চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর বাজারে এ সংঘর্ষ হয়।

নিহত ছাত্রদল কর্মীর নাম গাজী তাহমিদ খান (২০)। তিনি উপজেলার উত্তর হিঙ্গুলী এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে।

পুলিশ ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, নিহত তাহমিদ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের জোরারগঞ্জ থানার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। পরে তিনি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মিরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিবের দায়িত্ব নেন। সম্প্রতি তিনি বারইয়ারহাট পৌরসভা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বিএনপির বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে তিনি যেতেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বারইয়ারহাট দক্ষিণ পৌর বাজারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ছাত্রদলের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল হয়। এ মাহফিলে তাহমিদ অংশ নেন। মাহফিল শেষে কথা-কাটাকাটি থেকে পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম মিয়াজির অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় এক পক্ষের ছুরিকাঘাতে তাহমিদ খান গুরুতর আহত হন।

পরে তাহমিদকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। একই সংঘর্ষের ঘটনায় আরও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি দিদারুল আলম নিয়াজী প্রথম আলোকে বলেন, তাহমিদ আমাদের সব মিটিং মিছিলে থাকতেন। তবে এটি দলীয় কোনো ব্যাপার নয়, ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরে তিনি খুন হয়েছেন। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা।

দিদারুল আলম নিয়াজী এলাকায় মিরসরাই সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিনের (চেয়ারম্যান) অনুসারী হিসেবে পরিচিত। জানতে চাইলে নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাহমিদ হত্যাকাণ্ড বিএনপির অন্তঃকোন্দল বা দলীয় কোনো বিষয় নয়। আমাদের এক কর্মীর পা তুলে বসা নিয়ে বারইয়ারহাট পৌর বাজারের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী ও বিএনপির নেতা নজরুল ইসলামের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ বাগ্‌বিতণ্ডা থেকেই দুটি গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ গড়ায়। সে সংঘর্ষে তাহমিদ নিহত হয়। কিছুদিন আগে ছেলেটি ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত হতে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাকে দিদারুল আলম মিয়াজির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হক বলেন, ‘গতকাল বিএনপির কিছু নেতা–কর্মীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে দু-একজন আহত হয়েছেন বলে শুনেছিলাম। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাহমিদ নামের একজনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে আমরা দেখছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ দ র ল আলম ছ ত রদল র রহ ট প র ম রসর ই ব এনপ র স ঘর ষ গতক ল প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

হাজার হাজার উড়ান বাতিল ভারতের ইন্ডিগোর, বাজার মূলধন কমেছে ৪,৫০০ কোটি ডলার

হাজার হাজার উড়ান বাতিল হওয়ায় ভারতের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগোর অবস্থা এখন শোচনীয়। সুনামের ক্ষতি তো হচ্ছেই, সেই সঙ্গে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে তারা।

এই পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহে ইন্ডিগোর মূল কোম্পানি ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের শেয়ারের দাম ১৭ শতাংশ কমেছে। গত ২৭ নভেম্বর কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫ হাজার ৯১৭ রুপি। গতকাল মঙ্গলবার সেই শেয়ারের দাম কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯১৩ রুপি। সেই সঙ্গে ইন্ডিগো যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, সেই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও কমেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের সূত্রে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের বাজার মূলধন ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার কমেছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, উড়ান বাতিল, গ্রাহকদের টাকা ফেরত, জরিমানা, রুপির দুর্বল অবস্থান ও বিমানের কর্মী-সংক্রান্ত ব্যয়বৃদ্ধির চাপ মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস মনে করছে, রাজস্ব ক্ষতি ও ভাবমূর্তি হ্রাসের কারণে এসব বিষয় ‘ঋণমানের পক্ষে নেতিবাচক’ হয়ে গেছে।

বাস্তবতা হলো, গত কয়েক দিনে ইন্ডিগোর দুই হাজারের বেশি উড়ান বাতিল হওয়ার জেরে লাখ লাখ যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এই নজিরবিহীন পরিস্থিতির জন্য সরকারের কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছে দেশটির বৃহত্তম বিমান সংস্থা। নিজেদের জবাবে ইন্ডিগো জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধার জন্য তারা ‘গভীরভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী’।

কিন্তু ক্ষমা চেয়ে তো আর আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারছে না ইন্ডিগো। বৈশ্বিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস রেটিং সতর্ক করেছে, ইন্ডিগোর ঋণমান নেতিবাচক করে দেওয়া হতে পারে। মুডিস আরও বলেছে, এর ফলে আয়ের ঘাটতি থেকে শুরু করে সম্ভাব্য জরিমানা—উভয় দিক দিয়েই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ইন্ডিগোকে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে ইন্ডিগোর সাম্প্রতিক এই অস্থিরতাবিষয়ক আরও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুডিস বলেছে, উড়ান-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা থেকে প্রমাণিত হয়, ইন্ডিগোর পরিকল্পনা, তদারকি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। যদিও নতুন নিয়ম (এফডিটিএল) এসেছে, সেগুলো সম্পর্কে তারা আরও এক বছর আগেই থেকেই অবগত ছিল।

মুডিস বলেছে, ইন্ডিগো নতুন বিধিনিষেধের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। ফলে পুরো ব্যবস্থায় পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হয়। পরিণতিতে এই হাজার হাজার উড়ান বাতিল।

ইন্ডিগো কী বলছে

প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেছে ইন্ডিগো। সেগুলো হলো-

১. ছোটখাটো প্রযুক্তিগত ত্রুটি;

২. শীতকালীন সময়সূচি পরিবর্তন;

৩. খারাপ আবহাওয়া ও দৃশ্যমানতা কমে যাওয়া;

৪. আকাশপথে ও বিমানবন্দরগুলোয় অত্যধিক যানজট;

৫. পাইলটদের দায়িত্বসংক্রান্ত নতুন নিয়ম বা এফডিটিএল ও পালা নির্ধারণে সমস্যা।

সরকারের কঠোর অবস্থান

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারও কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ এই বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু। তাঁর কথায়, ‘ইন্ডিগো যেভাবে কাজ করে, তাতে এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।’

সংবাদমাধ্যমগুলোকে নায়ডু এ-ও জানান, তদন্তে যদি ইন্ডিগোর সিইওর কোনো গাফিলতি বেরিয়ে আসে, তাহলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে। পাশাপাশি ইন্ডিগোকে জরিমানা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। নায়ডু আরও বলেন, ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) কাছেও জানতে চাই—হচ্ছেটা কী। তদন্ত শেষ হলে আমরা ডিজিসিএর দিকেও নজর দেব।’ দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে গতকাল ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে ডিজিসিএ। বিমানমন্ত্রী নায়ডু গত সোমবারই আভাস দিয়েছিলেন, ইন্ডিগোর শীতকালীন বিমানসূচি কমানো হবে। তাদের ‘স্লট’ বা বিমান চালানোর সূচি অন্য বিমান সংস্থাকে দেওয়া হবে।

এর পরেই গতকাল ডিজিসিএ ইন্ডিগোর পরিষেবা ৫ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। পরে আরও ৫ শতাংশ কমানোর কথাও জানায় তারা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রতিদিন ইন্ডিগোর যা উড়ান-সংখ্যা রয়েছে, তার চেয়ে ১০ শতাংশ কম বিমান উড়বে। আজ বুধবার বিকেলের মধ্যে ইন্ডিগোকে নতুন সূচি প্রকাশের নির্দেশও দিয়েছে ডিজিসিএ। যাত্রীদের টিকিটের ভাড়ার টাকা দিতে হবে—এমন নির্দেশও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