ভেনেজুয়েলায় কি বড় সামরিক অভিযান চালাবেন ট্রাম্প
Published: 11th, December 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ক্যারিবীয় অঞ্চলে হাজার হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন করেছেন এবং ভেনেজুয়েলার ভূখণ্ডে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গতকাল বুধবার একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে ট্রাম্প ঠিক কত দূর যাবেন এবং এর ফলাফলই বা কী হতে পারে?
উদ্দেশ্য কীট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভেনেজুয়েলার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপ সত্ত্বেও সে যাত্রায় টিকে গিয়েছিলেন মাদুরো।
ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় বসার কয়েক দিন আগে মাদুরো তৃতীয়বারের মতো ছয় বছরের জন্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। যদিও গত বছর তাঁর বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার হুমকি দেওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প রাজনৈতিক কারণে এখন কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন।ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল না। ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতিতে সাধারণত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে দেখেন না। বরং তিনি কূটনীতিকে দেওয়া-নেওয়ার নীতি হিসেবে দেখেন। অর্থাৎ কীসের বিনিময়ে কী পাওয়া যাবে, তার ওপর ভিত্তি করে তিনি সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। শুরুতে তিনি মাদুরোর ক্ষেত্রেও এই নীতিই অনুসরণ করেছিলেন।
তবে এ নীতিতে পরিবর্তন আনেন ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষের দেশ কিউবার কমিউনিস্ট সরকারকে উৎখাত করতে চান। যেহেতু ভেনেজুয়েলা থেকে কিউবা জ্বালানি তেলসহ নানা সুবিধা পায়, তাই রুবিও মনে করেন—মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা গেলে কিউবার সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে। মার্কো রুবিওর এই নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার কঠোর হুমকি দেওয়া শুরু হয়।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিকোলা মাদুরোর বিষয়ে বলেন, ‘তাঁর দিন শেষ।’ সে সময় মাদুরোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি আছেন বলে জানালেও লাতিন আমেরিকার দেশটিতে তিনি মার্কিন সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার অবৈধ মাদক উৎপাদন কেন্দ্রে অভিযান চালাতে পারে। দেশটিতে মাদকবিরোধী অভিযানের অজুহাত কাজে লাগিয়েই মূলত হামলায় হুমকি দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভেনেজুয়েলায় এ ধরনের উৎপাদনকেন্দ্র খুব কম।ছোটখাটো সামরিক অভিযানের আশঙ্কা কতটুকুবিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলার হুমকি দেওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প রাজনৈতিক কারণে এখন কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভেনেজুয়েলাভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ফিল গানসন বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো ভাবছে, আমরা যদি এখন নৌবহরকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিই, তবে আমাদের অত্যন্ত আহাম্মক বলে মনে হবে এবং আমরা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাব।’
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ছোটখাটো সামরিক হামলা চালিয়ে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারেন। এমন হামলার জন্য দুটি লক্ষ্যবস্তু বেছে নেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার অবৈধ মাদক উৎপাদন কেন্দ্রে অভিযান চালাতে পারে। দেশটিতে মাদকবিরোধী অভিযানের অজুহাত কাজে লাগিয়েই মূলত হামলার হুমকি দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভেনেজুয়েলায় এ ধরনের উৎপাদনকেন্দ্র খুব কম।
এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের গেরিলা শিবিরগুলোতে হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব ক্যাম্পের যোদ্ধারা সম্ভবত হামলার আগেই সরে পড়বেন।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে জ্বালানি তেলের ট্যাংকার জব্দ: ট্রাম্প১০ ঘণ্টা আগেপূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের আশঙ্কা কতটুকুখুব কম মানুষই মনে করেন, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালানোর ঝুঁকি নেবেন।
ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি অনেক বছর ধরেই বিপর্যয়ের মুখে আছে। এমন অবস্থায় দেশটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বা দখল নেওয়া একটি কঠিন কাজ হবে। তা ছাড়া, এ ধরনের বড় সামরিক অভিযানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সমর্থনও খুব একটা পাওয়া যাবে না।
তবে পূর্ণমাত্রার হামলা না করলেও যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এর অংশ হিসেবে সরাসরি ভেনেজুয়েলার সরকারি বা সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হতে পারে।
খুব কম মানুষই মনে করেন, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালানোর ঝুঁকি নেবেন।ভেনেজুয়েলার সামরিক বাহিনী হয়তো মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে পারে। তবে তারা মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবে না।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভেনেজুয়েলাভিত্তিক বিশেষজ্ঞ ফিল গানসন বলেন, মাদুরো নিজেই পরিস্থিতিকে বড় যুদ্ধে রূপ দিতে চান না। কারণ তিনি জানেন, তিনি যদি যুক্তরাষ্ট্রকে উসকে দেন, তবে তাঁর সামরিক বাহিনী এক বা দুই দিনের বেশি টিকবে না।
