হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য দলটিতে যোগ দেওয়া অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। তাঁর মনোনয়নের খবরে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করলেও ‘খুশি’ হতে পারেননি অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

হবিগঞ্জের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে আগে তিনটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ফাঁকা রাখা হয়েছিল হবিগঞ্জ-১ আসনটি। এখানে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী ও রেজা কিবরিয়া।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটায় রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৩৬টি আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় হবিগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রেজা কিবরিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়।

রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে তিনি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, গণ অধিকার পরিষদ ও আমজনতার দলের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন।

রেজা কিবরিয়া সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুশি। এলাকার মানুষও খুশি এই মনোনয়ন নিয়ে। এখন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় বা জনগণ আমাকে সুযোগ দেন, তাহলে আমি আমার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নেব। আমি আশাবাদী মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে পারব।’

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৩৬ বছর ধরে বিএনপির জন্য কাজ করেছি। এ আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সেই দাপট ভেঙে আমি বিএনপির প্রথম এমপি হই। দল কেন রেজা কিবরিয়াকে মনোনয়ন দিল, বুঝে উঠতে পারছি না। এতে এলাকার মানুষ জামায়াতকে ভোট দেবে।’

অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাবির আহমদ চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘তৃণমূলে নেতা-কর্মীরা যাঁকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন, তাঁকে দল মনোনয়ন দেয়নি।’

তবে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো.

মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, রেজা কিবরিয়া মনোনয়ন পাওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা খুশি। মনোনয়নের খবরে খুশিতে নবীগঞ্জ ও বাহুবলে মিষ্টি বিতরণ করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রেজা কিবরিয়া শুধু সংসদ সদস্য নন; বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি মন্ত্রী হবেন বলে তাঁদের বিশ্বাস।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ক বর য় কর ম র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করল জামায়াত

খুলনা-১ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। আসনটিতে নতুন প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর নাম ঘোষণা করেছে দলটি।

বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে এর আগে বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফকে প্রার্থী ঘোষণা করছিল জামায়াত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জামায়াতের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শিগগির প্রচারণা শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আগামী ৫ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে তিনটায় বটিয়াঘাটা থেকে প্রচারণা শুরু করব। আমিরে জামায়াত আগের ঘোষিত প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ ভাই ও আমি—এই দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন।’

ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক বছর ধরে ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীকে দেখা গেছে। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিটি সমাবেশেই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের সরব উপস্থিতি ছিল।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও খুলনা জেলার সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষ্ণ নন্দী এখন খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়ে পরবর্তী সময়ে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে। আজ বুধবার আমরা স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে আলোচনা করে সেটা বাস্তবায়ন করেছি। এই বিষয়ে আমরা দুই দিন আগে চিঠি পেয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকার সুযোগ নেই। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, দল তাঁকে মেনে নেয়। এটা আমাদের দলের শৃঙ্খলা। আগে যাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি এটা মেনে নিয়েছেন। তিনিই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।’

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। আসনটিতে বেশির ভাগ সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এই আসনে প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল।

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করলেও খুলনা-১ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে জেলার সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিয়াউর রহমান (পাপুল) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল গণসংযোগ করছেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষে দাকোপ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর কুমার রায়ও আলোচনায় আছেন।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত খুলনা-১ আসনে ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া বিএনপি কখনো জেতেনি। একসময় বাম দলের প্রভাব থাকলেও জামায়াতের অবস্থান সব সময় দুর্বল ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তফসিলের আগেই নির্বাচনী হাওয়া, বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা আগেভাগেই মাঠে
  • খুলনা-১ আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করল জামায়াত