ন্যূনতম মজুরি চান ট্যানারিশ্রমিকেরা
Published: 25th, November 2025 GMT
এক বছর আগে ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হলেও বেশির ভাগ ট্যানারিশিল্পে তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ ছাড়া অনেক ট্যানারি কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই শ্রমিক ছাঁটাই করছে। ছাঁটাইয়ের পর প্রাপ্য পাওনাও পরিশোধ করা হচ্ছে না। আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে এ খাতের শ্রমিকদের সংগঠন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।
রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে গতকাল এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ‘ট্যানারিশিল্পে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও সংকট’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ এবং সলিডারিটি সেন্টার বাংলাদেশের কর্মসূচি পরিচালক এ কে এম নাসিম। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের পোশাকশিল্পে রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনস ট্র্যাজেডির পর বৈশ্বিক চাপে মালিক ও সরকার সেই খাতে পরিবর্তন এনেছে। তাতে দেশের পোশাকশিল্প এখন বিশ্ববাজারে একটি অবস্থান তৈরি করেছে। অন্যদিকে সরকারের ভুল নীতি, পরিকল্পনার অভাব ও মালিকপক্ষের অনীহার কারণে ট্যানারিশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই শিল্পকে আধুনিক ও পরিবেশসম্মত করার লক্ষ্যে হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও বাস্তবে ট্যানারিশিল্প এখনো পরিবেশবান্ধব শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠেনি। শ্রমিকদের যে ন্যূনতম সুরক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা ছিল, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির গেজেট প্রকাশের পর মালিকেরা এ নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ট্যানারিমালিক; কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন মিলে আবারও মজুরির গ্রেড ও বেতনের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করে, যা দেশের ইতিহাসে বিরল। তবে এরপর মজুরি নিয়ে যে সিদ্ধান্ত এসেছে, সেটিও কোনো ট্যানারিমালিক বাস্তবায়ন করছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ঘোষণা এমন কোনো বিষয় নয়, যা সরকার হঠাৎ নির্দেশ দেয়। মালিক, শ্রমিক ও সরকারের দীর্ঘ আলোচনার পর মজুরিকাঠামো ঠিক করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাস্তবে তিনটি পক্ষ আলাদা হলেও শেষ পর্যন্ত মালিক আর সরকার এক পক্ষ হয়ে যায়। আর শ্রমিক আলাদা আরেক পক্ষ হয়ে পড়ে। এই শিল্পে যদি কোনো ধরনের ত্রুটি থাকে, তাহলে তা ঠিক করতে হবে। চামড়াশিল্প নগরী বেপজাকে দিয়ে কোনো লাভ হবে না। বেপজা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল, তারা নিজেরাই এখনো তা পূরণ করতে পারেনি।
স্বাগত বক্তব্যে আবদুল মালেক বলেন, গত বছর ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ঠিক করে গেজেট প্রকাশিত হয়। তার আগে প্রকাশিত খসড়ায় ট্যানারিমালিকেরাও স্বাক্ষর করেছেন। এরপর গেজেট প্রকাশিত হলেও এখনো এই মজুরি কার্যকর করা হয়নি। বিশ্বের অন্যতম অস্বাস্থ্যকর শিল্প হিসেবে ট্যানারিগুলোতে দুই শতাধিক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা শ্রমিকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এমন পরিবেশে কাজ করা শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। পাশাপাশি ছাঁটাই, নির্যাতন, হয়রানিসহ নানা পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রক শ পর ব শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গত বছর প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী তাঁর ঘনিষ্ঠজনের হাতে খুন হয়েছেন
গত বছর বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতি ১০ মিনিটে একজন নারী তাঁর ঘনিষ্ঠজনের হাতে খুন হয়েছেন। নিহত ৬০ শতাংশ নারী তাঁর সঙ্গী বা আত্মীয় যেমন বাবা, চাচা, মা ও ভাইদের হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। এমন উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে গতকাল সোমবার জাতিসংঘের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে। সংস্থাটি নারী হত্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রগতি না হওয়ার নিন্দা জানিয়েছে।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয় এবং জাতিসংঘ নারী সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর প্রায় ৫০ হাজার নারী ও কন্যাশিশুকে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা হত্যা করেছেন। ১১৭টি দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১৩৭ জন নারী নিহত হয়েছেন।
এই সংখ্যা ২০২৩ সালে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে সামান্য কম। তবে এটি আসলে হত্যাকাণ্ড কমার বিষয়টি নির্দেশ করে না। কেননা, বিভিন্ন দেশে তথ্য সরবরাহের তারতম্যের কারণে এ পার্থক্য দেখা গেছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘নারী নির্যাতনজনিত হত্যাকাণ্ড প্রতিবছর হাজার হাজার নারী ও মেয়ের জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া হত্যার ঝুঁকির ক্ষেত্রে ঘরই নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের কোনো অঞ্চলই নারী নির্যাতনজনিত হত্যাকাণ্ড থেকে মুক্ত নয়। তবে গত বছর আফ্রিকায় সর্বোচ্চসংখ্যক, প্রায় ২২ হাজার নারীকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
জাতিসংঘের নারীনীতি বিভাগের পরিচালক সারাহ হেন্ড্রিক্স বলেন, নারী হত্যা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি প্রায়ই ধারাবাহিক সহিংসতার একটি অংশ, যা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ, হুমকি এবং অনলাইনসহ হয়রানি থেকে শুরু হতে পারে।