প্রশাসন নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত নোটিশে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘বিগত ২২ নভেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনে আপনি (শাহজাহান চৌধুরী) বক্তব্য প্রদান করেছেন যে, “নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়, যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।” আপনার এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।’

নোটিশে আরও বলা হয়, ‘আমরা বক্তব্যটি দেখেছি, যা রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পেশাদারত্ব, নিরপেক্ষতা ও মূল স্পিরিট স্পষ্টভাবে ব্যাহত করেছে। আমরা মনে করি, প্রশাসন পূর্ণ পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করবে, এখানে আমাদের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই।’

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শাহজাহান চৌধুরী সাংগঠনিক ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ও শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘আপনাকে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমিরে জামায়াতও আপনাকে ডেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং সতর্ক করেছেন। এতদসত্ত্বেও আপনার মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না।’

শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের পর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তর থেকে নিন্দা ও উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক মহল থেকে সরাসরি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ‘একই সঙ্গে দেশ-বিদেশে আমাদের জনশক্তি এবং সাধারণ জনগণের মাঝেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই বক্তব্যের কারণে ইতিমধ্যে সংগঠনের ভাবমর্যাদা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি দলীয় গঠনতন্ত্র, নীতি, আদর্শ, শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের পরিপন্থী।’

আরও পড়ুনপ্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে: জামায়াত নেতা শাহজাহান২৩ নভেম্বর ২০২৫

শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের সাবেক আমির।

গত শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলন’–এ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়.

..যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছে, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে। পুলিশকে আপনার পিছনে পিছনে হাঁটতে হবে। থানার ওসি সকালে আপনার অনুষ্ঠান জেনে নিয়ে আপনাকে প্রটোকল দেবে।’

আরও পড়ুনশাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য ব্যক্তিগত, জামায়াত এটি সমর্থন করে না২৩ নভেম্বর ২০২৫

শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে শাহজাহান চৌধুরীর এ বক্তব্যকে তাঁর নিজস্ব এবং এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম জোনের প্রধান মুহাম্মদ শাহজাহান।

গত রোববার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বক্তব্যটি আমরা দেখেছি। এটা একান্তই ওনার (শাহজাহান চৌধুরী) বক্তব্য। এটার ব্যাখ্যা উনি ভালো দিতে পারবেন। তাঁর এই বক্তব্য জামায়াত সমর্থন করে না। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ ঘটনায় আমরা অভ্যন্তরীণভাবেও আমাদের মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

গতকাল সোমবার শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এক প্রতিবাদলিপিতে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এ ধরনের মন্তব্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের উসকানি দেয়।

আরও পড়ুনজামায়াত নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের২৪ নভেম্বর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন চ ধ র র আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল

রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট আগামী ৪ ডিসেম্বর রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।

ওই মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল কী বলেছেন, তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ‘ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং তাঁদের (রিট আবেদনকারী) কাউন্সিল কিছুক্ষণ আগে ব্রিফ করেছেন, তাঁরা বলেছেন তারেক রহমান যেটা বলেছেন গতকালও ওনাদের কনসার্ন (উদ্বেগ) হবে যে রাজনৈতিক দল এসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিক, সে ক্ষেত্রে যুক্তি খণ্ডাবেন কীভাবে’—এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এটা ওনাদের সাবমিশন ওনারা বলেছেন। আমাদের কথা যদি পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট (রাজনৈতিক সরকার) যে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারের বন্দর কিংবা এলডিসি থেকে উত্তরণের মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ–পরিচালনা এবং ঢাকার পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়া নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, ‘একটি দেশ যেই সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই সরকার দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের চুক্তি–সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে ওই রিটটি করা হয়েছিল। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম ও কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি করেন।

‘সরকারের জনবিচ্ছিন্ন, জনবিরোধী কোনো এজেন্ডা নেই’

রাজনৈতিক ঐকমত্য হচ্ছে ওই চুক্তির বিরুদ্ধে—এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। সেই লাইফলাইনে আমরা কত বেশি স্বচ্ছতা আনতে পারব, এটা একটা পাবলিক পলিসি। সেই পলিসি ধরেই সরকার এগোচ্ছে। সরকারের জনবিচ্ছিন্ন, জনবিরোধী কোনো এজেন্ডা নেই।’

