সেনা সদর দপ্তর আইন প্রয়োগ না করা পর্যন্ত আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তা কর্মরত: প্রসিকিউটর
Published: 26th, October 2025 GMT
মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলার আসামি ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন এখনো কর্মরত বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজি মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।
আজ রোববার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোনাওয়ার হুসাইন এ কথা বলেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি সেনা কর্মকর্তাদের সার্ভিং বলছেন। কিন্তু সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল হলেই তাঁদের চাকরি থাকার কথা নয়। তাহলে সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত নাকি চাকরিরত, কোনটা বলা হবে?’
এর জবাবে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, যেটা আইনে বলা আছে, সেটাই আইনের ব্যাখ্যা। এখন সেনা সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নেবে যে এই আইন কবে তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। যতক্ষণ প্রয়োগ না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তো সার্ভিং (কর্মরত) বলাই যেতে পারে।
মামলা তিনটির মধ্যে দুটি হচ্ছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। অন্যটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। এসব মামলায় ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা এখনো কর্মরত। ১ জন এলপিআরে (অবসরোত্তর ছুটিতে) আছেন, আর ৯ জন সেনা কর্মকর্তা অবসরে।
সেনাদের হাজিরের দিন বদলগুম-নির্যাতনের দুটি মামলার পরবর্তী শুনানি ছিল ২০ নভেম্বর। প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, এই দুটি মামলার পরবর্তী তারিখ ছিল ২০ নভেম্বর। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আজ এই মামলার তারিখ পরিবর্তনের জন্য একটি আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়ে আগামী ২৩ নভেম্বর এই দুটি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রসিকিউশনের নিজস্ব জটিলতার (ডিফিকাল্টি) কারণে এই সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় দুজন সেনা কর্মকর্তা আসামি আছেন। সেটির পরবর্তী তারিখ ৫ নভেম্বর আছে। সেটিও পরিবর্তনের আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদন মঞ্জুর করে ২৪ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে বলেও জানান এই প্রসিকিউটর।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নবত ব র ধ কর মকর ত র পরবর ত অপর ধ র
এছাড়াও পড়ুন:
চীন সংযোগে ঝুঁকি আছে, তা বাংলাদেশকে বোঝাব : ক্রিস্টেনসেন
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে অনুমোদন পেলে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে আসবেন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন। আর ঢাকায় এলে প্রতিরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার ঝুঁকির বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান ক্রিস্টেনসেন। তাঁকে গত ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, এই মনোনয়ন অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে সিনেট অনুমোদন দিলে নতুন রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনসহ চারটি দেশের জন্য মনোনীত চার রাষ্ট্রদূত লিখিত বক্তৃতা দেন। এরপর তাঁদের প্রশ্ন করেন সিনেটের সদস্যরা। এই শুনানি মার্কিন সিনেটের ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র–চীন চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নেব্রাস্কা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর পিট রিকেটস বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, বিশেষ করে দুই দেশের ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা নিয়ে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে প্রশ্ন করেন।
পিট রিকেটস বলেন, ‘আমরা যে আরেকটি হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি, তা হলো কমিউনিস্ট চীন। বাংলাদেশ ও কমিউনিস্ট চীনের মধ্যে সামরিক পরিসরে সহযোগিতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি কমিউনিস্ট চীন একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সাবমেরিন ঘাঁটি সংস্কার করেছে, যাতে যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন দুটোই রাখা যায়। আর এই মাসেই খবর এসেছে যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ ২০টি চীনা নির্মিত জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। তারা নতুন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল এবং দীর্ঘপাল্লার রাডারও সংগ্রহ করবে। এর মাধ্যমে তারা চীনা প্রতিরক্ষাশিল্পের সঙ্গে আর্থিক ও কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করছে।’
বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হলে কীভাবে আপনি বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, যাতে তাঁরা চীনা সমরাস্ত্রের ওপর আরও নির্ভরশীল না হয়, তাদের প্রতিরক্ষা ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হয়—পিট রিকেটস এই প্রশ্ন করেন।
জবাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আপনার উদ্বেগের সঙ্গে আমি একমত। আমার মনোনয়ন নিশ্চিত (রাষ্ট্রদূত হিসেবে) হলে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলব—চীনের কর্মতৎপরতা, তাদের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা, তাদের সামুদ্রিক এলাকায় কার্যক্রম ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোয় চীনের ভূমিকার ঝুঁকি স্পষ্টভাবে তুলে ধরব। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্বের সুযোগ ও সুফলগুলোও তুলে ধরব, বিশেষ করে আমাদের দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার বিষয়টি।’
ট্রাম্পের দলের সিনেটর পিট রিকেটস বলেন, এই শুনানি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গতকাল ‘থিঙ্ক টোয়াইস অ্যাক্ট’ নামের একটি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে অনুমোদন দিয়েছে। এই বিল অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ কৌশল প্রণয়ন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চীনের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা থেকে নিরুৎসাহিত করা যায়।
পিট রিকেটস বলেন, ‘এই বিল পাস করাটা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমরা অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলা করতে পারি। আশা করি, আমরা এই বিলের মাধ্যমে আপনাকে এমন একটি হাতিয়ার দিতে পারব, যা বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করার সময় সহায়ক হবে। কিন্তু আমরা আর কী কী করতে পারি? দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের অস্ত্র বিক্রির প্রভাব মোকাবিলায়, আপনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?’
তখন ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘আমাদের মার্কিন সামরিক সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে আমরা মিত্রদেশগুলোর জন্য তৈরি এমন কিছু প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তুলে ধরতে পারি, যা বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হতে পারে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রিমিয়াম অস্ত্রসামগ্রী কিনতে পারে না। পাশাপাশি আমরা যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে এসব প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে তাদের আন্তকার্যক্ষমতা বাড়াতে পারি।’
পেশাদার কূটনীতিক ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কাউন্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছন। মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে তিনি ঢাকায় পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা মিশনের দায়িত্বে ছিলেন পিটার হাস। এরপর পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রদূত আর নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশে পূর্বে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরে শুনানিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, বড় প্রতিবেশী দেশগুলোর ছায়ায় থাকার পরও বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ। দুই দশকের বেশি সময় ধরে মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশে কাজ করার কারণে দেশের গুরুত্ব ও স্বার্থ সম্পর্কে তিনি ভালোভাবে জানেন।
অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচনের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আগামী বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন সরকার এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নতুন পথ খুঁজে নিতে এই নির্বাচন হবে। একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের এই অভিযাত্রায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।