বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। এই স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি ও নির্ভুল কাগজপত্র। ভর্তিপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভিসাপ্রাপ্তি পর্যন্ত সবকিছু নির্ভর করে প্রয়োজনীয় নথিগুলো সঠিকভাবে প্রস্তুত ও জমা দেওয়ার ওপর। কোনো একটি কাগজপত্র ভুল বা অসম্পূর্ণ থাকলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা করার আগেই জানা জরুরি কী কী কাগজপত্র লাগবে এবং কেন সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

১.

পাসপোর্ট

বিদেশে পড়াশোনার সবচেয়ে মৌলিক নথি হলো বৈধ পাসপোর্ট। এটি ছাড়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি—কোনোটাই সম্ভব নয়। পাসপোর্টের মেয়াদ যেন অন্তত পড়াশোনার মেয়াদ পর্যন্ত বৈধ থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাসপোর্ট নবায়ন করে নিতে হবে।

২. অফার লেটার

আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছেন, সেখান থেকে প্রাপ্ত ভর্তি নিশ্চিতকরণ চিঠিই আপনার ‘অফার লেটার’। এটি প্রমাণ করে যে আপনি ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। ভিসা–প্রক্রিয়ার সময় এই লেটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট

আপনার পূর্ববর্তী শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র হিসেবে এসএসসি, এইচএসসি, ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রির সার্টিফিকেট ও মার্কশিট জমা দিতে হয়। এগুলো অফিশিয়ালি অনুবাদ ও সত্যায়িত করা জরুরি, বিশেষ করে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় লেখা থাকলে।

আরও পড়ুনজেনে নিন বিশ্বের সেরা ১০ স্কলারশিপ সম্পর্কে২৬ অক্টোবর ২০২৫

৪. ভাষা দক্ষতার প্রমাণ

বিদেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনা হয়। তাই ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাট, এসএটি বা টোয়েফল স্কোর জমা দিতে হয়। নির্দিষ্ট দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে স্কোরের মানদণ্ড আলাদা হতে পারে।

৫. আর্থিক প্রমাণ

বিদেশে পড়ার খরচ বহন করার সক্ষমতা প্রমাণ করতে হয় ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্পনসরশিপ লেটারের মাধ্যমে। এতে বোঝানো হয় যে আপনি টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ নির্বিঘ্নে মেটাতে পারবেন। কিছু দেশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে জমা হিসেবে দেখাতে হয়।

৬. স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন

অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। মেডিকেল রিপোর্ট বা হেলথ সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বোঝানো হয় যে আপনি সুস্থ এবং বিদেশে বসবাসের উপযুক্ত। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

৭. ভিসা আবেদনপত্র ও ফি

সঠিকভাবে পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফরম এবং নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া ভিসা প্রক্রিয়ার প্রধান ধাপ। ফরম পূরণের সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো ভুল না থাকে। ভুল তথ্য ভিসা বিলম্ব বা বাতিলের অন্যতম কারণ।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো২৭ অক্টোবর ২০২৫

৮. ছবি

পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রায় সব আবেদনেই প্রয়োজন হয়। ছবির আকার, ব্যাকগ্রাউন্ড ও ফরম্যাট প্রতিটি দেশের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক রাখতে হবে। সাধারণত ফটো স্টুডিওগুলোয় বললেই ওরা সংশ্লিষ্ট দেশের জন্য সাইজ অনুসারে আপনার ছবি তুলে দেবে।

৯. সুপারিশপত্র

‘রিকমেন্ডেশন লেটার’ বা সুপারিশপত্র হলো এমন একটি নথি, যা আপনার অ্যাকাডেমিক দক্ষতা, মনোভাব ও সম্ভাবনা সম্পর্কে শিক্ষক বা কর্মক্ষেত্রের সুপারভাইজার লিখে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই চিঠিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। সাধারণত দুই থেকে তিনটি সুপারিশপত্র জমা দিতে হয়।

১০. স্টেটমেন্ট অব পারপাস

‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ হলো আপনার পড়াশোনার উদ্দেশ্য, আগ্রহ, পূর্বের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যসংবলিত নথি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বোঝায় কেন আপনি সেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চান এবং ভবিষ্যতে কীভাবে, সেই শিক্ষা কাজে লাগাবেন।

১১. লেটার অব মোটিভেশন

‘লেটার অব মোটিভেশন’ মূলত একটি ব্যক্তিগত বিবৃতি, যেখানে প্রার্থী নিজের লক্ষ্য, পড়াশোনার আগ্রহ, পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং নির্বাচিত প্রোগ্রামের সঙ্গে তাঁর সামঞ্জস্য তুলে ধরেন। এটি আবেদনের প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী অংশ; কারণ, এর মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় আপনার চিন্তাভাবনা ও মানসিক প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা পায়।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সফল করতে সঠিক কাগজপত্র প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রতিটি নথি যাচাই, অনুবাদ ও সময়মতো জমা দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রস্তুত হোন যত্নসহকারে; কারণ, এই নথিগুলোর মাধ্যমেই শুরু হবে আপনার নতুন শিক্ষাযাত্রার পথচলা।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: কোন দেশে কেন পড়বেন২৭ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক গজপত র প রস ত ত প রক র য় আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে না

অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে কোনো কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড করতে হয় না। শুধু ওই সব প্রয়োজনীয় কাগজের তথ্য দিলেই হয়। ফলে অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া আরও সহজ হলো।

চলতি অর্থবছর থেকে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রিটার্ন দেওয়ার সময়সীমা হলো ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, অনলাইনে রিটার্ন দিলে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে হবে না।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহ পর্যন্ত সাড়ে আট লাখ রিটার্ন অনলাইনে জমা পড়েছে।

কাগজের পরিবর্তে তথ্য

যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে করদাতা ই-রিটার্নে তাঁর আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের তথ্য জমা দিতে হয়, সেসব কাগজপত্র ও দলিলাদি করদাতাকে নিজ হেফাজতে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ, কর কর্মকর্তারা যদি ওই ব্যক্তির রিটার্ন নিরীক্ষায় ফেলেন, তাহলে প্রমাণ হিসেবে এসব কাগজপত্র চাইতে পারেন। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণেও কর কর্মকর্তারা কাগজপত্র দেখতে চাইতে পারেন।

যেসব দলিলের তথ্য প্রয়োজন

অনলাইনে রিটার্ন জমার সময় নিজের প্রয়োজন অনুসারে কিছু কাগজপত্রের তথ্য লাগবে। যেসব কাগজপত্রের তথ্য লাগবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌর করের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।

বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পেতে চাইলেও কিছু কাগজপত্র লাগবে। যেমন জীবন বিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ।

কীভাবে অনলাইনে জমা দেবেন

সব করদাতা ২০২৫-২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন https://www.etaxnbr.gov.bd এই ওয়েবসাইটে জমা দিতে হবে।

অনলাইনে রিটার্ন জমার আগে প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মুঠোফোন নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্তি রসিদ মিলবে।

কীভাবে কর দেবেন

করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা কল সেন্টার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমায় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে না