বাড়ি নিয়ে বাবা-মাকে দেখেন না ছেলে, আদালতের নির্দেশে মামলা
Published: 24th, October 2025 GMT
আমির হোসেন সরকার তার ছেলে বোরহান উদ্দিনের নামে বাড়িসহ ছয় শতক জায়গা কিনেছিলেন। তারপর সৌদি আরবে চলে যান বোরহান। এখন দেশে ফিরে বোরহান তার বাবা-মাকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় আদালতের নির্দেশে রাজশাহীর পবা থানায় ভরণপোষণ আইনে মামলা করেছেন আমির হোসেন। মামলায় ছেলে বোরহান এবং তার স্ত্রী আয়েশা বেগম আশাকে আসামি করা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বান্দরবানে ১৩ প্রাথমিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার অনুমোদন
কিশোরগঞ্জে বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলে গ্রেপ্তার
আমির হোসেন সরকারের (৭০) বাড়ি পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকায়। তার স্ত্রী আরেজা বিবি পারুলের বয়স ৬৫ বছর।
মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, আমির হোসেন সরকার বাড়িসহ ওই জমিটি কিনে ছেলে বোরহান নামেই দেন। কথা ছিল, বৃদ্ধ বয়সে ছেলে তাদের দেখাশোনা করবেন। ২০০০ সালে বোরহান সৌদি আরবে চলে যান। পরবর্তীতে বিয়ে করেন। বিদেশে থাকা অবস্থায় বোরহান জমিটি তার বাবাকে আমমোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) নিযুক্ত করেন।
সম্প্রতি বোরহান দেশে ফিরেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা আছেন। এখন বাবা-মাকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে নতুন করে বাড়ি করার চেষ্টা করছেন।
আমির হোসেন খানের অভিযোগ, ছেলে তাদের দেখভাল করেন না। কোনো টাকাও দেন না।
সম্প্রতি রাজশাহীর পবা থানার আমলী আদালতে গিয়ে ছেলে ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩’ অনুযায়ী মামলার আবেদন করেন আমির হোসেন। গত ১৫ অক্টোবর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো.
আমির হোসেন সরকার বলেন, “আমার সহায়-সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। বাড়িটাও কিনেছিলাম ছেলের নামে। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকে অনেক টাকা রোজগার করেছে। এই বয়সে নানা অসুস্থতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অভাব-অনটনে জীবনযাপন করলেও ছেলে খোঁজ নেয়নি। ছেলের বউ আমাদের কোনো টাকা দিতে দেয় না। ছেলে দেশে ফিরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা করে।”
তিনি বলেন, “এই বাড়িতে আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। সে (বোরহান) আমাদের বের করে এখানে বাড়ি করতে চায়। এতে রাজি না হলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে। গলা চেপে হত্যাচেষ্টা করে। প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করেন।”
আমির হোসেন সরকার বলেন, “ছেলে ও ছেলের বউ এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজও নেয় না। ভরণপোষণ চাওয়ায় উল্টো হুমকি-ধামকি দেয়। এমন সন্তান দেখে লজ্জা লাগে। আমার কোনো উপায় নাই, তাই আমি মামলা করেছি।”
অভিযোগের বিষয়ে বোরহান উদ্দিন বলেন, “আমি বিদেশ করেছি ২৫ বছর। আশপাশে ইনকোয়ারি করলে আসল বিষয়টা বুঝতে পারবেন। ভাই, বোন- সবার পেছনে খাটতে খাটতে আমি শেষ। দেশে আসার পরে আমি দেড় বছর ধরে বেকার। ভরণপোষণ দেব কোথা থেকে?”
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “তাদের নিজের সম্মান তো নাই, অন্যকে সম্মান দেওয়াও জানে না। আমার আরো দুইটা ভাই আছে। সব দায়-দায়িত্ব কি আমার একার, না অন্যদের আছে?”
পবা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। আমার জানামতে পবা থানায় এ ধরনের মামলা এবারই প্রথম হলো। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহমখদুম জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করে। এই আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তার মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে।”
তিনি বলেন, “অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা পারিবারিক চাপে পড়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন। মামলা করতে সাহস পান না। এই মামলা হয়তো অন্যদেরও সচেতন করবে।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম মল অভ য গ আম র হ স ন সরক র সন ত ন ব রহ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভরণপোষণ চেয়ে ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা
বহু কষ্টে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন বাবা। দেশে ফিরে শ্বশুরবাড়িতে উঠেছেন সেই ছেলে। ৭০ বছর বয়সী বাবা মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন চোখে কম দেখেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। এখন চিকিৎসা ও ভরণপোষণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি।
মা–বাবার ভরণপোষণ তো দূরের কথা, ছেলে এখন মা–বাবাকে ভিটেছাড়া করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে আদালতে নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন বাবা। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ অক্টোবর রাজশাহীর পবা থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে।
মামলার বাদী আমির হোসেন সরকার (৭০) পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ছেলের নাম বোরহান উদ্দিন। পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমির হোসেন সরকার নামের এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ আইনে মামলা করেছেন। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। পবা থানায় এ ধরনের মামলা এবারই প্রথম দায়ের হলো।’
ভুক্তভোগী আমির হোসেন সরকার জানান, বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতাসহ দীর্ঘদিন ধরে অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। নিজের শেষসম্বল ৬ শতাংশ বাড়ির ভিটা তিনি বড় ছেলে বোরহান উদ্দিনের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন এই শর্তে যে ছেলে তাঁর মা–বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু ছেলে বিদেশ থেকে ফিরে সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আমির হোসেন বলেন, ‘আমার সহায়সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকে অনেক টাকাপয়সা রোজগার করেছে। দেশে ফিরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা করেছে। আমি বাধা দিলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে, গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। পরে প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করে।’ তিনি বলেন, ‘ছেলে ও ছেলের বউ এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজও নেয় না। ভরণপোষণ চাওয়ায় উল্টো হুমকি দেয়।’
মামলার আরজিতে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে বারবার মীমাংসার চেষ্টা করেও সমাধান না হওয়ায় ৬ অক্টোবর বাদী পবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ধরনের মামলা আদালতের বিষয়। পরে ১৫ অক্টোবর তিনি আদালতে মামলার আবেদন করেন। এতে ছেলে বোরহান উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীকে আসামি করা হয়।
আদালতে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আসামি বোরহান উদ্দিন সৌদি আরবে যাওয়ার সময়ে তাঁর নামে জমি লিখিয়ে নেন এবং বাবার নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেন। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি সেই জমির দখল নিতে চান এবং মা-বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিতে একাধিকবার শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পুত্রবধূও এসব ঘটনার প্ররোচক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন বলেন, তিনি ভরণপোষণ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এখন দেড় বছর ধরে বেকার। তাঁর দুটি বাচ্চা আছে। তাদের নিয়ে নিরুপায় হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আছেন। মা-বাবাকে ভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ওই জায়গায় তিনি একটা বাড়ি করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু এখন তারা (মা–বাবা) জায়গা ছাড়ছেন না। বোরহান বলেন, তাঁর আরও দুই ভাই আছেন। তিনি একা ভরণপোষণের জন্য দায়ী হবেন কেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করে। এ আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তাঁর মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে। তিনি বলেন, ‘এই মামলা সমাজে একটি বার্তা দেয়, বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা শুধু নৈতিক নয়, আইনগতভাবেও দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা পারিবারিক চাপে পড়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন, মামলা করতে সাহস পান না। আমির হোসেন সরকারের এই মামলা হয়তো অন্যদেরও সচেতন করবে।’