনে ২ লাখ এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। তাঁরা এত দিন সরকারের কাছ থেকে মাসে মূল বেতন, ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে আসছিলেন।

নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষকেরা টাকার অঙ্কে কত বাড়িভাড়া পাবেন, তার একটি ধারণা দেওয়া সম্ভব। যেমন যে শিক্ষকের মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, শতাংশের হিসাবে (সাড়ে ৭ শতাংশ) আগামী মাস থেকে তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ৯৩৭ টাকা করে। কিন্তু বাস্তবে তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা। কারণ, সরকার বলেছে, শতাংশের হিসাবে যা–ই হোক, তা ন্যূনতম দুই হাজার টাকা হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী বছরের জুলাই থেকে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া পাবেন। সেই হিসাবে যে শিক্ষকের মূল বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা, তাঁর বাড়িভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। কিন্তু তখনো তিনি পাবেন দুই হাজার টাকা। কারণ, তখনো ন্যূনতম বাড়িভাড়া হবে দুই হাজার টাকা।

আবার যে শিক্ষকের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা, নভেম্বর থেকে শতাংশের হিসাবে তাঁর বাড়ি ভাড়া হওয়ার কথা ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একই কারণে তিনিও পাবেন দুই হাজার টাকা করে। তবে তিনি আগামী বছরের জুলাই মাসে বাড়িভাড়া পাবেন ২ হাজার ৪০০ টাকা করে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরে বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে পরবর্তী বেতন স্কেলে অতিরিক্ত এই সুবিধা সমন্বয় করা হবে।

সরকার ইতিমধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নে বেতন কমিশন গঠন করেছে। কমিশন আশা করছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই বেতন কমিশনের সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করা সম্ভব হবে।

অতীতে দেখা গেছে, নতুন পে স্কেল অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বাড়ে। ফলে আসন্ন নতুন বেতন স্কেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও বাড়তে পারে। ফলে তখন শতাংশের হিসাবে তাঁদের বাড়িভাড়াও বাড়তে পারে।

কত টাকা লাগতে পারে

এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ অক্টোবর অর্থ বিভাগকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দিলে বছরে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি, ১০ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি এবং ৫ শতাংশ হারে দিলে ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এখন ১৫ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে বছরে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা লাগবে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য আর্থিক অনুদান দেয় সরকার, যা এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নামে পরিচিত। বর্তমান বাস্তবতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যে বেতন, তা দিয়ে তাঁদের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর।

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। এর পাশাপাশি মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। আন্দোলনের টানা ১০ দিনের মাথায় সরকার বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ-প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সচিবালয় থেকে শহীদ মিনারে গিয়ে ঘোষণা দেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে আমাদের সব আন্দোলন ও কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। আগামীকাল (আজ বুধবার) থেকে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