ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আল সাদ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। 

কলেজটিতে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন জোরপূর্বক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাতে বাঁধা দেওয়ায় ওই যুবক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে। কলেজের সিসি ক্যামেরায় দৃশ্যটি ধরা পড়ে। 

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) উপজেলার কামারগ্রামে অবস্থিত আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ কলেজে এসে অধ্যক্ষের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। 

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক প্রবেশ করেন। মোটরসাইকেলের পেছনে বসা যুবক আল সাদ হাতে করে বড় একটি দেশীয় অস্ত্র রামদা উঁচিয়ে নিয়ে আসেন। এসময় অনেকে দৌড়ে সরে যায়। এরপর কলেজের মূল ভবনে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর নেমে বেরিয়ে যান।

কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আল সাদ পৌরসভার কুসুমদি গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং পূর্বে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তার মামা মো.

আমিরুল ইসলাম পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তার সাথে থাকা অপর যুবকের নাম সাদি (২৫)। তিনি পৌরসভার শ্রীরামপুর এলাকার গফুর খাঁর ছেলে। 

আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ এম এম মজিবুর রহমান মুজিব জানান, ওই যুবকের স্ত্রী ডিগ্রী প্রথম বর্ষের পরীক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ওই যুবক পরীক্ষা চলাকালীন গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন কলেজের পিওন নাজমুল বাঁধা দেন। তবে বাঁধা না মেনে কেন্দ্রের ভেতরে আসার চেষ্টা করেন তিনি। 

তিনি বলেন, “কেন্দ্রে প্রবেশের সময় আমি তাকে বের হওয়ার অনুরোধ করি। তখন বলে আমার স্ত্রী কোথায় বসেছে দেখব এবং উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। আমাকে হাত উঁচু করে বলতে থাকে, আমাকে চিনেন? আমি দেখে নেব, থানা পুলিশ দেখতেছি। তখন পরিসংখ্যানের শিক্ষক সমীর কুমার বিশ্বাস তার হাত ধরে বাঁধা দিলে তিনি আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।” 

তিনি বলেন, “এ ঘটনার পর তিনি কলেজ থেকে বের হয়ে যান। এর প্রায় ২০ মিনিট পর একটি মোটরসাইকেলে করে রামদা নিয়ে কলেজের ভেতরে ঢুকে ত্রাস সৃষ্টি করেন। তখন আমিসহ সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে ইউএনও, ওসিকে ফোন করে বিষয়টি জানালে পুলিশ আসে। এর আগেই ওই যুবক চলে যান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতারা এসে দুঃখ প্রকাশ করে এবং ক্ষমা চেয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ওই যুবক মুচলেকা দিয়েছেন।”

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে আল সাদ ও সাদি নামের অভিযুক্ত ওই দুই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান আব্বাস বলেন, “মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি। তবে বিস্তারিত বিষয়টি জানা নেই।”

এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসনাত বলেন, “খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কলেজে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে পায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/তামিম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আলফ ড ঙ গ প রব শ কল জ র য বক র আল স দ ই য বক ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।

শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।

আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।

রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’

অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।

ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।

চার দফা সুপারিশ

অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