অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া দুজনই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তাঁদের নির্বাচনী আসনও অনেকটা নিশ্চিত। তবে তাঁরা কোনো দলে যোগ দেবেন, নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। যদিও পদত্যাগ করার আগে থেকেই বিভিন্ন দলের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে।

মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির ছাত্রনেতা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেয়েছিলেন। গতকাল বুধবার তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আজ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়া মাত্র তাঁদের পদত্যাগ কার্যকর হবে। এখন মাহফুজ ও আসিফ কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা হচ্ছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠতা ছিল। দলটিতে তাঁদের প্রভাবও ছিল। তবে গত কয়েক মাসে আসিফের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের দূরত্ব তৈরি হয়। আর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এনসিপিতে মাহফুজের প্রভাবও কমে এসেছে। এসব কারণে মাহফুজ ও আসিফ এনসিপিতে না আসার সম্ভাবনা বেশি বলে দলটির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

মাহফুজ ও আসিফের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তাঁরা দুজনই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে আগ্রহী। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁরা কথাও বলেছেন। তবে কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য তাঁদের দিক থেকে একটি বিষয় অনেকটা চূড়ান্ত, মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ উপজেলা) এবং আসিফ মাহমুদ ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এর বাইরে পদত্যাগের আগের রাতে রাজধানীর হেয়ার রোডে নিজের সরকারি বাসভবনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো.

রাশেদ খানসহ দলটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আসিফ মাহমুদ। দলটির সূত্র জানায়, আসিফ গণ অধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। গণ অধিকার পরিষদও আসিফকে দলে নিতে আগ্রহী। তবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরও আসিফ দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করেছেন গণ অধিকার পরিষদের অন্যতম শীর্ষ নেতা রাশেদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসিফ মাহমুদ একসময় আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমাদের সখ্য আছে, একধরনের রাজনৈতিক বন্ধন আছে। তিনি গণ অধিকার পরিষদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরাও এ ব্যাপারে ইতিবাচক। আসিফ মাহমুদের বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি নিয়ে নানাজনের নানা মন্তব্য থাকলেও সেগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না।’

তবে আসিফ মাহমুদ আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আপাতত স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকা-১০ আসন থেকে নির্বাচন করব।’

অন্যদিকে মাহফুজ আলমও বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহফুজ আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দু-তিন দিন সময় নিচ্ছেন। এরপর নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন।

অবশ্য মাহফুজ আলমের ভাই ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে তাঁর এনসিপিতে আসা কিংবা স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক স বতন ত র পদত য গ দলট র এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবুল হত্যার বিচার দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান রানার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি রায় সাহেব মোড় প্রদক্ষিণ করে বিশ্বজিৎ চত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রদলের খুনীরা আমার ভাইকে খুন করেছে। আমরা আশা করেছিলাম ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে আর খুনের রাজনীতি চলবে না। কিন্তু ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা আবার সেই খুন–চাঁদাবাজির রাজনীতি শুরু করেছে।”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন সাদাত বলেন, “মাদকসেবনকে কেন্দ্র করে একজনকে খুন হতে হলো। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।”

২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, “ছাত্রদল আবার হত্যার রাজনীতি শুরু করেছে। তাদের মধ্যকার মাদক–সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাণ দিতে হলো। আজ তেজগাঁও কলেজে হয়েছে, কাল অন্য ক্যাম্পাসে হবে—অথবা আমাদের ক্যাম্পাসেও হতে পারে। আমরা চাই না ৫ আগস্ট-পরবর্তী বাংলাদেশে আবার হত্যা–রাজনীতি ফিরে আসুক।”

উল্লেখ্য, এর আগে তেজগাঁও কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত হন উচ্চমাধ্যমিক ২০২৪-২৫ সেশনের সাকিবুল হাসান রানা নামে এক শিক্ষার্থী। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ঢাকা/লিমন/জান্নাত

সম্পর্কিত নিবন্ধ