মানিকগঞ্জে বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ–বিক্ষোভ চলার মধ্যেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি বলছে, এ ঘটনা নিয়ে একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের খেলায় মেতে উঠেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাউল আবুল সরকারের ‘ধৃষ্টতামূলক’ মন্তব্যকে আমলে না নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জনতা কী করেছে, তা প্রধান করে তোলা হয়েছে। অথচ বাউল আবুল হোসেন যে ‘অশ্লীল ও অশালীন’ মন্তব্য করেছেন, তা সীমাহীন অপরাধ।

মানিকগঞ্জের ঘিওরের এক ইমামের করা ধর্ম অবমাননার মামলায় পালাকার আবুল সরকারকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর গত রোববার তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সময় ‘মানিকগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের আলেম–ওলামা ও তৌহিদি জনতা’ ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাঁদের ওপর হামলা চালান। ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভ–বিক্ষোভ জানাচ্ছে।

ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, ‘ধর্ম সম্পর্কে দেশের মানুষের অনুভূতি খুবই সংবেদনশীল। এই সুন্দর ও উত্তম নাগরিক বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করেই কুচক্রী মহল বারবার অস্থিরতা তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাউল আবুল সরকার মহান আল্লাহ সম্পর্কে অশালীন-অশ্লীল মন্তব্য করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে। আর আরেক দল সেই সুযোগে স্বার্থ হাসিলের নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে।’

আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে বাউল সম্মেলনের ঘোষণা দিয়ে ফরহাদ মজহার বললেন, পেটালে পিটুনি খাব২৪ নভেম্বর ২০২৫

মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা থাকলেও কাউকে অপমান করা ও কারও বিশ্বাসকে আঘাত করা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাউল আবুল সরকার সেই অপরাধ করে পরিস্থিতি উসকে দিয়েছেন। তাই এখন যাঁরা তাঁর পক্ষ নিচ্ছেন, তাঁদের কোনো রাজনৈতিক হীন অভিলাষ আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।’

বাউলদের ওপর হামলার মামলায় কাউকে হয়রানি না করার আহ্বান জানিয়ে মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এই ঘটনায় সাধারণ জনতার ওপরে দোষারোপের রাজনীতি চলছে, পুলিশি হয়রানির যে পাঁয়তারা চলছে, তা রোধ করতে হবে। যেকোনো ঘটনাকে বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিতে দেখতে হবে।

প্রতিটি ঘটনার ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া এবং তার দ্বারা কারা লাভবান হচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করে পক্ষ বাছাই করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

আরও পড়ুনবাউল আবুল সরকারকে মুক্তি দিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি৩৪ মিনিট আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য সেবায় ওষুধ শিল্পের লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার তাগিদ

দেশে স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ শিল্পের টেকসই উন্নয়নে যুগোপযোগী নীতিমালা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তা এবং বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও ওষুধ শিল্পের জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং নবায়ন প্রক্রিয়া সহজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে আসে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান।

আরো পড়ুন:

অতিরিক্ত হাঁচি হলে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দিতে পারে 

রাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক, ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ। ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই (অ্যাক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রিডিয়েন্টস) শিল্পে পিছিয়ে থাকাকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন তিনি। পাশাপাশি, মেডিকেল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ শিল্পের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন সংক্রান্ত জটিলতাকে শিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মেডিকেল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুগোপযোগী একটি নীতিমালা বাস্তবায়ন না করা গেলে দেশে মেডিকেল যন্ত্রপাতি শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই খাতের স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা এবং ইকো-সিস্টেম উন্নয়নে নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এপিআই শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য একজন উদ্যোক্তাকে ৪৭টি সংস্থা থেকে লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়ে। যা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে। এই শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর আহ্বান জানান তিনি।

লাইসেন্সিং প্রক্রিয় সহজ করা না গেলে বেসরকারি খাত স্বাস্থ্য সেবা, মেডিকেল ইকুয়িপমেন্টস এবং ঔষধ শিল্পে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা যাবে না বলে মনে করেন ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মো. আকরামুল ইসলাম।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আসরাফ হোসেন জানান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর তার দায়িত্ব দ্রুত এবং যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলে তার সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত কাজে কিছু সময় লেগে যায়, ইচ্ছকৃত বিলম্ব করা হয় না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন,ওষুধ শিল্পের লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চেষ্টা রয়েছে অন্তত ৩ বছর মেয়াদের জন্য লাইসেন্স প্রদানের।

পাশাপাশি, ওষুধ শিল্প এবং স্বাস্থ্য সেবা খাতের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে সরকারের কঠোর নজরদারির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের স্থানীয় শিল্প স্থাপন এবং আমদানি নির্ভরতা হ্রাসসহ গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেন স্বাস্থ্য সচিব।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে মো. সাইদুর রহমান বলেন, সরকারের একার পক্ষে সব নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং একাডেমিয়ার মধ্যে সমন্বয় জরুরি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)–এর মহাপরিচালক গাজী এ কে এম ফজলুল হক জানান, মেডিকেল যন্ত্রপাতি শিল্পের জন্য স্বতন্ত্র একটি খসড়া নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিডা। যা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মূল্যায়ন, বিশ্লেষণ এবং পরামর্শের প্রেক্ষিতে বাস্তবায়ন হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. আবদুর রহিম খান। তিনি বলেন, “আয় সীমা অনুযায়ী সব নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”

মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় যেন রোগীদের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র প্রশাসক।

এর আগে এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও অবদান ছিল অনেক। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য সেবা খাতে সরকারের বরাদ্দ নগণ্য। স্বাস্থ্য সেবার মান বাড়াতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতালের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।”

ঢাকা/নাজমুল/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