তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে সিনদিরগি শহরে ভূমিকম্প হয়েছে। কম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে শহরটিতে দ্বিতীয়বারের মতো ভূমিকম্প হলো। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তুরস্কের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত পৌনে ১১টার দিকে ভূমিকম্পটি হয়। দেশটির অর্থনৈতিক রাজধানী ইস্তাম্বুল ও পর্যটন শহর ইজমিরেও কম্পন অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পের পর তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া বলেছেন, ‘ভূমিকম্পের পর তিনটি ভবন ও একটি দোকান থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে সেগুলো ধসে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।’

এর আগে গত ১০ আগস্ট একই মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় সিনদিরগি শহরে। এতে একজন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছিলেন। শহরটির অবস্থান তুরস্কের পাহাড়ি অঞ্চলে। ইজমির শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৩৮ কিলোমিটার।

তুরস্ক ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। নিহত হন অন্তত ৫৩ হাজার মানুষ। এতে রাজধানী আঙ্কারার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া চলতি বছরে জুলাই মাসের শুরুতে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পের একজন নিহত হন। আহত হন ৬৯ জন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র ত রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আবুল কালামের জীবনের দাম যখন আড়াই ভরি সোনার সমান

সোনার দাম ভরিতে আরও এক হাজার কমেছে। ফলে আজ থেকে এক ভরি সোনা কিনতে খরচ করতে হবে ২ লাখ ৭ হাজার ৯৫৭ টাকা। এই হিসাব ধরলে ৫ লাখ টাকায় সোনা পাওয়া যাবে ২ দশমিক ৪০ ভরি। অর্থাৎ দুই ভরি আট আনা (প্রায়)।

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের আঘাতে মারা গেছেন আবুল কালাম। তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৫ বছর। কাজ করতেন। স্ত্রী আছে, দুটি শিশুসন্তান আছে। সরকার আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ ৩৫ বছর বয়সী আবুল কালামের জীবনের দামের সমান প্রায় আড়াই ভরি সোনা।

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

যদিও সব ধরনের পূর্বাভাস বলছে ২০২৬ সাল নাগাদ সোনার দাম আরও বাড়বে। এখন যেমন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ডলারের বেশি। সামনে তা ৫ হাজার ডলারে যেতে পারে। যদি তা–ই হয় তাহলে তো আবুল কালামের জীবনের দাম আরও কমে যাবে। তখন বলতে হবে আবুল কালামের জীবনের দাম দুই ভরি সোনারও অনেক কম।

একটা হিসাব করা যাক। আবুল কালামের বয়স ৩৫ বছর। বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংজ্ঞায় একজন মানুষ ৬০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারেন। ধরে নেওয়া যাক, আবুল কালাম মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করতেন। এই আয় যদি আর না–ও বাড়ে, তাহলে বাকি ২৫ বছরে তিনি আয় করতে পারতেন আরও ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ৫ শতাংশ হারে আয় বাড়লে সেটি হতো প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই যদি হিসাব হয়, তাহলে পাঁচ লাখ কিসের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঠিক করা হলো?

এখন সরকার বলতে পারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেউ যদি চা খান, আর ওপর থেকে কিছু একটা পড়ে মারা যান, এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ কোন আইনের ভিত্তিতে তারা দেবে। দেশে পারিবারিক সহিংসতা আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান আছে। এ জন্য দ্য পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট ১৯১৩ আছে। এটা আসলে সরকারি নানা দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কোনো দুর্ঘটনা কর্মস্থলে ঘটলে তবেই কেবল শ্রম আইন প্রযোজ্য। আবার ১৮৫৫ সালের ফ্যাটাল অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী অন্যের অবহেলা বা ভুল কাজের কারণে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে মৃতের পক্ষে আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করা যায়। যদিও বাস্তবে এমন মামলা খুবই কম দেখা গেছে। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আবুল কালামের কী হবে। এই যে দাফনের সময় তাঁর স্ত্রী ‘দুই সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াব’ প্রশ্ন করলেন, এর উত্তর কী হবে?

দেশের সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে চলাচলের স্বাধীনতা নিয়ে। সেখানে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের নাগরিকগণ আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধের অধীন হইয়া দেশের যেকোনো অংশে প্রবেশ, সেখানে অবস্থান ও সেখান হইতে প্রস্থান করিবার অধিকার রাখিবেন।’ দেশে যেসব ধারা সবচেয়ে লঙ্ঘন করা হয়, তার মধ্যে সম্ভবত এটি অন্যতম। কারণ, আপনি ঘর থেকে বের হবেন; কিন্তু দিন শেষে আবার অক্ষতভাবে ঘরে ফিরতে পারবেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। পদে পদে মৃত্যু ওতপেতে থাকে। সুতরাং স্বাধীনভাবে চলাচল করতে না পারলে এর যথাযথ ক্ষতিপূরণ তো রাষ্ট্রকেই দিতে হবে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নাগরিকেরা যদি মনে করেন, রাষ্ট্র বা সরকারি সংস্থা সংবিধান বা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাহলে উচ্চ আদালতে রিট করা যায়।

রাসেল সরকারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? একটি প্রতিষ্ঠানের ভাড়া গাড়ি চালাতেন। ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর হানিফ উড়ালসড়কে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসের চাপায় পা হারান তিনি। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ওই বছরই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। তিন বছর মামলায় লড়ে শেষ পর্যন্ত রাসেল ৩৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। সুতরাং উদাহরণ তো আছে।

রাসেল সরকারের উদাহরণ তো দেওয়া হলো। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আরও কিছু এ রকম উদাহরণ আছে। শাহজাহানপুরে খোলা পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুকে অপরাধজনক প্রাণহানি বলেছিলেন আদালত। এ জন্য ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। ২০১৭ সালে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ৪৫ বছরের শানু মিয়া। ওয়াসা আদালতের আদেশে ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল ৫০ লাখ টাকা।

আমরা যাঁরা নিয়মিত মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করি, ফার্মগেট স্টেশনে এলে আবুল কালামের কথা একবার হলেও মনে পড়বেই; কিন্তু রাষ্ট্রের দায় তো আরও বেশি। রাষ্ট্র একজন সাধারণ নাগরিককে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে পারেনি। এখন তাহলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিক। এ জন্য কাউকে রিট করতে হবে, এমনটা যেন না হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগ এক শিক্ষার্থীর
  • মেট্রোরেলের কাঠামো ভেঙে পড়ার ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি
  • এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দুর্দশা লাঘবের উপায় কী
  • অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় ধাক্কা, অ্যাশেজের শুরুতে নেই কামিন্স
  • রাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যু. বিচার দাবিতে বিক্ষোভ
  • মৃত্যুর ২৯ বছর পরও ফ্যাশন ও স্টাইলে সালমান শাহ যে কারণে অনন্য
  • ভারতের মধ্যপ্রদেশে দলিত ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
  • আবুল কালামের জীবনের দাম যখন আড়াই ভরি সোনার সমান
  • যে শহর চার মাস পুরোপুরি অন্ধকারে থাকে