বিএনপি–জামায়াত বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছে, দাবি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
Published: 28th, October 2025 GMT
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে নির্বাচন করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, এক দল সরকারি হতে চাচ্ছে, আরেক দল বিরোধী। এক দল ভারতে এক পা দিয়েছে, আরেক দল পাকিস্তানে। এগুলো সামনে আরও স্পষ্ট হবে। দেশের মানুষ সেটি দেখতে চায় না।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রূপরেখা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে এনসিপি। সেখানেই নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথাগুলো বলেন।
বিএনপি-জামায়াত একসময় চারদলীয় জোটে ছিল। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরির বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা তৈরি করে। এরপর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে তাদের মধ্যকার বিরোধ আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
জামায়াতে ইসলামী নিম্নকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বর (পিআর) দাবি তুলে সংস্কারের কথা বলে ভাঁওতাবাজি করছে বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, উচ্চকক্ষেই পিআর যুক্তিযুক্ত। তিনি জামায়াতকে পিআর বিষয়ে আরও পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, দলটির সংস্কার বিষয়ে পড়াশোনার ঘাটতি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আপনারা যে সাইন করে দিয়েছেন, (জুলাই সনদে স্বাক্ষর) এ বিষয়ে কেন আমাদের কথা বলতে হলো। আপনাদের আমরা আগের দিন গিয়ে বুঝিয়েছি। জনগণের ওপরে কেন আপনারা দলীয় রাজনীতি নিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য তাদেরকে বলব, তাদের সামনে যথেষ্ট একটা সুযোগ এসেছে। এমনিই তারা একাত্তরের সময় একটা অনেক বড় আকাম করেছে বাংলাদেশে। এ সময়ে আপনাদের সুযোগ এসেছে। এ সময়ে আপনারা জনগণের পক্ষে দাঁড়ান।’
গণভোট প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এনসিপি মনে করে, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হতে পারে। একই দিনে নির্বাচন আর গণভোট করলে রাজনৈতিক গডফাদাররা অস্ত্র তাক করে জুলাই সনদের বিষয়ে রায় না দিতে মানুষকে ভয় দেখাতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকার একটি অথর্ব নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে অভিযোগ করে তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিশনের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য গণভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে জুলাই সনদের আদেশ জারি করলেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সেই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে শহীদ মিনারে যেতে হবে উপদেষ্টাদের নিয়ে। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে ডাকতে হবে। এরপর উপস্থিত জনগণের সামনে জুলাই সনদের আদেশ জারি করতে হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা বা সচিবালয় থেকে এটি জারি করলে চলবে না। এটা ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার আর কোনো উপায় নেই।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ঐকমত্য কমিশন থেকে সংস্কারপ্রক্রিয়ার কাগজগুলো আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে। এগুলো এখন আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। এখন সংস্কার ও বিচার জনগণকে বুঝিয়ে দিতে না পারলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আর পালানোর পথ নেই।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে কেউ যদি দলীয় দাস থাকেন এবং তাঁদের মাধ্যমে সংস্কারপ্রক্রিয়া যদি কোনো কারণে থমকে যায়, তাহলে যেভাবে তাঁরা বসেছেন, সেভাবে তাঁদের চলে যেতে হবে। তাঁদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
এনসিপি সামনে সরকার গঠন করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, এনসিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে চিন্তা করেন। এনসিপি ভবিষ্যতে সরকার গঠন করবে। কারণ, এনসিপি জনগণের পক্ষে থাকবে, জনগণের কথাগুলো বলবে।
গোলটেবিলে আরও কথা বলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, খালেদ সাইফুল্লাহ, জাবেদ রাসিন ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধসহ শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য বক্তব্য দেন। বৈঠকের সঞ্চালক ছিলেন এনসিপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল হক।
এনসিপির আজকের এই গোলটেবিল বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ শাহান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরীন সুলতানা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক শেখ ফজলুল করিম মারুফ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, সাংবাদিক রাজীব আহাম্মদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র দ দ ন প টওয় র ন উপদ ষ ট জ ল ই সনদ এনস প র জনগণ র দলট র সরক র গঠন ক গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে গণসংযোগে বিএনপি নেতার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর মাঠে নামলেন স্ত্রী
গণসংযোগ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে এক সপ্তাহ আগে মৃত্যু হয় টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হকের। স্বামী হারানোর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার গণসংযোগ শুরু করেছেন তাঁর স্ত্রী নূরুন্নাহার হক।
নূরুন্নাহার হক ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের (ভাষা মতিনের) ছোট বোন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
হামিদুল হক টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ১২ অক্টোবর থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেছিলেন। ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় গণসংযোগ শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
আজ সোমবার সকালে নূরুন্নাহার হক দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় প্রয়াত হামিদুল হকের অনুসারী নেতা-কর্মী ও তাঁর ছেলেমেয়েরা সঙ্গে ছিলেন।
নূরুন্নাহার হক বলেন, ‘আমার স্বামী দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জনগণের মাঝে প্রচার করতে বের হয়েছিলেন। প্রচার করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। তাঁর স্ত্রী হিসেবে আমি বসে থাকতে পারি না। তাই তাঁর মতো আমিও জনগণের মাঝে ৩১ দফা প্রচারণা করতে মাঠে নেমেছি।’
হামিদুল হকের বড় ছেলে মিল্টন হক বলেন, ‘আমার বাবা আজীবন রাজনীতি করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টাঙ্গাইল নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। মা নূরুন্নাহার হকও রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি বাবার সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পাশে থাকতেন। তাই বাবার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে শোক ভুলে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন।’
নূরুন্নাহার হক পাথরাইল থেকে গণসংযোগ শুরু করে পথে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কারের লিফলেট বিতরণ করেন। দুপুরে দেলদুয়ার উপজেলা সদরে দলীয় কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস আহমেদ, সহসভাপতি আজাদ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ। পরে ফাজিলহাটি, লাউহাটি, এলাসিনসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।