শুনানির বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা যা করেছি সংবিধানের মধ্য থেকে, আইনের মধ্য থেকে ও পিপিপির মধ্য থেকে করেছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে দায়িত্ব পালন করছেন, এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইজ ফাংশনিং। প্রধানমন্ত্রী যে কাজগুলো করতে পারতেন, এই প্রধান উপদেষ্টা এবং এই ক্যাবিনেট (উপদেষ্টা পরিষদ) একই কাজ ওনারা করতে পারেন, যা হচ্ছে সাংবিধানিক স্কিম। এটা বলতে গিয়ে সংবিধানের চতুর্থ শিডিউলের ক্লজ ২ ও ৪ পড়ে শুনিয়েছি। নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পরের প্রেক্ষাপট টেনে এনেছি।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিজয়ী শক্তি নির্ধারণ করে—তার নেতা কে, তার সরকার কে, সে কীভাবে পরিচালিত হবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই বাংলাদেশের বিজয়ী শক্তি নির্ধারণ করেছিল আমার সংবিধান কেমন হবে, নেতা কে হবে, আমার দেশ কীভাবে পরিচালিত হবে। ঠিক একইভাবে এই সময়ে এসে আবার নির্ধারিত হয়েছে, আমরা কীভাবে চলব। তারই ধারাবাহিকতায় এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এখানে কোনো ব্যত্যয় নেই। কোনো সন্দেহ নেই। কোনো অস্পষ্টতা নেই—এটা আমরা বলেছি।’

‘এখনো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাবার্তা চলছে। এটা নিয়ে গোটা জাতির সামনে জনস্বার্থে মামলা করে বিভ্রান্তিমূলক একটি তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেটি হলো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আদালতকে বলেছি, এই রিট কয়েকটি কারণে খারিজ হবে। ইতিপূর্বে এ বিষয়ক রিট সরাসরি খারিজ হয়েছে—একই পয়েন্টের ওপরে গ্রহণ করা হলে সেটি দ্বৈত নীতি হবে। রিট তখনই হয় যদি কার্যকারণ তৈরি হওয়ার মতো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত থাকে। এই ইস্যুতে এখনো কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। এই প্রাথমিক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায় আছে যে প্রিম্যাচিউর স্টেজে (অপরিণত পর্যায়ে) জুডিশিয়াল রিভিউ গ্রহণ করার সুযোগ নেই।’

‘এই মুহূর্তে সরকার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে না’

শুনানিতে কী বলেছেন, তা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীরাও। রিট আবেদনকারীপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৩ সালে সরকার নীতিগতভাবে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চুক্তির জন্য অনুমোদন দিয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে এই সরকার এসে চুক্তির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে। চলমান প্রক্রিয়া—এটাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। চ্যালেঞ্জ করার কারণ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) অ্যাক্টের অধীন কোনো বিদ্যমান কাঠামো যেগুলো আছে, তা বিদেশিদের কাছে দেওয়া যাবে না। পোর্টটি বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত, যেখান থেকে বাংলাদেশ সরকার ৬০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব পাচ্ছে। সামনে আরও বাড়বে বলে ধারণা করা যায়। যেহেতু পিপিপি অ্যাক্টে বিদ্যমান কোনো কাঠামোর ওপর কোনো অপারেশন (পরিচালনা) করা যায় না, সরকার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে হাতে দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া করছে, এটা অবৈধ ও আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। আইনে নতুন নিয়মে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ডিপি ওয়ার্ল্ড ২০০ কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছে, যেটি আইন অনুযায়ী সমর্থিত নয়।

আহসানুল করিম আরও বলেন, ‘আইনে আছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বোর্ড অব গভর্নরস গঠিত হবে। বোর্ড অব গভর্নরস কে হবে? রুলস অব বিজনেসে যেভাবে বলা দেওয়া আছে সেভাবে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত হবে। কিন্তু এখন সংসদ নেই। আমাদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু সংসদ নেই, প্রধানমন্ত্রী নেই, মন্ত্রী নেই সুতরাং এই মুহূর্তে এই সরকার কোনো ধরনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে না।’