মার্কিন অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের লাতিন আমেরিকার ফেলো উইল ফ্রিম্যান বলেছেন, ‘ট্রাম্প সম্ভবত চান, মাদুরো বিশ্বাস করুক যে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে হত্যা করাসহ যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।’
ভেনেজুয়েলায় বারবার ট্রাম্পের হামলার হুমকি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। এই কৌশলের মূল উদ্দেশ্য হলো, মাদুরো সরকার এবং তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ভয় তৈরি করা।
আরও পড়ুনট্রাম্পের সঙ্গে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ফোনালাপের কথা নিশ্চিত করলেন মাদুরো০৪ ডিসেম্বর ২০২৫মাদুরো কি টিকতে পারবেনট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় মাদুরো এখন দুর্বল অবস্থানে আছেন। তবে এখনো তাঁর প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সমর্থন আছে।
ফিল গানসন বলেছেন, মাদুরোর প্রতি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ জনসমর্থন থাকতে পারে, যা একেবারে নগণ্য নয়। কিন্তু একটি দেশ শাসন করার জন্য এই সমর্থন যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আছে। তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্পূর্ণভাবে সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্যের ওপর নির্ভর করছে।
ট্রাম্প সম্ভবত চান, মাদুরো বিশ্বাস করুক যে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে হত্যা করাসহ যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।উইল ফ্রিম্যান, লাতিন আমেরিকা ফেলো, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসউইল ফ্রিম্যান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হামলা চালালেও মাদুরো ক্ষমতায় টিকে থাকবেন। মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিবর্তে ট্রাম্প অন্য কোনো বিষয়ে (যেমন মাদক পাচার বা অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ) একটি চুক্তি করে সেটিকে তাঁর অভিযানের সাফল্য হিসেবে প্রচার করতে পারেন।
ভেনেজুয়েলার দুই বৃহত্তম প্রতিবেশী কলম্বিয়া ও ব্রাজিলের বামপন্থী শাসকেরা ট্রাম্পের এই সামরিক হস্তক্ষেপমূলক নীতির সমালোচনা করছেন। তবে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং আর্জেন্টিনা ও পেরুর মতো ডানপন্থী দেশগুলো ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন।
ফিল গানসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হলে লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাবে ঠিকই, কিন্তু পর্দার আড়ালে অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলায় ট্রাম্পের হামলা আটকাতে কংগ্রেসে ভোট চান মার্কিন আইনপ্রণেতারা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষমত চ য ত কর ল ত ন আম র ক য ক তর ষ ট র পদক ষ প ন ত পর স থ ত ত খ ব কম ধরন র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ মেটেনি
কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতেই বিএনপির প্রার্থী নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে তিনটি আসনে নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা। তবে তফসিল ঘোষণা হলে সবাই ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে মনে করছেন দলীয় প্রার্থীরা। তাঁরা মাঠে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন।
জেলার সব কটি আসনে প্রায় ১০ মাস আগে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। অবশ্য মধ্যে একটি আসনে প্রার্থী বদল করেছে দলটি। জামায়াতের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় নিয়মিত উপজেলা থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ডে ছুটছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও একাধিক আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নেতারা। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচার চালাচ্ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীরা।
১৯৯১ সালে জেলার তিনটি আসনে জয় পায় বিএনপি। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সব কটি আসনেই তারা জয় পায়। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব আসনে জয় পান। জামায়াত ১৯৮৬ সালে জেলার একটি আসনে জয় পেয়েছিল।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)
সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি চরবেষ্টিত। মাদক, চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, বেকারত্ব, নদীভাঙন এলাকার মূল সমস্যা। ১৯৯১ সাল থেকে পরপর তিনটি সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা আহসানুল হক (পচা মোল্লা)। তিনি ২০০১ সালে প্রতিমন্ত্রীও হন। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০০৪ সালের উপনির্বাচনে তাঁর ছেলে রেজা আহমেদ (বাচ্চু মোল্লা) জয়ী হন। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ।
ঢাকা মহানগর যুবদল উত্তরের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। শেষ পর্যন্ত দল যাঁকে নির্ধারণ করবে, তাঁর পক্ষে কাজ করব।’
রেজা আহমেদ বলেন, ‘এ উপজেলার যত উন্নয়ন হয়েছে, আমার বাবার হাত ধরে। দলের কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে।’
