Prothomalo:
2025-11-21@07:22:25 GMT

আজকের ভূমিকম্প যে বার্তা দিল

Published: 21st, November 2025 GMT

এক ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিল গোটা বাংলাদেশকে; আজ শুক্রবার সকালের এই ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিকে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বলা হচ্ছে। এমন ভূমিকম্পের শঙ্কা বিশেষজ্ঞরা আগেই প্রকাশ করে আসছিলেন। এই ভূমিকম্প বাংলাদেশের জন্য সজাগ হওয়ার বার্তা বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী।

আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) মাত্রা দেখাচ্ছে ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।

আরও পড়ুনভূমিকম্পে যে ঝাঁকুনি হলো, তা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ: ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার১ ঘণ্টা আগে

মেহেদি আহমেদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে এমন ভূমিকম্প হওয়ারই কথা। রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সবকিছু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা আছে।

বাংলাদেশ বা এই ভূখণ্ডে বড় ভূমিকম্পের মধ্যে আছে ১৭৬২ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এটি ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এর ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, ফেনী, এমনকি কুমিল্লা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত ভূমিকম্প ছিল ৮ দশমিক ৭ মাত্রার।

৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ফেরত আসার সময় হয়ে গেছে। তাই আজকের এই ভূমিকম্পের পর সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে।অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী, ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞ

১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রায় এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।

মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, বড় ভূমিকম্পগুলো ১৫০ বছর পরপর ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। এদিক থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ফেরত আসার সময় হয়ে গেছে। তাই আজকের এই ভূমিকম্পের পর সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ ও আশপাশে বাড়ছে ভূমিকম্প, শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের ০১ মার্চ ২০২৫

ঢাকা শহরে মোট ২১ লাখ ভবন আছে। এর মধ্যে ছয় লাখ ভবন ছয়তলার ওপরে। বাকিগুলো ছয়তলার নিচে। বড় ভূমিকম্প হলে এই ছয় লাখ ভবন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ভূমিকম্পে পুরান ঢাকার কিছু ভবনের রেলিং, পলেস্তারা খসে পড়ে। আজ সকালে কসাইটুলীতে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ত র র ভ ম কম প আহম দ আনস র এই ভ ম কম প ভ ম কম প র প রক শ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্যসেবা গড়তে বাংলাদেশ যা করতে পারে

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত এখন শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবনযাত্রা ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তাপপ্রবাহ, জল-মাটি-বাতাসের দূষণ ও নতুন সংক্রমণজনিত রোগের বৃদ্ধি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০ সম্মিলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মিলনের আগে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার অন্য স্তম্ভগুলোর পাশাপাশি পঞ্চম স্তম্ভ—‘মানব ও সামাজিক উন্নয়ন’ বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

আর পাঁচটি স্তম্ভের মোট ৩০টি লক্ষ্যের ভেতর লক্ষ্য নম্বর ১৬ হলো ‘সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রচলন’।

নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশের মতো সীমিত সম্পদে পরিচালিত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য লক্ষ্যটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই সংবেদনশীল। দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝড়-বন্যার মতো দুর্যোগ এবং কোভিডের মতো মহামারিকালীন জরুরি অবস্থা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করার মতো সহনশীল নয়।

তাহলে বাংলাদেশের মতো কম সম্পদওয়ালা দেশগুলোকে জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে করণীয় কী? হ্যাঁ, যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্থায়ন। কিন্তু এ রকম দেশগুলোর জন্য স্বাস্থ্য খাতে সাধারণ বাজেটের পাশাপাশি জলবায়ু ও স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত অতিরিক্ত অর্থায়ন কতটুকু বাস্তবসম্মত?

