গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে লালন স্মরণোৎসব
Published: 21st, October 2025 GMT
“মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি, মানুষের ঘরে তুই মানুষ হ”-লালন সাঁইয়ের এই অমর বাণী যেন নতুন করে জেগে উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ একরে। বিকেলের সোনালী আলোয় কড়ই পাতার ফাঁক দিয়ে ছড়িয়ে পড়া রোদের নিচে একদল তরুণ-তরুণী গেয়ে উঠলেন মানবতার গান। তাদের চোখে ছিল শান্তি, কণ্ঠে ছিল আত্ম-অন্বেষণের সুর।
লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছে প্রথমবারের মতো ‘লালন স্মরণোৎসব’। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরের সেই পুরোনো কড়ই গাছতলা যেন গানের মন্দিরে পরিণত হয়েছে। গাছের নিচে অস্থায়ীভাবে সাজানো হয়েছে মঞ্চ।
আরো পড়ুন:
হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যান্সার চিকিৎসায় অবদান নিয়ে সেমিনার
বিকেল ৪টা বাজতেই শুরু হয় অনুষ্ঠান। শুরুতেই আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্তির কণ্ঠে ভেসে আসে— ‘মিলন হবে কতো দিনে.
গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রবন্ধ পাঠও। কেউ পাঠ করেছেন লালনের জীবনদর্শন নিয়ে, কেউ আলোচনা করেছেন তার মানবতাবাদী ভাবনা ও সমাজভাবনা নিয়ে। তারই মাঝে প্রতিধ্বনিত হয় সাঁইজির কালাম— ‘আমি রাসুল রাসুল বলে ডাকি…’। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা যেন মুহূর্তেই ডুবে যান ভক্তি ও ভাবনায়। লালনের দর্শনের সঙ্গে আজকের সময়ের যোগসূত্র খুঁজে দেখার সেই পাঠে যেন দর্শন ও সংস্কৃতির এক মিলন ঘটেছে।
দর্শক সারিতে বসা শিক্ষার্থী সবুজ মনি দাস বলেন, “লালন সাঁই শুধু গানের মানুষ নন, তিনি এক দর্শন। লালনের গান শুনলে মনে হয়, মানুষ হয়ে ওঠার এক শিক্ষা পাই। তিনি আমাদের শেখান, ধর্ম নয়—মানুষই সবকিছুর কেন্দ্র।”
এক শিক্ষার্থীর তখন গেয়ে ওঠেন— ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে…’। চারপাশের বাতাসও যেন থেমে শুনছে সেই সুর। পাশে বসা শিক্ষার্থীরা মৃদু তালে হাত দিচ্ছে, কেউ আবার গামছা দিয়ে মুখ মুছে গভীর মনোযোগে শুনছে। যেন প্রতিটি শব্দই কোনো অন্তর্গত জিজ্ঞাসার উত্তর।
গান চলতে থাকে একটার পর একটা। কেউ গাইছে, কেউ চোখ বন্ধ করে শুনছে। কেউ হয়তো নিজের ভেতরের মানুষটাকে চিনে নিচ্ছে, আবার কেউ কেবলই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। বাতাসে ভেসে আসে দোতারার টুংটাং।
আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামান বলেন, “লালন আমার খুব প্রিয়। তার গান ও দর্শন আলাদাভাবে দাগ কাটে। লালনের গান শুনলে এক অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি জাগে। আমরা চাই, এই আয়োজনের মাধ্যমে লালনের দর্শন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে ছড়িয়ে পড়ুক। এমন আয়োজন যেন প্রতি বছর স্মরণীয় হয়ে থাকে।”
দেখতে দেখতে সময় গড়ায়। শেষ বেলার আলো আর গানের সুরে যেন লালনের দর্শন জীবন্ত হয়ে ওঠে। তখন একজন গেয়ে ওঠেন— ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়…’।
আয়োজন নিয়ে ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. মারুফ বলেন, “আজ গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে এটি আমাদের প্রথম আয়োজন। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতেও এমন সুন্দর সাংস্কৃতিক আয়োজন অব্যাহত রাখতে পারব। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্নের মতোই ‘গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি’ তুলে ধরা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের এই সরলতা, গানের গভীরতা, আর অংশগ্রহণের উচ্ছ্বাসে এটি শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়— যেন একটা বোধের যাত্রা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার এনামুল হক বলেন, “লালন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী মানুষ। আজো তার দর্শন প্রাসঙ্গিক। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন দূর করতে লালনের শিক্ষা অনুসরণ করা জরুরি। আমরা চাই, তার দর্শনের আলোয় ক্যাম্পাসে মমতা ও সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হোক।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৪০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠক করল লেবানন ও ইসরায়েল
লেবানন ও ইসরায়েলের বেসামরিক প্রতিনিধিদল নাকুরায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ কমিটির এক বৈঠকে যোগ দিয়েছে। চার দশকের বেশি সময় পর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে এটিই প্রথম সরাসরি আলোচনা।
গতকাল বুধবার লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম বলেন, নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও আরও বিস্তৃত আলোচনায় যেতে প্রস্তুত আছে বৈরুত। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি কোনো শান্তি আলোচনা নয়। তাঁর মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি শান্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
নাওয়াফের বক্তব্য অনুসারে লেবাননের দিক থেকে এ আলোচনার লক্ষ্য হলো শত্রুতার অবসান, লেবাননের জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা ও দেশটির ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লেবানন ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ১৯৬৭ সালে দখল করা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আলাদা কোনো শান্তিচুক্তি করার ইচ্ছা লেবাননের নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দেশ ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতি সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ। সেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ১৯৬৭ সালে দখল করা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরিভাবে প্রত্যাহারের কথা বলা আছে। ইসরায়েলের সঙ্গে আলাদা কোনো শান্তিচুক্তি করার ইচ্ছা লেবাননের নেই।নাওয়াফ মনে করেন, বেসামরিক দূতদের আলোচনায় অংশগ্রহণের বিষয়টি উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।
কমিটি প্রায় তিন ঘণ্টা লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যকার ‘ব্লু লাইন’ সীমান্তরেখা–সংলগ্ন এলাকায় বৈঠকটি করেছে।
বৈঠক শেষে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে আলোচনায় বেসামরিক প্রতিনিধিদের সংযুক্ত হওয়াকে ‘টেকসই বেসামরিক ও সামরিক সংলাপ’ প্রতিষ্ঠার পথে ‘গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানানো হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে অস্থির থাকা এ সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করছে কমিটি।
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন২৪ নভেম্বর ২০২৫২০২৪ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে হওয়া যুদ্ধবিরতি তদারকির পাশাপাশি কমিটির কাজের পরিধি আরও বিস্তৃত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত মাসে লেবাননের রাজধানীতে ইসরায়েলি বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে যখন ক্রমাগত উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
লেবাননে নিয়মিত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটি সাধারণত দাবি করে থাকে যে হিজবুল্লাহ সদস্য ও তাঁদের স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই তারা হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিরতিতে পুরোপুরিভাবে সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ থাকলেও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা এখনো অবস্থান করছেন।
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশ বেদরোসিয়ান বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ বৈঠককে ঐতিহাসিক অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছেন।
বেদরোসিয়ান দাবি করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর চলমান প্রচেষ্টার কারণেই ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে এ সরাসরি বৈঠক সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেমনটা বলছেন যে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের জন্য বিশেষ সুযোগ এখন তৈরি হয়েছে।’