এখানে জামায়াতের প্রার্থী মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীন। তিনি দৌলতপুর উপজেলা জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এবার জামায়াতকে ভোট দিতে চান। নারী ভোটাররাও এবার আগ্রহী। আমাদের ভোট অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে।’
এনসিপি থেকে এই আসনে লড়তে চান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনিসহ কয়েকজন এখানে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী আমিনুল ইসলাম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর)
এবার আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ চৌধুরী। তাঁর বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আবদুর রউফ চৌধুরী ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়নে এখানে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।
দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে বিএনপির বিরোধ মেটেনি। দলের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল–সমাবেশ করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
বাবার আসনে জয় পেতে নিয়মিত উঠান বৈঠকের পাশাপাশি নারী-পুরুষ আর তরুণদের ভোট টানতে আলাদা দল গঠন করেছেন রাগীব রউফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি নতুন কিছু করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ–বাণিজ্য, ভাগাভাগি বন্ধ হয়ে যাবে, এ কারণে হাতে গোনা কয়েকজন নেতা বিরোধিতা করছেন।’
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ আসনটিতে জয় পেয়েছিলেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশা নিয়ে জামায়াত আসনটিতে প্রার্থী করেছে মিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গফুরকে। তিনি জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি প্রথমে ইউপি সদস্য, পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও শেষে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আবদুল গফুর বলেন, ‘আমরা নারী ও তরুণদের ভোট এবার বেশি পাব বলে আশা করছি।’
এনসিপি থেকে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহমেদ ও সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের নেতারা এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া-৩ (সদর)
জামায়াত প্রথম দিকে দলের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ফরহাদ হুসাইনকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। পরে গত ২৫ মে তাঁকে বাদ দিয়ে আলোচিত ইসলামি বক্তা আমির হামজাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
জেলা জামায়াতের আমির আবুল হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে জামায়াতের ব্যাপক কর্মী–সমর্থক রয়েছেন। জেলার সব আসনে মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। সেটাই হবে।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সদর আসনটিতে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জাকির হোসেন সরকার। তিনি জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় (২০১৪) বড় ব্যবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয়ী জাকির হোসেন সংসদ নির্বাচনেও জয় পাবেন বলে মনে করছেন কর্মী–সমর্থকেরা। তবে মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিনের কর্মী–সমর্থকেরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে।
জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘সদরে আমি বিপুল ভোটে জামায়াতের প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। ভোটের ব্যবধান ছিল অনেক। এবারও আশা করছি, আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব।’
এদিকে এনসিপির জেলার প্রধান সমন্বয়ক ভেড়ামারার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস টনিসহ কয়েকজন এখানে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী, গণ অধিকার পরিষদ থেকে আবদুল খালেক ও খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ প্রার্থী হতে পারেন।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা)
সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীকে কুষ্টিয়া–৪ আসনে প্রার্থী করেছে বিএনপি। তবে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী তাঁর সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আন্দোলন করছেন। কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মেয়র নূরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিকের সমর্থকেরাও সোচ্চার মাঠে। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীকে দুই পক্ষকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বিএনপির প্রার্থী মেহেদী আহমেদ বলেন, ‘আমাকে দল মনোনয়ন দিয়েছে। আমি এর আগে এমপি হয়ে এলাকায় বিপুল উন্নয়ন করেছি। মাঠে আমার বিপুল জনপ্রিয়তা আছে।’
আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ আনোয়ার খানও মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী জোট হলে এখানে জামায়াত আসনটি ইসলামী আন্দোলনকে ছাড় দিতে পারে বলে ভোটের মাঠে আলোচনা আছে।
এ আসনে এনসিপি থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন সাংবাদিক কে এম আর শাহিন। এ ছাড়া গণ অধিকার পরিষদের যুবসংগঠন যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি শাকিল আহমেদ দলীয় প্রার্থী হবেন।