কালের কণ্ঠের ‘ডিক্লারেশন’ কেন বাতিল হবে না, সাবেক ১১ কর্মীর বকেয়া পরিশোধের নির্দেশ
Published: 1st, December 2025 GMT
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠের ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রিট আবেদনকারী পত্রিকাটির সাবেক ১১ কর্মীকে তাঁদের বকেয়া পাওনা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
দৈনিক কালের কণ্ঠের ‘ডিক্লারেশন’ বাতিল চেয়ে গত ১৩ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন পত্রিকাটির সাবেক ১১ কর্মী। রিটটি শুনানির জন্য আজ আদালতের কার্যতালিকায় ১০৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মানজুর আল মতিন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী দেবাশীষ দেব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো.
পরে আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, কালের কণ্ঠের ডিক্লারেশন কেন বাতিল হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বকেয়া ও পাওনা বিষয়ে রিট আবেদনকারী সাবেক কর্মীদের প্রতি চেক ইস্যু করেছিল পত্রিকা কর্তৃপক্ষ, যা প্রত্যাখ্যত হয়। সেখানে পর্যাপ্ত তহবিল নেই বলা ছিল। কথা হচ্ছে, যে পত্রিকার অর্থাৎ কালের কণ্ঠের ফান্ড নেই, সেই পত্রিকার ডিক্লারেশন থাকে কী করে? ১৫ দিনের মধ্যে রিট আবেদনকারীদের বকেয়া পাওনা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রিটে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও কালের কণ্ঠের প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়।
রিটের প্রার্থনায় নিয়মিত প্রকাশনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নিশ্চিতে কালের কণ্ঠ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা হারানোয় কেন পত্রিকাটির ঘোষণাপত্রের অনুমোদন বাতিল করা হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়। কালের কণ্ঠ পত্রিকা থেকে পদত্যাগ করা বা বরখাস্ত হওয়া রিট আবেদনকারী/সাংবাদিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকাশকের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
রিট আবেদনকারীদের অপর আইনজীবী দেবাশীষ দেব প্রথম আলোকে বলেন, রিটে যেভাবে রুল প্রার্থনা করা হয়েছিল, সেভাবে রুল হয়েছে। একই সঙ্গে রিট আবেদনকারী সাবেক ১১ কর্মীর বকেয়া পাওনা ১৫ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রকাশকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিট আবেদনের যুক্তি অনুযায়ী, বকেয়া পরিশোধের জন্য রিট আবেদনকারীরা গত ১৭ আগস্ট বিবাদীদের বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান। তবে বিবাদীরা (বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রকাশক) বকেয়া পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। নীরব ভূমিকা পালন করেছেন, যা আবেদনকারী/সাংবাদিকদের বঞ্চিত করার অভিপ্রায় প্রকাশ করে। পরিস্থিতিদৃষ্টে কালের কণ্ঠ পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখার সক্ষমতা কর্তৃপক্ষ হারিয়েছে। কারণ, রিট আবেদনকারী বা সাংবাদিকদের দেওয়া চেক অপর্যাপ্ত তহবিলের জন্য প্রত্যাখ্যাত হয়।
রিট দায়েরের পর গত ১৩ অক্টোবর আইনজীবী দেবাশীষ দেব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, চেকগুলো ব্যাংকে জমা দিলে অপর্যাপ্ত তহবিল দেখিয়ে তা ফেরত দেওয়া হয়। এ কারণে কালের কণ্ঠ কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটি চালানোর প্রয়োজনীয় অর্থ জোগানে সক্ষমতা হারিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। ১৯৭৩ সালের প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্টের ২০ ধারা অনুসারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর্থিক সক্ষমতা হারালে কোনো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করতে পারেন। এসব যুক্তি তুলে ধরে কালের কণ্ঠের ডিক্লারেশন বাতিল চেয়ে এবং আবেদনকারীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
রিট আবেদনকারী ১১ জন হলেন মো. শাহ আলম, মো. জাহেদুল আলম, কাকলী প্রধান, দেওয়ান আতিকুর রহমান, আবু সালেহ মোহাম্মদ শফিক, কে এম লতিফুল হক, আসাদুর রহমান, মো. রোকনুজ্জামান, শামসুন নাহার, মো. লতিফুল বাশার ও হানযালা হান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র বক য় পর শ ধ র আইনজ ব র জন য প রক শ হয় র ট
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর আইনজীবী সমিতি: বিএনপিপন্থীদের জয়, সভাপতি সাবেরুল ও সম্পাদক গফুর
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম একচেটিয়া জয় পেয়েছে। তারা ১৩টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১১টি পদ পেয়েছে। দুটি পদে জিতেছেন জামায়াত–সমর্থিত ল ইয়ার্স কাউন্সিলের প্রার্থীরা। ভোট গণনা শেষে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোহসীন আলী।
আগামী এক বছরের জন্য জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হলেন যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হলেন এম এ গফুর। বিএনপি–সমর্থিত ফোরাম থেকে অন্য বিজয়ীরা হলেন সহসভাপতির দুই পদে গোলাম মোস্তফা ও বাসুদেব বিশ্বাস, যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম, সহকারী সম্পাদক সেলিম রেজা ও আশরাফুল আলম, গ্রন্থাগার সম্পাদক কামরুল হাসান, কার্যকরী সদস্যের পাঁচটি পদের তিনটিতে বিএনপি ও দুটিতে জামায়াত–সমর্থিতরা জয়লাভ করেন। বিএনপি–সমর্থিত রেহেনা খাতুন, মঞ্জুরুল মাহমুদ ও মৌলুদা পারভীন। এ ছাড়া সদস্যপদে জামায়াত–সমর্থিত শফিকুল ইসলাম ও আজহারুল ইসলাম জয়লাভ করেন।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ প্যানেল দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এবার তারা কোনো প্যানেল দেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কোনো ভোটার নির্বাচনী মাঠে সরবও হননি। তাঁরা অনেকটা নীরবে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে বাম গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফোরামের দুজন প্রার্থীকে যুক্ত করে পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। বিএনপি–সমর্থিত প্যানেল যখন বামপন্থী আইনজীবীদের নিয়ে শক্তিশালী ফোরাম গড়ে তোলে, তখন বসে থাকেনি জামায়াত–সমর্থিত প্যানেলও। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি আবু মোর্তজাকে (ছোট) সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী করে গঠন করে লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদ।
এবারের নির্বাচনে ১৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ২১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে বিএনপি–সমর্থিত সাবু-গফুর ঐক্য প্যানেলের ১৩ প্রার্থী, জামায়াত–সমর্থিত লতিফ-ছোট ঐক্য পরিষদের ৭ প্রার্থী ও সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কাজী রেফাত রেজওয়ান।