আরও নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য বা ঋণ পাওয়াটা অনিশ্চিত।

এ ক্ষেত্রে প্রথমত, সাধারণ বাজেটকেই ‘জলবায়ু–সহনশীল’ বাজেটে রূপান্তর করতে হবে। এই লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ বাজেট থেকে ‘জলবায়ু স্বাস্থ্য তহবিল’ তৈরি করে, ছোট পরিসরে ধাপে ধাপে এমন জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন ব্যবস্থাটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষের জন্য উপযোগী হয়।

দুর্নীতি ও সদিচ্ছার অভাবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ভেতর সমন্বয়ের অভাব আরেকটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাগুলোর সমন্বিত কুৎসিত রূপ আমরা দেখি যখন প্রকল্প হয়, টাকা শেষ হয়, অথচ যে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তা অর্জিত হয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। এগুলোর কোনোটিই রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্যোগ সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে দুর্যোগের প্রতিরোধ ও প্রস্তুতিতে বিনিয়োগ দুর্যোগ–পরবর্তী খরচের তুলনায় বহুগুণ লাভজনক। এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হয়।

দ্বিতীয়ত, কম সম্পদওয়ালা দেশগুলোকে তাদের নিজের স্বার্থে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ডিজিটাল করা দরকার। স্বাস্থ্য খাতের সাধারণ বাজেট থেকে যতটুকু সম্ভব সাশ্রয় করে, সেই অর্থ দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপযোগী সফটওয়্যার তৈরি করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ক্লিনিক বা হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য রেকর্ডকে ডিজিটাল করতে পারলে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরির প্রথম ধাপ পার করা যাবে।

তৃতীয়ত, সদিচ্ছা থাকলে স্বল্প খরচেই স্বাস্থ্য রেকর্ড ডিজিটাল করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকির আগাম বার্তা দেওয়ার কাঠামো যেমন—দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকির মানচিত্র তৈরি করে স্থানীয় এবং সমন্বিত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা যায়। এর ফলে দুর্যোগের আগে কোথায় কোন জরুরি স্বাস্থ্যসেবা লাগবে, তা দুর্যোগের আগেই প্রস্তুত রাখা ও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

কার্যকর পূর্ব সতর্কতাব্যবস্থা থাকলে এবং দ্রুত রেসপন্স করতে পারলে জরুরি পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

চতুর্থত, দেশের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভেতর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। স্থানীয় সরকার, ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারদের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য সংযুক্ত প্রশিক্ষণ চালু করে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পাশাপাশি লক্ষ্য থাকলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট ব্যবহার করে জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জনবান্ধব, উন্নত এবং সাশ্রয়ী করাও অসম্ভব কল্পনা নয়।

পঞ্চমত, আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদেরই গড়তে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য কপ৩০ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেলেম হেলথ অ্যাকশন প্ল্যানের (বিএইচএপি) অনুসন্ধানযোগ্য সূচকগুলো বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত করে তা রূপায়ণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কতটুকু সহনশীলতা অর্জন করল তার রেটিংয়ের ব্যবস্থা করলে জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।

কাজটি সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদার, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিলে করতে হবে।

আমরা মানি বা না মানি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে এক্ষুনি অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও বেশি সংবেদনশীল। ব্রাজিলের কপ ৩০-এর ‘জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা’ লক্ষ্য বাংলাদেশসহ নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য এক সময়োপযোগী আহ্বান। অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং স্থানীয় সক্ষমতা উন্নয়ন—এই তিনটি স্তম্ভ একত্রে রূপায়িত করতে পারলে বাংলাদেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা শুধু দুর্যোগ মোকাবিলায় নয়, আগাম প্রস্তুতি ও দ্রুত পুনরুদ্ধারেও উদাহরণ হতে পারে। অর্থের অনিশ্চিত জোগান জলবায়ু–সহনশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ার অভিযাত্রায় একমাত্র বাধা নয়।

দুর্নীতি ও সদিচ্ছার অভাবের পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের ভেতর সমন্বয়ের অভাব আরেকটি বড় সমস্যা। এই সমস্যাগুলোর সমন্বিত কুৎসিত রূপ আমরা দেখি যখন প্রকল্প হয়, টাকা শেষ হয়, অথচ যে লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তা অর্জিত হয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তাও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ বাধা। এগুলোর কোনোটিই রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

তবু লক্ষ্য নির্দিষ্ট থাকলে আর বৈশ্বিক সহযোগিতা ও স্থানীয় নেতৃত্বের সমন্বয় করা গেলে একটি জলবায়ু–সহনশীল, টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়া বাংলাদেশের মানুষের পক্ষেও সম্ভব।

এম এম গোলাম রব্বানী, মাসুমা পারভিন ও রুমানা হক— লেখকেরা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

সম্পর্কিত নিবন্ধ