‘বিভিন্ন আইন ভঙ্গ করে ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করতে চাচ্ছে’

রিট আবেদনকারীপক্ষের অপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আরগুমেন্টের মূল প্রণিধানযোগ্য যে বিষয়গুলো ছিল, তা হলো বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে বর্তমান এই অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের স্টেট পলিসির (রাষ্ট্রীয় নীতি) ক্ষেত্রে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনার সময় ২০২২–২৩ সালে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়েছিল। দেশের মানুষের প্রত্যাশা ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান পলাতক শেখ হাসিনা যে সমঝোতা স্মারক করেছিল, সেটির ধারাবাহিকতা যেন রক্ষা করা না হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন আইন ভঙ্গ করে এই ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করতে চাচ্ছে। সে কারণে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাম ফ্রন্টসহ সব রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য–বিবৃতি এবং সর্বশেষ গতকালও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটা টুইট করেছিলেন, যা প্রতিটি দৈনিকে শিরোনাম করেছে যে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো স্টেট পলিসির ক্ষেত্রে কোনো চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হতে পারে না।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কায়সার কামাল আরও বলেন, আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন এই বলে যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়। আইনে আছে, এই কমিটির চেয়ারম্যান হতে হবে প্রধানমন্ত্রীর। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, এই সরকার জনগণের সরকার। আমাদের উপস্থাপনায় বলেছি, এই সরকার রাজনৈতিক দল কর্তৃক সমর্থিত সরকার। জনগণের সরকার তখন হবে যখন জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবে। আগামী সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে মধ্য ফেব্রুয়ারির আগে। সেই সংসদ যে সরকারকে নির্বাচিত করবে, সেই সরকারই হবে জনগণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত সরকার। এ বিষয়গুলো আগামী সংসদ নির্বাচন তথা সংসদ নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে যে সরকার গঠিত হবে সেই সরকারের জন্য এই নীতিগত প্রশ্ন ও নীতিগত বিষয়গুলো রাখার জন্য আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছেন।

‘এখানে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পৃক্ত’

রিট আবেদনকারীপক্ষের অপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানির বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মূলত যেটা বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের লিমিটেশন (সীমাবদ্ধতা) আছে। একটা নির্বাচিত সরকারের যেই ক্ষমতা আছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সেই ক্ষমতা নেই।…চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র বন্দর, এখানে জাতীয় নিরাপত্তা সম্পৃক্ত। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা আছে, জাতীয় গোপনীয়তার ব্যাপার আছে, সার্বভৌমত্বের ব্যাপার এখানে আছে। যদি এটা বিদেশিদের কাছে চলে যায়, তাহলে তারা সবকিছু জেনে যাবে। কী আসছে, কী যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ অস্ত্র আমদানি করছে, সেটিও তারা জেনে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে না—একটা অন্তর্বর্তী সরকার যে সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে—এটা করুক। জনগণের সঙ্গে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সরকার এটা করতে এগোচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে, যদি বিদেশিরা এখানে চলে আসে।

বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে ওই রিট আবেদনটি করেন। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ আদালত ৪ ডিসেম্বর রায়ের জন্য দিন রাখেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক সরকার যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্তর্বর্তী সরকার একই সিদ্ধান্ত নিতে পারে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • সংবাদমাধ্যম কখন নিজেকে প্রশ্ন করার সাহস রাখে
  • জামায়াত নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
  • মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেই দেশে শান্তি লঙ্ঘিত হবে: সুলতানা কামাল
  • প্রশাসন নিয়ে শাহজাহান চৌধুরীর বক্তব্য তার নিজের: জামায়াত 
  • বিদেশিদের সঙ্গে বন্দর চুক্তি বাতিল না করলে যমুনা ঘেরাওয়ের ঘোষণা বাম জোটের
  • কয়েক দিনের মধ্যেই এনসিপি–এবি পার্টিসহ নতুন জোট: মজিবুর রহমান
  • বিদেশিদের দালালি করা দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না জনগণ 
  • নির্বাচনে জয়ী হলে আমরা জনগণের খাদেম হব, শাসক নয়: জামায়াত নেতা বুলবুল